• শুক্রবার , ২২ নভেম্বর ২০২৪

টেস্ট ড্র- ফলোঅন- এবং কতিপয় লজ্জা….


প্রকাশিত: ৯:৫৪ পিএম, ১৪ জুন ১৫ , রোববার

নিউজটি পড়া হয়েছে ১৫৮ বার

fatullah test-www.jatirkhantha.com.bdঅনলাইন ডেস্ক  : ফতুল্লা টেস্টের পাঁচ দিনেই বৃষ্টি যেভাবে বাগড়া দিয়েছে, তাতে গতকালও মনে হচ্ছিল, পুরো দুটো ইনিংস হয় কি না সন্দেহ। পাঁচ দিনে ৪৫০ ওভারের জায়গায় খেলা হয়েছে মাত্র ১৮৪ ওভার। এর মধ্যে ১০৩ ওভার খেলেছে ভারতই। যতটুকু সময় টেস্ট ক্রিকেটে নিজেদের উন্নতির ধারাবাহিকতা দেখানোর সুযোগ পেল বাংলাদেশ, তাতে অধারাবাহিকতার চিহ্নই ফুটে উঠল বড় করে। দুপুর বেলাতেও যে সম্ভাবনার কথা বাংলাদেশের কেউ নিশ্চিতভাবেই ভাবেনি, বিকেল গড়াতে সেটাই হলো। সাত রানের জন্য ফলোঅনের লজ্জায় পড়ল বাংলাদেশ।

ভারতের ৪৬২ রানে ইনিংস ঘোষণার পর প্রথম ইনিংসে ২৫৬ রানে অলআউট মুশফিকের দল। আজ প্রথম ইনিংসে ৩৫ ওভার খেলেই সাত উইকেট হারাল বাংলাদেশ। আটজন ব্যাটসম্যান নিয়ে খেলার অতিরক্ষণাত্মক কৌশলকে আবারও প্রশ্নবিদ্ধ করে মাত্র ৮৪ রানে পড়ল শেষ ৬ উইকেট। ১৪ ইনিংস পর আবারও ৫ উইকেটের দেখা পেলেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন।
শুরুর আঘাতটাও তাঁর। দিনের তৃতীয় ওভারে ফিরলেন সাকিব আল হাসান। গত চার দিনের বৃষ্টিভেজা শীতলতার পর চড়চড়ে রোদে আর বেশিক্ষণ না থেকে ড্রেসিংরুমে, এসির শীতলতায় ফিরলেন ইমরুল কায়েস আর সৌম্য সরকারও। শুভাগত হোম উইকেটে কোনো ‘শুভ’র ‘আগত’ ঘোষণা করতে পারলেন না। অশ্বিনের বলে আউট হওয়া আপ্রাণ চেষ্টা করতে করতে শেষে ঠিক অশ্বিনকেই উইকেট দিয়ে গেছেন। ফার্স্ট ক্লাস ক্রিকেটে তাঁর প্রায় ৪০ গড় এ দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটেরই দুর্বলতার প্রতিচ্ছবি-এটা ক্যারিয়ারের ১৩তম ইনিংসে এসে আরও বেশি করে প্রমাণ করলেন। ২১৩ রান, একটি মাত্র ফিফটি। তিনটা ইনিংসে অপরাজিত না থাকলে গড় হতো ১৬। এই ১৬ আর ৪০ গড় দুটোই হলো আন্তর্জাতিক ক্রিকেট আর বাংলাদেশের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটের আসল পার্থক্য।
চা বিরতির আগে ৩১ ওভার খেলা হয়েছে। তাতেই পাঁচ ব্যাটসম্যান হারিয়ে ফেলেছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে চারজন যেভাবে আউট হয়েছেন—তাতে দুটো প্রশ্ন উঠতে পারে। বাংলাদেশ কি আসন্ন ওয়ানডে সিরিজের ব্যাটিং অনুশীলন করছে? নাকি এটা সতীর্থ মুমিনুল হক যেন বিশ্ব রেকর্ডটা করতে পারেন, সেই সুযোগ দেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা? শেষে সত্যি সত্যিই ফলোঅনে পড়ে গেল বাংলাদেশ। ভারত কি আবারও বোলিং-ফিল্ডিং করার কষ্টটা করবে? নাকি নিজেরাই নেমে পড়বে ব্যাটিংয়ে?
এই প্রশ্নের দ্রুত উত্তর মিলল। এবং তাতে মুমিনুলের টানা টানা ১২ টেস্টে পঞ্চাশোর্ধ্ব ইনিংসের বিশ্ব রেকর্ড গড়ার সুযোগটা অবিশ্বাস্যভাবে এসে গেল। কিন্তু রেকর্ডের চেয়ে দল বড়—এই চেতনাতেই হয়তো ওপেনিংয়ে মুমিনুলকে পাঠানো হলো না। নাকি মুমিনুল নিজেই রাজি হননি? এমন একটা টেস্টে বিশ্ব রেকর্ড গড়েই বা কী লাভ!
পাঁচ দিনে ১৫ সেশন খেলা হয় টেস্টে। ওভারের হিসাবে খেলা হয়েছে মাত্র দুটো সেশন। এই দুই সেশনেই কত ঘটনাই না ঘটিয়ে ফেলল বাংলাদেশ। বৃষ্টিতে এভাবে প্রায় পুরো ম্যাচটাই ভেসে যাওয়ার পরও ফলোঅন! এ লজ্জা নয়তো কী?
না, বাংলাদেশ এই টেস্ট হারেনি। হারার সুযোগও ছিল না। তবে এই প্রশ্ন তোলার সুযোগ অবশ্যই আছে, বৃষ্টি না হলে বাংলাদেশ কয় দিনে হারত এই ম্যাচ? ড্র-টা বড় কথা নয়। বৃষ্টির বদৌলতে এর আগে ভারতের বিপক্ষেই আরও একটা টেস্ট ড্র করেছিল বাংলাদেশ। সমস্যা হলো, সেকেন্ডের ভগ্নাংশের মধ্যে শট নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার খেলা ক্রিকেটে মোমেন্টাম এবং আত্মবিশ্বাস খুবই জরুরি। তামিম গতকাল বলে গিয়েছিলেন, শেষ দিনে দলের ব্যাটসম্যানরা ওয়ানডের জন্য আত্মবিশ্বাস বাড়াবেন। সেটা কতটা বাড়ল কে জানে। তবে সমর্থকেরা মনে প্রাণে প্রার্থনা করবেন, এর প্রভাব যেন গিয়ে না পড়ে ওয়ানডে সিরিজে।
বেলা পৌনে একটার দিকে আবার খেলা শুরু হওয়ার কিছু পরই ফিরেছেন সাকিব। প্রতিটা বলেই টি-টোয়ন্টি স্টাইলে ব্যাট চালাতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়েছেন। ইমরুল খুব মেরে খেলেন—এমন অপবাদ কেউ দিতে পারবে না। কিন্তু হরভজনের বলটায় কী যে মাথায় ঢুকল, ডাউন দ্য উইকেটে নামলেন। এবং স্টাম্পিংয়ের ফাঁদ। অথচ সর্বশেষ ছয় টেস্টে চার সেঞ্চুরির কৃতিত্ব থেকে মাত্র ২৮ রান দূরে ছিলেন।
সৌম্য ৩৭ করে আউট হয়েছেন, ২৮-ই এসেছে চার থেকে। সবচেয়ে মরিয়া ছিলেন লিটন দাস। ওয়ানডে স্কোয়াডে জায়গা পেয়েছেন। টেস্টের পর ওয়ানডেতেও অভিষেক হয়ে যেতে পারে। ৪৫ বলে ৪৪ করে আউট হয়েছেন। আটটি চার ও এক ছক্কা—বাউন্ডারি থেকেই ৩৮ তুলে নির্বাচকদেরও দৃষ্টি আকর্ষণ করে রাখলেন। মাত্র সাত রান খেটে নিয়েছেন।
হোম অ্যাডভান্টেজ বা স্বাগতিক হওয়ার সুবিধা বাংলাদেশ নিতে জানে না। অতিথি পরায়ণ বাংলাদেশিরা সেটা সফরকারী দলদের দিয়ে সুনাম অক্ষুণ্ন রাখতে চায়। নিন্দুকেরা বলেন শুভাগত ‘হোম’ও নাকি প্রতিপক্ষ দলের জন্যই অ্যাডভান্টেজ! ৬ টেস্ট খেলেও না করেছেন তেমন রান, না পেয়েছেন তেমন উইকেট। এই টেস্টেও উইকেটশূন্য। টেস্ট দলে তাঁর কাজটা কী-এই প্রশ্নটার উত্তর দিতে একমাত্র ‘ক্ল্যাসিকাল টেস্ট ব্যাটসম্যান’ হিসেবে খেলছিলেন শুভাগত। ২৫ বলে ৯ রান করে ফিরেছেন। ‘দলের মধ্যে আমিই সবচেয়ে বেশি বল রক্ষণাত্মক ভঙ্গি কিংবা টেস্ট মেজাজে খেলেছি’-এই দাবিতে দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজে দুই টেস্টে জায়গা পাওয়ার দাবি করতেই পারেন।
তবে শুভাগত, সৌম্য কিংবা লিটনদের মতো নতুনেরা নয়, বিশ্ব ক্রিকেটকে বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেটের উন্নতির ইসিজি গ্রাফ কিংবা উত্থান-পতনের ইনডেক্সটা দেখানোর দায় সিনিয়রদের কাঁধেই বেশি বর্তায়।
সে যাই হোক। রাগ-অভিমান সব ভুলে সমর্থকেরা প্রার্থনা করবেন, পাকিস্তানকে বাংলাওয়াশ করার টাটকা স্মৃতিতে উজ্জীবিত হয়ে ওয়ানডেতে লড়াই করুক বাংলাদেশ। সেখানে যেন টেস্টের এই ভূত, এবং অবশ্যই বেরসিক বৃষ্টি হানা না দেয়।