• সোমবার , ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

টিটুর স্মার্ট বাজার ম্যাজিক!


প্রকাশিত: ১০:২৩ পিএম, ১৪ জানুয়ারী ২৪ , রোববার

নিউজটি পড়া হয়েছে ১০৮ বার


০০ ডিজিটাল মনিটরিংয়ে বাণিজ্য ব্যবস্থাপনা
০০ মানিকগঞ্জের ফুলকপি দুপুরে পাবে গৃহিনীরা
০০ সব সরবরাহ টাইমটা আমরা কমিয়ে আনব

 

 

বিশেষ প্রতিনিধি : দায়িত্ব পেয়ে দপ্তরে আসার প্রথম দিনই ভোক্তাবান্ধব দ্রব্যমূল্য নিশ্চিত করতে ‘স্মার্ট বাজার ব্যবস্থাপনার’ একগুচ্ছ পরিকল্পনা সামনে আনলেন নতুন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু। কমোডিটি এক্সচেঞ্জ পদ্ধতি চালু, প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে পণ্য আমদানিতে অগ্রাধিকারমূলক চুক্তি, পণ্যের সরবরাহ ব্যবস্থায় ডিজিটাল নজরদারি, সরকারিভাবে টিসিবির মাধ্যমে রেশনিং পদ্ধতি চালু করাসহ অন্যান্য উদ্যোগ নেওয়ার পরিকল্পনার কথাও তিনি বলেছেন।

আওয়ামী লীগের টানা চতুর্থ মেয়াদের সরকারে প্রতিমন্ত্রী হিসাবে সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন টাঙ্গাইল-৬ আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য টিটু। অবকাঠামো উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য আওয়ামী লীগ সরকার বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হলেও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধগতির কারণে গত এক বছর ধরেই বেশ চাপে রয়েছে সরকার। তেল, চিনি, আলু, পেঁয়াজসহ বিভিন্ন পণ্যের সিন্ডিকেট ভাঙতে না পারার কারণে সাবেক বাণিজ্য মন্ত্রীর সমালোচনা করেছিলেন অনেকেই। এক পর্যায়ে মন্ত্রী নিজেই দপ্তর ছেড়ে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন।

রোববার দপ্তরে বসার প্রথম দিন সাংবাদিকরা প্রশ্ন করার আগেই নিজে থেকে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকারের কৌশলগুলো তুলে ধরেন টিটু। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরামর্শেই এসব পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান। আমরা স্মার্ট বাংলাদেশে স্মার্ট বাজার ব্যবস্থাপনা করতে চাই। উৎপাদক বা আমদানিকারক থেকে ভোক্তা পর্যন্ত সরবরাহের টাইমটা যেন আমরা কমিয়ে আনতে পারি। সরবরাহ ভালো থাকলে বাজারে কেউ কারসাজি করতে পারবে না।

কোনো ভয়ভীতি দেখিয়ে নয়; সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমেই আমরা দ্রবমূল্যটা নিয়ন্ত্রণ করতে চাই। তেল, চিনি, লবণ, কৃষিপণ্য, ডাল এসব নিয়ে যারা কাজ করে তারা যেন স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার সঙ্গে কাজ করে সেটা আমরা নিশ্চিত করব।সাম্প্রতিক দ্রব্যেমূল্যের ঊর্ধগতির পেছনে কিছু বৈশ্বিক প্রভাবের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, একদিকে ইউক্রেইন রাশিয়া যুদ্ধ, আরেক দিকে ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের হামলার ফলে বাণিজ্য রুটগুলো বিপর্যস্ত হয়েছে।

শিপিং কস্ট বেড়ে গেছে, ডলারের মূল্য বৃদ্ধির কারণে টাকায় দ্রব্যমূল্য বেড়ে গেছে। আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে কোনো পণ্য যেন আউট অব সার্কুলেশন না হয়। বিভিন্ন অভিযানের মাধ্যমে আমরা যেন এটা জনগণের পর্যাপ্ত পরিমাণে পৌঁছে দিতে পারি। বাজারমূল্য ঠিক রাখতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো নিয়ে একটি সমন্বয় কমিটি গঠন করার পরিকল্পনার কথা বলেন প্রতিমন্ত্রী।তিনি বলেন, অর্থ মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয় নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় একটি টিম গঠন করবে। সব পণ্য যেন নির্বিঘ্নে ভোক্তাদের হাতে পৌঁছে দেওয়া যায় সেটাকে গুরুত্ব দিয়ে আমরা কাজ করব।

ঢাকা-৯ আসনের প্রয়াত সংসদ সদস্য মকবুল হোসেনের ছেলে টিটু পেশায় ব্যবসায়ী। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সভাপতির দায়িত্বও তিনি এক সময় পালন করেছেন। সে প্রসঙ্গ ধরে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমার পুঁজিবাজারের অভিজ্ঞতা আছে। আজকের দরদামটাকে ইনডেক্সের বেইজ ধরে আমরা মনিটর করব যে, আমাদের পণ্যের দাম কমছে নাকি বাড়ছে।ব্যবসায়ীদের মজুতদারি আমরা শক্ত হাতে দমন করব। যারা এসব করে তাদেরকে আমি ব্যবসায়ী বলব না। তারা অসাধু কিছু গোষ্ঠী। কোথাও মজুতদারির মাধ্যমে কৃত্রিম সংকট দেখলে আমরা সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেব। কিন্তু যারা ভালোভাবে ব্যবসা করবে, তাদেরকে আমরা সহযোগিতা করব। আমরা চাই নিত্যপণ্যগুলো যেন মানুষের জন্য সহজলভ্য থাকে।টিটু বলেন, এ বছরের শুরু থেকে স্মার্ট বাজার সিস্টেম চালু করতে চাই। উৎপাদনকারী থেকে ভোক্তা, আমদানিকারক থেকে ভোক্তা, এর মাঝে যেন কোনো কারসাজি না থাকে।

আমদানিনির্ভর পণ্যের বাজার স্থিতিশীল রাখতে ভারতের সঙ্গে আলোচনা করার কথা বলেন নতুন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী।তিনি বলেন, ভারত পেঁয়াজ ও অন্যান্য পেরিশেবল নিত্যপণ্যের বড় উৎস। আমরা একটা স্পেসিফিক আলোচনা করব, ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলব, যেন তারা নিত্যপণ্য রপ্তানিতে বিধিনিষেধ দিলেও আমাদের চাহিদার ভিত্তিতে কিছুটা হলেও রিল্যাক্স করে।

বাংলাদেশে কোনো ‘ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট’ থাকতে পারবে না মন্তব্য করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “ব্যবসায়ীদের স্বচ্ছতা ও দায়িত্বশীলতার সঙ্গে ব্যবসা করতে হবে, আমরা এটা নিশ্চিত করব। উই হ্যাভ এনাফ টুলস। আমাদের যথেষ্ট পরিমাণে এখতিয়ার আছে তাদের কাজ দেখভাল করার। তাদেরকে অডিট করার সুযোগ আছে।

আমাদের দেশ গণতান্ত্রিক দেশ এবং ফ্রি ইকনমির দেশ। আমার ব্যবসায়িক অভিজ্ঞতাকে অভিজ্ঞতা হিসাবে দেখবেন। আমি এই চেয়ারে বসে কোনো ব্যবসায়ী বা কোনো গোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষার্থে নয়, জনস্বার্থে কাজ করব। পণ্যের মান ও দাম সুশৃঙ্খল রাখতে উন্নত বিশ্বের মত বাংলাদেশেও পুঁজিবাজারের ইনডেক্সিংয়ের ধারণাকে কাজে লাগিয়ে কমোডিটি এক্সচেঞ্জ পদ্ধতি চালুর ঘোষণা দেন প্রতিমন্ত্রী।

তিনি বলেন, সেখানে ডাল, ছোলা, তেল এর স্পেশিফিকেশন থাকবে। দাম যা ওঠানামা করবে সবাই তা দেখতে পাবে। আগামী ৪/৫ মাস পরে এটা চালু করার পরিকল্পনা আছে। আমরা টিসিবির মাধ্যমে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী ও নির্দিষ্ট আয়ের মানুষের জন্য রেশন কার্ডের মাধ্যমে ন্যায্যমূল্যের দোকানে নিত্যপণ্য বিক্রি করব।

প্রতিমন্ত্রী হিসাবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাওয়ার পর নতুন কী চমক দেখাতে পারবেন আহসানুল ইসলাম টিটু? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমরা ডিস্ট্রিবিউশন চ্যানেল নিয়ে কাজ করব। মানিকগঞ্জের ফুলকপি যেটা রাতে ঢাকায় আসবে, সেটা যেন দুপুরের মধ্যে গৃহিনীদের হাতে পৌঁছে যায়। দিস ইজ দ্য ম্যাজিক। আমদানি পণ্যগুলো ট্যাগিং করা থাকবে যে, কত মণ কোথায় আসছে, কার কাছে আছে, কোন দোকানে বিক্রি হচ্ছে, এই সিস্টেমটা আমরা মনিটর করব। আগে মনিটরিং ছিল, কিন্তু সেটা ডিজিটালভাবে মনিটর করা হত না। এটা আমরা নিবিড়ভাবে করব।

সঠিক সরবরাহ ব্যবস্থা ঠিক রাখাই হল আমাদের মূল মন্ত্র। যৌক্তিক মূল্য ও সরবরাহ ব্যবস্থা নির্বিঘ্ন রাখাই হচ্ছে আমাদের কাজের মূল মন্ত্র। সরবরাহ ব্যবস্থা নির্বিঘ্ন করার মাধ্যমে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে চাই। আমার অনেক টুলস আছে যেগুলো দিয়ে আমি ব্যবসায়ীদের জবাবদিহিতার মধ্যে আনতে পারব।

রোজার মাস সামনে রেখে দেশে সব ধরনের পণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে বলেও জানান নতুন প্রতিমন্ত্রী। রোজার আর ৬০ দিন বাকি। আগামী রোজায় শতভাগ পারব কিনা, সেটা আমরা শতভাগ চেষ্টা করব। কোনো পণ্যের ঘাটতি আছে বলে আমাদের জানা নেই। হাতে দুই মাস সময় আছে। আগামী সপ্তাহ থেকে আমরা বড় ব্যবসায়ী, বড় বাজার এলাকায় পরিদর্শনে যাব।

অভ্যন্তরীণ বাজার ব্যবস্থাপনার পাশাপাশি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাভুক্ত রপ্তানি খাত নিয়ে পরিকল্পনা রয়েছে প্রতিমন্ত্রীর।
অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, গত রাতেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে রপ্তানি বাণিজ্য নিয়ে আমার আলাপ হয়েছে। রপ্তানিতে আমরা গার্মেন্টে শিল্পের ওপর অনেক বেশি নির্ভরশীল। গার্মেন্টসের মত একই রকম সুযোগ সুবিধা পাট শিল্প এবং চামড়া শিল্পে যেন দেওয়া যায়, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন। চামড়া ও পাট শিল্পে আমাদের ভ্যালু অ্যাডিশন অনেক বেশি। এগুলোকে কীভাবে ইনসেনটিভ দিয়ে এগিয়ে নেওয়া যায় সেটা আমাদের মন্ত্রণালয়ের একটা অগ্রাধিকার ভিত্তিক দায়িত্ব হবে।