টার্গেটে আওয়ামী সুবিধাভোগী-৫ শিল্পগোষ্ঠিকে সিআইসির নজরদারি
বিশেষ প্রতিনিধি : সন্দেহভাজন ব্যাক্তি ও প্রতিষ্ঠানের অবৈধ সম্পদ অর্জন ও কর ফাঁকি নিয়ে অনুসন্ধান শুরু করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেল (সিআইসি)। এস আলেমের পর আরও শীর্ষ ৫ ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে কর ফাঁকির অনুসন্ধান শুরু করল সিআইসি। ইতিমধ্যে ওরিয়ন, বসুন্ধরা, সামিট, নাসা ও বেক্সিমকো গ্রুপের মালিক ও তাদের পরিবারের সদস্যদের লেনদেনের তথ্য চেয়ে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে চিঠি দিয়েছে সংস্থাটি। সার্কেল অফিসগুলো থেকে আনা হচ্ছে তাদের ও কোম্পানির আয়কর নথি।
প্রথম ধাপে বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান, নাসা গ্রুপের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার, সামিট গ্রুপের চেয়ারম্যান আব্দুল আজিজ খান, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান ও ওরিয়ন গ্রুপের চেয়ারম্যান ওবায়দুল করিম এবং তাদের সাথে সংশ্লিষ্টদের ব্যাংক হিসাবের তথ্য চেয়ে বিভিন্ন ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন ও সঞ্চয় অধিদফতরসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দফতরে চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
গত ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতনের পর সরকার ঘনিষ্ঠ প্রভাবশালী রাজনীতিক ও ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ তদন্ত শুরু করেছে বিএফআইইউসহ গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। চট্টগ্রামের আলোচিত ব্যবসায়ী এস আলম, রাজনীতিবিদ শেখ সেলিমের পরিবারের সদস্যদের কর ফাঁকি অনুসন্ধান শুরু করেছে এনবিআরের কর অঞ্চল–১৫।
এদিকে কর ফাঁকির অভিযোগে অনুসন্ধান কার্যক্রমের স্বার্থে বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) এই চিঠি দেয়া হয়েছে বলে জানানো হয়। এতে বলা হয়েছে, বিভিন্ন উপায়ে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জনকারী সন্দেহভাজন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কর ফাঁকির বিশেষ অনুসন্ধান শুরু করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেল (সিআইসি)।আরও বলা হয়, সিআইসি বিভিন্ন সংবাদ পর্যালোচনা ও সুনির্দিষ্ট গোপন তথ্যের ভিত্তিতে সম্ভাব্য কর ফাঁকিবাজদের তালিকা করেছে। পর্যায়ক্রমে এসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আয়কর আইন-২০২৩ ও মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন- ২০১২ এর অধীনে ফাঁকি দেওয়া কর উদ্ধারের পাশাপাশি শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বেক্সিমকোর ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা ছিলেন। গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগের শাসনামলে তার বিরুদ্ধে আর্থিক খাতে নজিরবিহীন দুর্নীতি, লুটপাট, জালিয়াতি ও টাকা পাচারের অভিযোগ রয়েছে।নাসা গ্রুপের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদারের বিরুদ্ধেও আর্থিক খাতে লুটপাট ও অনৈতিক সুবিধা নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। বিভিন্ন সময় ব্যবসায়ী সমাজের পক্ষে হয়ে শেখ হাসিনার পাশে থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন নজরুল ইসলাম মজুমদার।
সামিট গ্রুপের চেয়ারম্যান আজিজ খান বাংলাদেশের জ্বালানি খাতে ‘কুইক রেন্টাল’ নামে পরিচিত বহুল বিতর্কিত ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের সবচেয়ে বড় সুবিধাভোগী শিল্পগোষ্ঠীর কর্ণধার। সিঙ্গাপুরে ৫০ শীর্ষ ধনীর একজন তিনি। তার বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের অভিযোগও রয়েছে।আহমেদ আকবর সোবহানের বসুন্ধরা গ্রুপের বিরুদ্ধে জমি দখল, নানা খাতে অনিয়মের মাধ্যমে সুবিধা নেয়া ও অর্থ পাচারের সুবিধা নেয়ার অভিযোগ আছে। কোটা আন্দোলনের সময় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ব্যবসায়ীদের বৈঠকে আহমেদ আকবর সোবহান অঙ্গীকার করেন, জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত শেখ হাসিনার পাশে থাকবেন। এছাড়া, ওবায়দুল করিমের ওরিয়ন গ্রুপের বিরুদ্ধে প্রতারণা ও জালিয়াতির অভিযোগ রয়েছে। শেখ হাসিনা সরকারের আমলে বড় বড় প্রকল্পে কাজ করে ওরিয়ন গ্রুপ।
এসব সম্পর্কে সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, যাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে, সেখানেও আমার মনে হয় একটা অগ্রাধিকার ঠিক করতে হবে যাতে হ্যারাসমেন্ট না হয়। আবার যারা ট্যাক্স দেন নাই, এভোয়েড করেছেন বিশেষত যেখানে আমাদের রাজস্ব জিডিপি বৃদ্ধি না করলে আমরা ঋণফাঁদে পড়ে যাওয়ার একটা আশঙ্কা আছে, সেহতু এখানে অনেক জোর দিতে হবে।সম্পদের তথ্য খোঁজার পাশাপাশি কর অঞ্চল থেকে এসব ব্যক্তির ও পরিবারের সদস্যদের কর নথি তলব করেছে সিআইসি। আনা হচ্ছে তাদের কোম্পানির নথিও।