টাকার কুমির বিএনপি খোকার অবৈধ ধনভান্ডার বাজেয়াপ্ত
বিশেষ প্রতিনিধি : টাকার কুমির বিএনপি নেতা সাদেক হোসেন খোকার অবৈধ ধনভান্ডার বাজেয়াপ্ত করা শুরু করেছে সরকার। ঢাকা জেলা প্রশাসন সূত্র জাতিরকন্ঠকে জানায়, বুধবার ঢাকার গুলশানে ছয়তলা ভবন বাজেয়াপ্ত করে নোটিশ ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে।এছাড়া তিন জেলার প্রশাসক খোকার অবৈধ সম্পদ সরকারের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করার কাজ এগিয়ে নিচ্ছেন।
জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, ঢাকার সাবেক মেয়র, মন্ত্রী ও বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতা সাদেক হোসেন খোকার বাড়ি ও জমি সরকার বাজেয়াপ্ত করছে। বুধবার ঢাকার গুলশানে ছয়তলা ভবন বাজেয়াপ্ত করে নোটিশ ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ঢাকা, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জে খোকার অবৈধ সম্পদ বাজেয়াপ্তে কাজ করছেন জেলা প্রশাসকবৃন্দ।
বিভিন্ন সূত্র জানায়, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জে সাদেক হোসেনের নামে থাকা মোট ১০০ দশমিক ১৯৪৬ একর জমি বাজেয়াপ্ত করা হবে। এর মধ্যে তাঁর মালিকানাধীন ঢাকার গুলশান ২ নম্বর সেক্টরের ৭২ নম্বর সড়কের ৯ নম্বর হোল্ডিংয়ের ৫ কাঠা জমি এবং তার ওপর নির্মিত ছয়তলা ভবনে গতকাল ঢাকার জেলা প্রশাসক নোটিশ ঝুলিয়ে দেন। ওই বাড়ির দাম আদালত ২ কোটি ৪৭ লাখ ৬০ হাজার টাকা নির্ধারণ করেছিলেন।
সাবেক মেয়রের বিরুদ্ধে দুদকের মামলার রায়ে ১০ কোটি ৫ লাখ ২১ হাজার ৮৩২ টাকা মূল্যের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। এর মধ্যে মেসার্স বুড়িগঙ্গা ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের নামে গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার বিভিন্ন মৌজায় ২৭ খণ্ড কৃষিজমি, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন মৌজায় ৩৪ খণ্ড কৃষিজমিসহ মোট ৬১টি দলিলে ১৩৩ দশমিক ৫৯৫২ একর জমি রয়েছে। এসব জমির চার মালিকের মধ্যে খোকার অংশ হিসেবে ৭ কোটি ৩৪ লাখ ৪৮ হাজার টাকা মূল্য ধরা হয়েছে ১৩৩ একর জমির দাম হিসেবে।
এ ছাড়া বুড়িগঙ্গা ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের নামে হাবিব ব্যাংকে জমা করা টাকা থেকে ২৩ লাখ ১২ হাজার ৯৭৩ টাকা নিয়ে মোট ১০ কোটি ৫ লাখ ২১ হাজার ৮৩২ টাকার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দেন আদালত।
ঢাকা জেলা প্রশাসন সূত্র জাতিরকন্ঠকে জানায়, খোকা রায়ের বিরুদ্ধে এখন আর আপিল করতে পারবেন না। কারণ, সেই সময় শেষ হয়ে গেছে। আপিল করতে চাইলে তাঁকে সশরীরে উপস্থিত থেকে করতে হতো। তাঁর আইনজীবী মহসীন মিয়া জানান, খোকা পলাতক থাকায় আপিল করতে পারেননি।
গত বছরের ২০ অক্টোবর গোপন ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেনকে ১৩ বছরের কারাদণ্ড দেন আদালত। তিনি অবৈধভাবে ১০ কোটি ৫ লাখ ২১ হাজার ৮৩২ টাকার সম্পদের মালিক হয়েছেন ঘোষণা করে ওই সম্পদ রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে রায়ে। রায় ঘোষণার সময় তিনি নিউইয়র্কে অবস্থান করছিলেন। তাঁকে পলাতক দেখিয়ে এ মামলার বিচার চলে।
রায়ে বলা হয়, আসামি অবৈধ সম্পদের মালিক হওয়ার পাশাপাশি ৯ কোটি ৬৫ লাখ ৩ হাজার টাকার সম্পদের ওপর প্রযোজ্য কর ফাঁকি দিয়েছেন। রায়ে দুদক আইনের ২৬-এর ২ ধারা অনুযায়ী ‘মিথ্যা তথ্য দেওয়ায় কারণে’ সাদেক হোসেনকে তিন বছর বিনাশ্রম কারাদণ্ড এবং এক লাখ টাকা জরিমানা করেন আদালত।
ওই টাকা দিতে না পারলে তাঁকে আরও এক মাস জেল খাটতে হবে। আর অবৈধ সম্পদের মালিক হওয়ায় ২৭-এর ১ ধারা অনুযায়ী ১০ বছর সশ্রম কারাদণ্ডের রায় হয়েছে। পাশাপাশি তাঁকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করেছেন বিচারক। জরিমানার টাকা দিতে না পারলে ভোগ করতে হবে আরও ছয় মাসের সাজা।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২০০৮ সালের ২ এপ্রিল দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) রমনা থানায় এ মামলা করে। তাঁর স্ত্রী ইসমত আরা এবং ছেলে ইসরাক হোসেন ও মেয়ে সারিকা সাদেককেও মামলায় আসামি করা হয়। ওই বছরের ১ জুলাই দুদকের তদন্ত কর্মকর্তা তাঁর ছেলে-মেয়ের নাম বাদ দিয়ে আদালতে অভিযোগপত্র দেন।
এদিকে ক্ষমতার অপব্যবহার ও নিয়মবহির্ভূতভাবে রাজধানীর ১০টি মার্কেটের ১৩৮টি দোকান বরাদ্দ দেওয়ার অভিযোগে বিএনপির নেতা সাদেক হোসেনের বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা দায়ের করেছে দুদক।