টাওয়ার মিজানের লুটপাট
গিলেছে ২০০০ কোটির সম্পত্তি সাবেক আইনমন্ত্রী-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সহযোগী
লাবণ্য চৌধুরী : সরকারি বেসরকারি মিলে ২ হাজার কোটি টাকার জমি লুটেরা টাওয়ার মিজান কে ধরবে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ভুক্তভোগীরা। ইতিমধ্যে অভিজাত গুলশান এলাকায় তিনটি বাড়ি দখল করে রেখেছে এই সেই মিজান ওরফে টাওয়ার মিজান। তার বিরুদ্ধে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, দুদক, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ রাজউকে লিখিত দিয়েও সুবিধা করতে পারেনি ভুক্তভোগীরা। গুলশানে বাড়ি দখল করেই ক্ষান্ত হননি টাওয়ার মিজান। উল্টো দখল বাড়িতে নিজের নামের সাইনবোর্ড টানিয়ে দিয়েছে ধুরন্ধর মিজান। দখল সম্পত্তির পাহারায় নিয়োগ দিয়েছে আনসার বাহিনী। তারা পাহারা দিচ্ছে মিজানের লুটের সম্পদ।
এই টাওয়ার মিজান ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার সঙ্গে সাভারে ছাত্র-জনতার হত্যাযজ্ঞের ৩৩ নম্বর আসামী। মামলার এজাহারে টাওয়ার মিজানের গুলশানের বাসার ঠিকানা ও সাভার রেডিও কলোনির ঠিকানা দেয়া হয়েছে। সাভার থানা পুলিশ টাওয়ার মিজানের বিরুদ্ধে মামলার সত্যতা স্বীকার করে বলেছেন, আমরা তাকে হন্য হয়ে খুঁজছি। তবে শিগগির টাওয়ার মিজান কে গ্রেফতার করতে অভিযান চালানো হবে বলে জানানো হয় দৈনিক সত্যকথা প্রতিদিন প্রতিনিধিকে।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গুলশান এলাকায় তিনটি বাড়ি দখল করাযত্ব করেছে টাওয়ার মিজান। তিনটি বাড়িতেই তার নেমপ্লেট শোভা পাচ্ছে। বাড়িগুলির নাম দেয়া হয়েছে, মদিনা মঞ্জিল নামে। মদিনা মঞ্জিল-১ ২, ও মদিনা মঞ্জিল-৩ নামে নেমপ্লেট সাটানো আছে । লেখা আছে এই বাড়ির মালিক আলহাজ্ব মিজানুর রহমান। আশপাশের বাসিন্দারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, টাওয়ার মিজান প্রায় রাতে এসব বাসায় আসেন। বাড়ির আনসার গার্ডরা গেট খুলে দিলে মিজান ভিতরে যান। প্রায় সময় গাড়িতে নারীদেরও দেখা গেছে। তবে এসব বাড়ির দারোয়ানদের সঙ্গে কথা বলা হলে তারা কোনো তথ্য দিতে রাজি হননি। তবে তারা জানিয়েছেন, এসব বাড়ি টাওয়ার মিজানের। গুলশান ২ নম্বর এলাকায় ৫৪ নম্বর সড়কের কাছে রয়েছে মদিনা মঞ্জিল।
গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, জমির দালাল থেকে ব্যাংক আবাসনসহ নানা শিল্পের মালিক বনে গেছেন এই টাওয়ার মিজান। লুটের টাকায় ২০২১ সালের ৩১ অক্টোবর সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার এন্ড কমার্স ব্যাংকের অন্যতম মালিক বনে যায় সে। জানা গেছে, ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের ১২৯তম সভায় টাওয়ার মিজান ওরফে আলহাজ্ব মিজানুর রহমানকে সর্বসম্মতিক্রমে পরিচালনা পর্ষদের ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত করা হয়েছিল।
তৎকালীন ব্যাংকের প্রোফাইলে মিজানুর রহমান ব্যাংকের একজন স্পন্সর ডিরেক্টর এবং তিনি পর্ষদের বিভিন্ন কমিটি সমূহে গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করছেন বলে জানানো হয়। বলা হয়েছিল টাওয়ার মিজান একজন সফল শিল্পোদ্যোক্তা যাঁর আবাসন, গৃহায়ণ, নির্মাণ, শিল্প এবং গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন সেক্টরে বিনিয়োগ রয়েছে। এই সেই টাওয়ার মিজান ১৯৮৯ সালে প্রতিষ্ঠা করেন নামসর্বস্ব মুন গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ। জানা গেছে, জমির ব্যবসা আর দালালি ছাড়া আর কোনো ছিল না তার। সেই দালাল মিজান পরে কল্যাণপুরে মিজান টাওয়ার বানিয়ে বনে যায় মুন গ্রুপ এর মালিক।
অভিযোগ রয়েছে, পলাতক ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের অধপতনের নেপথ্যে জড়িত সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের লুটপাটের বড় অংক গচ্ছিত রয়েছে এই টাওয়ার মিজানের কাছে। কামালের নির্দেশে এই টাওয়ার মিজান মিরপুর অঞ্চলে ছাত্র-জনতার অন্দোলন নস্যাত করতে নানামুখী অপকর্মে লিপ্ত ছিল। এই সেই মিজান যিনি ফেসিস্ট সরকারকে রক্ষায় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলন নস্যাত করতে বড় ধরনের হামলায় অংশ নিয়েছিল। ছাত্র জনতার আন্দোলন যখন চূড়ান্ত পর্যায়ে রুপ নিচ্ছিল তখন নানাভাবে হামলা করে এই সেই টাওয়ার মিজান।
ওই সময় ৩১ জুলাই বুধবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিরপুর বিভাগের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার মাসুক মিয়া জানিয়েছিলেন কল্যাণপুরের মিজান টাওয়ারের পঞ্চম তলায় একটি ফ্ল্যাটে কালো পলিথিনে মোড়ানো কিছু ককটেল সদৃশ বস্তু মিলেছে। এসব বস্তু একটি কার্টনে মোড়ানো ছিল। পরে তৎকালীন মিরপুর থানা পুলিশের সিটিটিসির বোমা ডিসপোজাল ইউনিটকে কল দেয়া হয়। সিটিটিসি এসে ১৬টি ককটেল সদৃশ বস্তু উদ্ধার করে। তিনি আরও বলেন, ককটেলগুলো নিষ্ক্রিয় করতে মিরপুর গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের ফাঁকা মাঠে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে এ ঘটনায় কাউকে আটক করা হয়নি। এসব বিষয় জানতে টাওয়ার মিজানের মোবাইল ফোনে কল দেয়া হলে তিনি কোনো উত্তর করেননি। এমনকি ক্ষুদে বার্তা দেয়া হলেও তিনি উত্তর দেননি।