জ্যোতিষশাস্ত্র সংস্কৃতির ভিন্ন রুপ: জ্যোতিষরাজ লিটন দেওয়ান চিশতী
বিশেষ প্রতিনিধি : জ্যোতিষশাস্ত্র সংস্কৃতির একটি ভিন্ন রুপ। এর ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া চিহ্নিত করে ভবিষ্যত ঘটনা প্রবাহ বলে দেন জ্যোতিষরাজ লিটন দেওয়ান চিশতী। তিনি বলেন, মেসোপটেমিয়ার প্রাথমিক সংস্কৃতির মূল উৎস হিসেবে এটি বিবেচিত হয়। রাশিচক্রের প্রথম বারোটি চিহ্নকে ব্যাবিলিয়ন এবং রোমান সংস্কৃতি থেকে নেওয়া হয়। গ্রিকদের সংস্কৃতির দেবতার নাম অনুসারে জ্যোতিষশাস্ত্রের চিহ্নের নামকরণ করা হয়েছিল।
জ্যোতিষশাস্ত্র দূর আকাশের তারাদের ওপরে নির্ভর করে তৈরি। সৌরজগতের বিভিন্ন গ্রহের কক্ষপথ প্রায় একই জ্যামিতিক সমতলের মধ্যে থাকে। ৩ হাজার বছর আগের কথা, জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা বিস্মিত হয়ে ভেবেছিলেন, যদি দিনের আকাশেও তারা দৃশ্যমান হয়, তবে আকাশ কেমন হবে। বিভিন্ন রকম পর্যবেক্ষণ থেকে তারা একটি সিদ্ধান্তে উপনীত হন, সেটি হচ্ছে সূর্য অবস্থান করে মধ্যবিন্দুতে এবং তাকে ঘিরে অবস্থান করে তারা। তবে একেক মাসে এই অবস্থান নানাভাবে পরিবর্তিত হয়।
অর্থাৎ বারো মাসে বারো রকম প্যাটার্ন তৈরি হয়। এ বারো রকম প্যাটার্নকে একেকটি রাশিচক্র চিহ্ন হিসেবে বিবেচনা করা হয়। রাশিচক্রের ধারণাটি বহু প্রাচীন। মেসোপটেমিয়ার প্রাথমিক সংস্কৃতির মূল উৎস হিসেবে এটি বিবেচিত হয়। রাশিচক্রের প্রথম বারোটি চিহ্নকে ব্যাবিলিয়ন এবং রোমান সংস্কৃতি থেকে নেওয়া হয়। গ্রিকদের সংস্কৃতির দেবতার নাম অনুসারে জ্যোতিষশাস্ত্রের চিহ্নের নামকরণ করা হয়েছিল। তারা পরবর্তীতে রাশিচক্রের নামে পরিবর্তন করে। মেসোপটেমিয়ান বারোটি নামকে তারা তাদের মিথোলজি অনুসারে নামকরণ করে। যে কারণে সমসাময়িক রাশিচক্রটিতে ভূমধ্যসাগরীয় পুরাণ সম্পর্কিত নাম রয়েছে।
চিরায়ত রাশিচক্রের পাশ্চাত্য চিহ্নগুলোকে প্রধানত চার ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে। পৃথিবী : বৃষ, কন্যা ও মকর। বায়ু : মিথুন, তুলা ও কুম্ভ। আগুন : মেষ, সিংহ ও ধনু এবং পানি : কর্কট, বৃশ্চিক ও মীন।
চীনা রাশিচক্রটি জন্মের বছরটির ওপর ভিত্তি করে বারোটি পশু চিহ্ন ব্যবহার করে তৈরি করা হয়ে থাকে। যেমন : ইঁদুর, বাছুর, বাঘ, খরগোশ, ড্রাগন, সাপ, ঘোড়া, ছাগল, বানর, কুকুর, মোরগ ও শূকর। এর পাঁচটি উপাদান থাকে : পৃথিবী, ধাতু, জল, কাঠ এবং আগুন। সমগ্র চীনা রাশিচক্রটি সম্পন্ন করতে ৬০ বছর সময় লাগে।
হিন্দু জ্যোতিষশাস্ত্র বা বৈদিক জ্যোতিষশাস্ত্র, ভারতের ঐতিহাসিক জ্যোতির্বিজ্ঞানের সঙ্গে যুক্ত। এর তিনটি শাখা রয়েছে। সিদ্ধান্ত (জ্যোতির্বিজ্ঞান), সংহিতা (যা প্রধান ঘটনাগুলো পূর্বাভাস দেয়) এবং হোরা (বিস্তারিত ভবিষ্যদ্বাণী)।
হিন্দু রাশিচক্রের উপাদানগুলো পশ্চিমা রাশিচক্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে মিলিত হলেও হিন্দুধর্ম চাঁদে আরও বেশি গুরুত্ব দেয়। তারা তাদের তারকা চিহ্নের থেকে বেশি গুরুত্ব চাঁদের চিহ্নকে দেয়। আরেকটি পার্থক্য হলো, তারা একটি ক্রান্তীয় রাশিচক্রের পরিবর্তে একটি তারা সম্পর্কিত পার্শ্বীয় রাশিচক্র ব্যবহার করে। প্রায় ২৮৫ খ্রিষ্টাব্দে উভয় রাশিচক্র একই রকম ছিল, কিন্তু পশ্চিমা সংস্করণটি ২২ ডিগ্রি অতিক্রম করে চলেছে।
পাশ্চাত্যের রাশিচক্র জন্মের তারিখের ওপর ভিত্তি করে তৈরি। এখানে প্রকৃতির ওপর সর্বোচ্চ সম্মান এবং পবিত্র মনস্তত্ত্ব রয়েছে। জন্মের দিনটির ওপর ভিত্তি করে ব্যক্তি সেই পবিত্র গাছের জ্ঞান পাওয়ার যোগ্য হিসেবে বিবেচিত হয়।
মিসরীয়রা রাতের আকাশ থেকে তাদের পরামর্শ, জ্ঞান এবং তাদের ভাগ্য নির্ধারণের জন্য সর্বদা উত্তর খোঁজছিল। তারা বিশ্বাস করেছিল যে, তাদের ব্যক্তিত্ব, জীবন এবং নিয়তি আকাশে আবদ্ধ ছিল। তাদের জ্যোতিষশাস্ত্র বারোটি চিহ্নের অন্তর্গত। প্রত্যেকটি চিহ্ন প্রাচীন মিসরীয় পৌরাণিক কাহিনীর দেবতাদের ও দেবীর ওপর ভিত্তি করে নির্মিত। এখানে মনে করা হয়, আপনার ব্যক্তিগত চিহ্ন আপনার চরিত্র, আচরণ এবং দক্ষতা প্রতিনিধিত্ব করে। প্রতিটি চিহ্ন মোট ত্রিশ দিনের জন্য।
আমেরিকানদের অনুপ্রেরণার প্রধান উৎস হিসেবে প্রকৃতি ব্যবহারের সর্বাধিক। তারা জীবনের চার পাশের জীবন্ত প্রাণীগুলোর সঙ্গে জন্মের প্রতীকসহ প্রায় প্রতিটি দৃষ্টিভঙ্গিকে যুক্ত করে। নেটিভ আমেরিকার আমেরিকানরা এই বিশ্বাস করে, একজন ব্যক্তির জন্মের সময় প্রকৃতি ব্যক্তির বৈশিষ্ট্যকে প্রভাবিত করবে। তারা প্রকৃতির সঙ্গে একটি গভীর আধ্যাত্মিক সংযোগ ভাগ করে নিয়েছে।