দেড় মাস পর জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় ফের আদালতে হাজির হচ্ছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। বিএনপির ভাষায় ‘রাজনৈতিক হয়রানিমূলক’ এই মামলায় গত ৯ নভেম্বর পুরান ঢাকার আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত অস্থায়ী আদালতের হাজিরা দিয়েছিলেন তিনি।মাঝে বিরতি দিলেও বুধবার খালেদা আদালতে যাবেন বলে মঙ্গলবার জানিয়েছেন তার আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া।গত ১৭ মার্চ অভিযোগ গঠনের পর বেশ কয়েকবার পিছিয়ে ঢাকার বিশেষ জজ বাসুদেব রায়ের আদালতে বিএনপি সমর্থক আইনজীবীদের হট্টগোলের মধ্যে গত ১১ নভেম্বর এই মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়।খালেদার আইনজীবীদের একের পর এক আবেদনের মধ্যে মামলার বাদী ও প্রধান সাক্ষী হারুন-অর-রশীদ চারটি ধার্য তারিখেও সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ করতে পারেননি। বুধবার তার সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হওয়ার কথা।সর্বশেষ ১৭ ডিসেম্বর এই মামলার শুনানি ঢাকার বিশেষ জজ বাসুদেব রায় নিলেও তারপর তিনি বদলি হওয়ায় বুধবার শুনানি নেবেন ওই আদালতের নতুন বিচারক আবু আহমেদ জমাদার।বাসুদেব রায়কে নিয়ে আপত্তি জানিয়ে আসা বিএনপি বিচারক বদল নিয়েও প্রশ্ন তুলে বলেছে, এটা বিচারের ওপর সরাসরি প্রভাব বিস্তারের শামিল।
জিয়া এতিমখানা (অরফ্যানেজ) ট্রাস্টের পাশাপাশি জিয়া দাতব্য (চ্যারিটেবল) ট্রাস্টের দুর্নীতি মামলায়ও গত ১১ সেপ্টেম্বর বাসুদেব রায়ের আদালতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন হয়।সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে করা এই দুটি মামলা বাতিলে উচ্চ আদালতে গিয়ে বিফল হওয়ার পর বাসুদেব রায়ের নিয়োগের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে হাই কোর্টে গিয়েছিলেন খালেদা।কিন্তু সব আবেদন খারিজ হয়ে যাওয়ার পর বিচারিক আদালতে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হওয়ার পরও বিভিন্ন আবেদন করতে থাকেন খালেদার আইনজীবীরা।মামলার বাদী দুর্নীতি দমন কমিশনের আইনজীবীদের অভিযোগ, বিচার বিঘ্নিত করতেই বিএনপি চেয়ারপারসনের আইনজীবীরা বিভিন্ন ‘অযৌক্তিক’ আবেদন করে যাচ্ছেন।
অন্যদিকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দেশনেত্রীকে হেয় প্রতিপন্ন করে তাকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখার জন্য হীন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এই মিথ্যা মামলা দিয়েছে সরকার।এই মামলা তুলে নেওয়া না হলে শুধু এই বিষয় নিয়ে আন্দোলনের হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও আইনজীবী নেতা রফিকুল ইসলাম মিয়া।জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের নামে অর্থ আত্মসাতের মামলায় খালেদার ছেলে বিএনপির জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানও আসামি। লন্ডনে থাকা তারেকের পক্ষে আইনজীবীরা হাজিরা দেন।
মাগুরার সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল, সাবেক আমলা ড. কামালউদ্দিন সিদ্দিকী, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ এবং জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান এই মামলার আসামি।সালিমুল ও শরফুদ্দিন জামিনে রয়েছেন। কামাল সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমান মামলার শুরু থেকেই পলাতক।এতিমদের সহায়তা করার উদ্দেশ্যে একটি বিদেশি ব্যাংক থেকে আসা ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে এই মামলা করে দুদক।দুদকের সহকারী পরিচালক হারুন এই মামলায় খালেদা, তারেকসহ ছয় আসামির বিরুদ্ধে ২০০৯ সালের ৫ অগাস্ট আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।খালেদাসহ চারজনের বিরুদ্ধে জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলারও বাদী হারুন-অর-রশিদ। এ মামলায় ক্ষমতার অপব্যবহার করে ট্রাস্টের নামে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে।
এ মামলার অন্য আসামিরা হলেন- খালেদার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছের তখনকার সহকারী একান্ত সচিব ও বিআইডব্লিউটিএর নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খানএদের মধ্যে হারিছ চৌধুরী মামলার শুরু হতেই পলাতক। তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও রয়েছে। বাকিরা জামিনে রয়েছেন।