”জামায়াত-হেফাজত কখনো আ’লীগকে ভোট দেবে না”
স্টাফ রিপোর্টার : রাজধানীতে ২০১৩ সালের ৫ মে হেফাজত ইসলামের তাণ্ডবের ঘটনায় করা সব মামলা দ্রুত বিচার আদালতে স্থানান্তরের দাবি জানিয়েছে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি। শুক্রবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের পক্ষ থেকে এই দাবি জানানো হয়।
নির্মূল কমিটির নেতারা বলেন, একাত্তরে পরাজয়ের প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে জামায়াত- হেফাজতসহ পাকিস্তানপন্থি তাবৎ সংগঠনগুলো। জামায়াত-হেফাজতকে যত ছাড় দেওয়া হোক না কেন ভোটের রাজনীতির সমীকরণে পাকিস্তানপ্রেমীরা কখনও আওয়ামী লীগকে ভোট দেবে না, এ বিষয়টি আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকদের অনুধাবন করতে হবে।
‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে মন্থরতা, প্রধান বিচারপতির বক্তব্য এবং মৌলবাদী-সাম্প্রদায়িক অপশক্তির উল্লম্ফন’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে বক্তরা আরও বলেন, যুদ্ধপরাধী দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর রায় রিভিউ (পুনর্বিবেচনা) মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর ও মুক্তিযুদ্ধ সর্ম্পকে প্রধান বিচারপতি যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা যুদ্ধাপরাধের বিচারের ভবিষ্যৎ নিয়েও উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করনে নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির। আরও বক্তব্য দেন সংগঠনের উপদেষ্টা অধ্যাপক অজয় রায়, আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শামসুল হুদা মানিক, এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী, শিল্পী হাশেম খান, ভাস্কর ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী প্রমুখ।
এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের উপদেষ্টা স্থপতি রবিউল হাসান, ক্যাপ্টেন (অব.) আলমগীর সাত্তার, সাধারণ সম্পাদক কাজী মুকুল, সহ-সাধারণ সম্পাদক ডা. নুজহাত চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক আলী আকবর টাবী, আইন সম্পাদক ব্যারিস্টার নাদিয়া চৌধুরী প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর হেফাজতে ইসলামের ধৃষ্টতা বেড়েই চলেছে। সুপ্রিম কোর্টের ভাস্কর্য সর্ম্পকে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে হেফাজত উল্লসিত হয়েছে। এর পরই রাতের অন্ধকারে ভাস্কর্য অপসারণ ও পুনঃস্থাপন করা হয়েছে। এমন নাটকটি দেশবাসী দেখেছেন। এখন তারা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। একের পর এক ভাস্কর্য ভাঙার হুমকি দিয়ে আসছে।’
তিনি বলেন, ‘২০১৩ সালের ৫ মে হেফাজতে ইসলাম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারকে উৎখাতের জন্য রাজধানীতে বর্বর তাণ্ডব চালিয়েছিল। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীকেও তারা বলেছিলেন নাস্তিক। ওই সময় প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, জামায়াত-হেফাজতকে আর ছাড় দেওয়া হবে না।
তখন হেফাজতে নেতাদের বিরুদ্ধে হত্যা, অগ্নিসংযোগ ও সন্ত্রাসের অভিযোগে শতাধিক মামলা হয়েছে। অথচ এরপর হেফাজতের মতো উগ্র মৌলবাদী ও সন্ত্রাসী সংগঠনের প্রতি সরকার হঠাৎ কেন নমনীয় হয়েছে, এর ব্যাখ্যাও সরকারকে দিতে হবে।’
হেফাজতে ইসলামকে ছাড় দিয়ে সরকার ভুল করছে মন্তব্য করে শাহরিয়ার কবির আরও বলেন, ‘২০১৩ সালে ৩৯ জন নিরীহ মানুষ, ৬ জন আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্য হত্যাসহ যাবতীয় সন্ত্রাসের জন্য হেফাজতে নেতাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা দ্রুত বিচার আদালতে স্থানান্তর করতে হবে। নয়তো হেফাজতের আস্ফালন নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না।’
অধ্যাপক অজয় রায় বলেন, ‘দেশে হেফাজতে ইসলাম ও মৌলবাদী সংগঠনগুলো বেপরোয়া হয়ে উঠছে। তারা এতই বেপরোয়া হয়ে উঠছে যে, একদিন খোদ প্রধানমন্ত্রীকেই তারা হিজাব পড়িয়ে ছাড়বে। তারা ভাস্কর্য ভাঙচুর ও উচ্ছেদে প্রকাশ্যে নেমেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের সামনে থেকে যে ভাস্কর্য উচ্ছেদ করা হলো তার যথাযথ ব্যাখ্যা প্রধান বিচারপতিকে দিতে হবে। তার কি দুর্বলতা রয়েছে তাও দেশবাসী জানতে চায়। তাকে মনে রাখতে হবে যে, আমরা সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে কাজ করি। ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করি।’
বিচারপতি এএইচ শামসুদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘গত ১৫ যুদ্ধাপরাধী দেলোয়ার হোসাইন সাঈদীর রায়ের রিভিউ আবেদন শুনানিকালে প্রধান বিচারপতি সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিক এবং অযাচিতভাবে ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটরদের নিয়ে আক্রমণাত্মক কথা বলেছেন। সংবাদপত্রে এগুলো পড়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সকল মানুষই ক্ষুব্ধ হয়েছেন।’