জামায়াতকে খালেদা জিয়ার রেড এ্যালার্ট
লাবণ্য চৌধুরী: অবশেষে জামায়াতে ইসলামীকে সংস্কারের পরামর্শ দিয়েছেন খালেদা জিয়া বলেছেন অবিলম্বে দল থেকে যুদ্ধাপরাধী জঙ্গিবাদী হঠাও । নইলে বর্তমান বাস্তবতায় বিএনপি জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখাটা কঠিন হয়ে পড়বে। সম্প্রতি দলের একজন শীর্ষস্থানীয় নেতার মাধ্যমে জামায়াতের কাছে এমন বার্তা পাঠিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন।
আগামী নভেম্বরে খালেদা জিয়া লন্ডন থেকে ফিরলে জামায়াতকে সংস্কার তথা সংশোধনের পরামর্শ দেওয়ার বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হতে পারে।
একদিকে দলের শীর্ষ নেতারা যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত, অন্যদিকে পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে জামায়াতের গোপন সম্পর্ক ও কট্টর মৌলবাদী রাজনীতির অভিযোগে চতুর্মুখী চাপে অত্যন্ত গোপনে দলটিকে এই বার্তা দিয়েছেন বিএনপিপ্রধান। দলের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের একাধিক সূত্র জাতিরকন্ঠকে এসব তথ্য জানিয়েছেন।
তবে খালেদা জিয়ার বার্তা বহনকারী নেতাকে জামায়াতের শীর্ষ নেতারা বলেছেন, দেশের ভেতর ও বাইরে কোনো জঙ্গিগোষ্ঠীর সঙ্গে তাদের সম্পর্ক নেই। এ ধরনের কোনো প্রমাণ কেউ দিতে পারবে না। তা ছাড়া তারা কোনো কট্টর মৌলবাদী রাজনীতিও করেন না। বাংলাদেশের সংবিধানে দেওয়া মৌলিক অধিকার অনুযায়ী সব নিয়ম-কানুন মেনেই রাজনীতি করেন। বিএনপিকে দুর্বল করতেই জামায়াতের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে দূরে সরানোর ষড়যন্ত্র হচ্ছে বলে মনে করেন তারা।
এ সম্পর্কে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহ বলেন, আসন্ন স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয় প্রতীকে হলে রাজনীতিতে অনেক মেরুকরণ হবে। জামায়াতে ইসলামীকে সংস্কারের প্রস্তাব সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে তিনি অবহিত নন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির একজন নেতা জাতিরকন্ঠকে বলেন, জামায়াত নিয়ে শুধু বিদেশি বা দেশীয় চাপ নয়, বিএনপির ভেতরেও চাপ সৃষ্টি হয়েছে। ঘরে-বাইরে চাপের মুখে বিএনপির নিজের স্বার্থে জামায়াত সংশ্লিষ্টতার ব্যাপারে দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে। অন্যথায় বিএনপির লোকসান হবে। তবে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল হওয়ায় এবং দলীয় প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নিতে না পারার পর পরিস্থিতি পাল্টে যাবে বলে মনে করেন ওই নেতা। নতুন দল না করলে জামায়াত নামের কোনো দলই নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না। তাই জামায়াত সংস্কারের একটি উপযুক্ত সময়ও বটে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, বিএনপি ও জামায়াতের রাজনৈতিক আদর্শ সম্পূর্ণ ভিন্ন। তারা শুধু নির্বাচনী জোট করেছেন। অতীতে আওয়ামী লীগও এটি করেছে। এটা দোষের কিছু নয়। সংস্কারের প্রস্তাব সম্পর্কে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিষয়টি তার জানা নেই।
সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরে বিএনপিকে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গ ত্যাগ করতে প্রতিবেশী প্রভাবশালী দেশসহ পশ্চিমা গুরুত্বপূর্ণ দেশ ও দাতা সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে চাপ দেওয়া হচ্ছে। তাদের ধারণা, জামায়াতে ইসলামী জঙ্গিবাদ ও উগ্র মৌলবাদী রাজনীতির সঙ্গে জড়িত, বিশেষ করে পাকিস্তান ও মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠীর সঙ্গে গোপন সম্পর্ক রয়েছে তাদের।
বাংলাদেশে জঙ্গিগোষ্ঠীর তৎপরতার নেপথ্যে তাদের পৃষ্ঠপোষকতা রয়েছে। বিএনপির মতো একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জোটভুক্ত থাকায় দেশজুড়ে তাদের শিকড় বিস্তৃত করা সহজ হচ্ছে।বিএনপি নেতারা বলেন, বিদেশিরা তাদের জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগের পরামর্শ দিয়ে বলেছেন, অন্যথায় বিএনপির শুভাকাঙ্ক্ষী হিসেবে অবস্থান অটুট রাখা তাদের জন্য কঠিন হতে পারে।
সূত্র জানায়, ২০১২ সালে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বিরোধীদলীয় নেতা থাকা অবস্থায় ভারত সফরকালেও জামায়াতের ব্যাপারে আপত্তি জানিয়েছিল দেশটি তখন ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের প্রধান শিবশঙ্কর মেনন বিএনপি নেত্রীর সঙ্গে বৈঠককালে জামায়াতের ব্যাপারে কিছু গুরুতর অভিযোগ আনেন। তার দাবি, ভারতের শত্রু হিসেবে পাকিস্তানের যেসব জঙ্গি সংগঠন সক্রিয় রয়েছে, তাদের সঙ্গে বাংলাদেশের জামায়াতে ইসলামীর গোপন সম্পর্ক রয়েছে। জোটের প্রধান দল হিসেবে বিএনপিকে শরিক দল জামায়াতে ইসলামীর এ ধরনের কর্মকাণ্ড থেকে নিবৃত্ত করার আহ্বান জানানো হয়।