• রোববার , ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪

জামায়াতের নীলনক্সা ফাঁস


প্রকাশিত: ৯:৩০ পিএম, ১৫ মে ২৪ , বুধবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৬৬ বার

 

 

 

শফিক রহমান : কনডেম সেলে জামায়াত নেতাদের সুবিধা দিতে রিট দায়ের করা হয়েছিল বলে জানিয়েছেন খোদ অ্যাটর্নি জেনারেল। জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ নিয়ে এক আইনজীবী এই রিট দায়ের করে সুবিধা বাগিয়ে দিচ্ছিলেন । কিন্তু ঘটনাচক্রে সব ফাঁস হয়ে যায় জামায়াতের নীলনক্সা। নড়ে চড়ে বসেন অ্যাটর্নি জেনারেল অফিস।

সরেজমিনে জানা গেছে, মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আটক বা মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতাদের কনডেম সেলে সুবিধা দিতে রিট আবেদন করা হয়ে থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল আবু মোহাম্মদ (এ এম) আমিন উদ্দিন।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের কনডেম সেলে রাখা যাবে না মর্মে হাইকোর্টের দেওয়া রায় চেম্বার আদালতে স্থগিত হওয়ার পর নিজ কার্যালয়ে এক প্রতিক্রিয়ায় অ্যাটর্নি জেনারেল এ তথ্য জানান।
এসময় তিনি বলেন, রিটকারীদের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির নিজেও একজন জামায়াতের সমর্থক।

মৃত্যুদণ্ড চূড়ান্ত হওয়ার আগে আসামিদের কনডেম সেলে রাখা যাবে না- হাইকোর্টের দেওয়া এ রায় আগামী ২৫ আগস্ট পর্যন্ত স্থগিত করে বুধবার (১৫ মে) আপিল বিভাগের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিমের চেম্বার জজ আদালত আদেশ দেন। আদালতে আজ রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল আবু মোহাম্মদ (এ এম) আমিন উদ্দিন। রিটের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির।

এর আগে গত ১৩ মে মৃত্যুদণ্ডাদেশ চূড়ান্ত হওয়ার আগে আসামিকে নির্জন কারাবাসে (কনডেম সেল হিসেবে পরিচিত) রাখা যাবে না বলে রায় দেন হাইকোর্ট। আদালত বলেন, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিকে অন্য বন্দিদের মতোই দেখতে হবে। তবে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি বা অন্য বন্দিদের নিরাপত্তার স্বার্থে, সংক্রামক রোগ, স্বাস্থ্যগতসহ ব্যতিক্রম পরিস্থিতির কারণে তাকে কনডেম সেলে রাখতে পারবে কারা কর্তৃপক্ষ। এক্ষেত্রে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বন্দির বক্তব্য শুনতে হবে।

এক রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে হাইকোর্টের বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি মো. বজলুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ পর্যবেক্ষণ, নির্দেশনাসহ এ রায় দেন।বিচারিক ও প্রশাসনিক ফোরামের মাধ্যমে মৃত্যুদণ্ডাদেশ চূড়ান্ত হওয়ার আগে দণ্ডিত আসামিকে কনডেম সেলে রাখার বৈধতা নিয়ে ২০২১ সালে ওই রিট করেছিলেন বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত হয়ে কনডেম সেলে থাকা তিন আসামি।

রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০২২ সালের ৫ এপ্রিল হাইকোর্ট রুল দেন। বিচারিক ও প্রশাসনিক ফোরামে মৃত্যুদণ্ডাদেশ চূড়ান্ত হওয়ার আগে দণ্ডিতকে কনডেম সেলে রাখা কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, তা রুলে জানতে চাওয়া হয়। চূড়ান্ত শুনানি শেষে রুল নিষ্পত্তি করে পর্যবেক্ষণ-নির্দেশনাসহ রায় দেন আদালত।

রায়ের পর অ্যাটর্নি জেনারেল আবু মোহাম্মদ (এ এম) আমিন উদ্দিন বলেন, রায়ের বিষয়টি সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে। নির্দেশনা অনুসারে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তারই ধারাবাহিকতায় আলাপ-আলোচনা করে শেষ পর্ব আজ আপিল আবেদনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।

এদিকে কারা কর্তৃপক্ষের ২০২২ সালের নভেম্বরের এক প্রতিবেদনের তথ্য অনুসারে, দেশের কারাগারগুলোতে মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া ব্যক্তিদের জন্য ২ হাজার ৬৫৭টি সেল আছে। আর কনডেম সেলে ২ হাজার ১৬২ জন বন্দি আছেন। ফৌজদারি কোনো মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ে আসামির মৃত্যুদণ্ড হলে ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৭৪ ধারা অনুসারে তা কার্যকরে হাইকোর্টের অনুমোদন নিতে হয়। এটি ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন) হিসেবে পরিচিত। ফৌজদারি কার্যবিধির ৪১০ ধারা অনুসারে বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামি হাইকোর্টে আপিল করতে পারেন। হাইকোর্টে মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকলে এর বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আপিল করার সুযোগ আছে দণ্ডিতের।

সংবিধানের ১০৫ অনুচ্ছেদ অনুসারে আপিল বিভাগের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ (পুনর্বিবেচনা) আবেদন করার সুযোগ আছে। এ ছাড়া সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদ অনুসারে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে পারেন। ক্ষমার আবেদন রাষ্ট্রপতি যদি নামঞ্জুর করেন, তাহলে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরে আইনগত বৈধতা পায় বলে রিটে উল্লেখ করা হয়।

রিট আবেদনকারী তিন আসামির ক্ষেত্রে পৃথক মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ে মৃত্যুদণ্ড হয়েছে। এর বিরুদ্ধে তাদের করা আপিল ও ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে।

রায়ে হাইকোর্ট বলেছেন, দেখা যায় উচ্চ আদালতে ডেথ রেফারেন্স নিষ্পত্তির জন্য ছয় বছর অপেক্ষা করতে হয়। এর বিরুদ্ধে আপিল করা হলে সে ক্ষেত্রে শেষ হতে আরও আট বছর লেগে যায়। এরপর রিভিউ করা হলে তা নিষ্পত্তিতে দুই বছর লেগে যায়। এ হিসাবে চূড়ান্ত নিষ্পত্তির জন্য ১৫-২০ বছর অপেক্ষা করতে হয়।

দণ্ডিবিধির ৭৩ ও ৭৪ ধারা অনুসারে আসামিকে নির্জন কারাবাসে (কনডেম সেল হিসেবে পরিচিত) রাখা যায়। বিধান অনুসারে এই মেয়াদ ৩০ দিনের বেশি হবে না। এই ৩০ দিন মেয়াদে টানা ১৪ দিন এবং মাসে ৭ দিনের বেশি নির্জন কারাবাসে রাখা যাবে না। মৃত্যুদণ্ড চূড়ান্ত হওয়ার আগে দীর্ঘদিন নির্জন কারাবাসে রাখা দুবার সাজা প্রদানের শামিল।

মামলার বিচারপ্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রতার প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে আদালত বলেন, বিচারিক আদালতে হত্যা মামলার বিচার শেষ হতে ৫-৬ বছর লেগে যায়। সমাজের সচেতন নাগরিক ও সাংবাদিক সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্ত ১২ বছরেও শেষ হয়নি। এটা দীর্ঘসূত্রতার জ্বলন্ত একটি উদাহরণ।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামির জামিনের নজির দেখা যায় না উল্লেখ করে হাইকোর্ট রায়ে বলেছেন, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বন্দি জামিন আবেদন করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে ফৌজদারি কার্যবিধির ৪২৬ ধারা অনুসারে হাইকোর্ট বিভাগের জামিন আবেদন গ্রহণ করা উচিত।

তথ্য অধিকার আইন অনুসারে কারা কর্তৃপক্ষ মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বন্দির সংখ্যা এবং সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রি অফিস ডেথ রেফারেন্স মামলা, আসামির সাজা কমা ও খালাস বিষয়ে তথ্যাদি জানাতে বাধ্য বলে রায়ে এসেছে। ওই আইনে কেউ তথ্য চাইলে তা সরবরাহ করতে এবং সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে ও বার্ষিক প্রতিবেদনে প্রকাশ করতে বলা হয়েছে।