জাপায় জামাই-বউ লড়াই মন্ত্রীত্ব নিয়ে টানাপোড়েন!
এস এম খলিল বাবু, ঢাকা:
এক সপ্তাহ ধরে তীব্র দ্বন্দ্ব ও উত্তেজনার মধ্যেই জাতীয় পার্টির (জাপা) বিবদমান দুটি ধারার দুই শীর্ষ নেতা এইচ এম এরশাদ ও রওশন এরশাদ আজ রোববার মুখোমুখি হচ্ছেন।
সংসদীয় দলের প্রধান হিসেবে রওশন এরশাদ আজ জাপার সংসদীয় দলের সভা ডেকেছেন। এতে দলের চেয়ারম্যান এরশাদ আমন্ত্রণ পেয়েছেন। তিনি সভায় অংশ নেবেন বলে নিশ্চিত করেছেন দলের এরশাদপন্থী নেতারা। এর আগে গত ৩১ আগস্ট দলের সর্বশেষ সংসদীয় দলের বৈঠকে দুই নেতা একসঙ্গে বসেছিলেন।
রওশনপন্থী নেতা কাজী ফিরোজ রশীদকে সংসদে বিরোধীদলীয় উপনেতা করা না-করা নিয়ে জাপায় যে বিরোধ চলছে, আজকের সভায় তার একটা আপস-মীমাংসার চেষ্টা হবে বলে দলটির একাধিক সূত্র জানিয়েছে।
এ ছাড়া সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যপদ থেকে সদ্য বাদ পড়া রওশনপন্থী দুই নেতা মসিউর রহমান ও তাজুল ইসলাম চৌধুরীর প্রসঙ্গও আলোচনায় আসতে পারে। এঁদের অন্তত একজনের অব্যাহতির আদেশ যাতে কার্যকর করা না হয়, সে জন্য সাংসদদের পক্ষ থেকে দলীয় প্রধান এরশাদের কাছে অনুরোধ জানানো হতে পারে।
জাপার মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহম্মেদ বলেন, সংবিধানের ১৬তম সংশোধনীর লক্ষ্যে সংসদে যে বিল আনা হয়েছে, সে বিষয়ে জাতীয় পার্টির ভূমিকা কী হবে—তা আজকের সংসদীয় দলের সভায় আলোচনা হবে। এরপর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এর আগে ৩১ আগস্ট রওশন এরশাদের সভাপতিত্বে জাপার সংসদীয় দলের সর্বশেষ সভায় এরশাদসহ অধিকাংশ সাংসদ উপস্থিত ছিলেন। সভায় জাতীয় পার্টিকে সত্যিকার বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করা এবং এর জন্য মন্ত্রিসভা থেকে দলের তিন সদস্যের পদত্যাগের বিষয়ে আলোচনা হয়।
দলীয় সূত্রগুলো জানায়, মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করার কথা ওঠায় দলের এক মন্ত্রী ও দুই প্রতিমন্ত্রী ক্ষুব্ধ হন।
এর রেশ ধরে এসব মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে দলীয় প্রধানকে নিয়ে নানা ধরনের কথা বলেন।এরপর ৮ সেপ্টেম্বর জাপার সংসদীয় দলের সভা হয়েছে দাবি করে দলের রওশনপন্থী দুই নেতা স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী মসিউর রহমান ও বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ তাজুল ইসলাম কয়েকটি গণমাধ্যমকে বলেন, সভায় সর্বসম্মতভাবে কাজী ফিরোজকে উপনেতা নির্বাচন করা হয়েছে।
এরপর ফিরোজকে উপনেতা করতে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীকে একটি চিঠিও পাঠান রওশন এরশাদ।
এতে ক্ষুব্ধ হন এরশাদ। তিনি স্পিকারকে পাল্টা চিঠি দিয়ে এর বিরোধিতা করে জানান, ৮ সেপ্টেম্বর কোনো সভা হয়নি। এর রেশ ধরে মসিউর ও তাজুল আবারও এরশাদ সম্পর্কে অশালীন মন্তব্য করেন। এর জেরে গত বুধবার মসিউর ও তাজুলকে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যপদ থেকে অব্যাহতি দেন এরশাদ। একই সঙ্গে দুই নেতার নির্বাচনী এলাকা কুড়িগ্রাম ও রংপুরের কমিটিও ভেঙে দেওয়া হয়।
এ নিয়ে মসিউর ও তাজুল পরদিন বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদের লবিতে দলের মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহম্মেদের সঙ্গে অশোভন আচরণ ও তীব্র বাগ্বিতণ্ডায় জড়ান। এর প্রতিবাদে শুক্রবার এরশাদপন্থী নেতারা কাকরাইলে দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করেন। সমাবেশ থেকে মসিউর ও তাজুলকে প্রতিহত করার ঘোষণা দেওয়া হয়।
কুশপুত্তলিকায় আগুন:
মসিউর রহমান ও তাজুল ইসলামকে জাপা থেকে বহিষ্কারের দাবিতে গতকাল শনিবার বগুড়া জেলা জাতীয় পার্টির কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করেছে দলের ছাত্র সংগঠন জাতীয় ছাত্রসমাজ।
এরশাদের সম্পর্কে দুই নেতার বিরূপ মন্তব্যের প্রতিবাদে বগুড়া জেলা ছাত্রসমাজের আহ্বায়ক ফরহাদ আলীর সভাপতিত্বে এ সমাবেশ হয়। সমাবেশে মসিউর ও তাজুলের কুশপুত্তলিকা পোড়ানো হয়।