জাপাকে ২৬ আসনে ছাড়
বিশেষ প্রতিনিধি : দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে দীর্ঘ দিনের মিত্র জাতীয় পার্টিকে (জাপা) ২৬টি আসনে ছাড় দেবে আওয়ামী লীগ। তবে জাপা আরও অন্তত ১০টি আসনে ছাড় চেয়েছে। এতে ছাড়ের আসন সংখ্যা বেড়ে ৩০-৩৪টি হতে পারে বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে।
জাতীয় পার্টির (জাপা) সঙ্গে পাঁচ দফা বৈঠকের পর শনিবার (১৬ ডিসেম্বর) রুদ্ধদ্বার বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে আওয়ামী লীগ। রবিবার (১৭ ডিসেম্বর) মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন সামনে রেখে এ সিদ্ধান্ত এলো। ফলে এদিন (রবিবার) মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন শেষে ছাড় দেওয়া আসনের সংখ্যা নিশ্চিত হয়ে যাবে।এর আগে ১৪ দলের শরিক দলগুলোকে ৭টি আসনে ছাড় দেওয়ার কথা জানিয়েছে আওয়ামী লীগ। তবে দলগুলো আসন সংখ্যা বাড়াতে বিভিন্নভাবে আলোচনা চালিয়ে গেলেও আওয়ামী লীগের সাড়া মেলেনি বলে সূত্র জানিয়েছে।
তবে ছাড় দেওয়া আসনগুলোতে দলটির স্বতন্ত্র প্রার্থীরা নির্ভার জয়ের ক্ষেত্রে ‘গলার কাটা’ হওয়ায় সরিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছিল জাপা ও ১৪ দলের শরিকরা। কিন্তু তাতে কান না দিয়ে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের স্বার্থে তাদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জিতে আসতে বলেছে আওয়ামী লীগ। এ নিয়ে দলটির শরিক ও মিত্র দলগুলো অসন্তুষ্টির কথা জানিয়েছে।
আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির একাধিক সূত্র এমনটি জানালেও তারা নাম প্রকাশ করতে রাজি হননি। এমনকি আসন সমঝোতা নিয়ে শনিবার (১৫ ডিসেম্বর) রাতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে দুই দফা ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে বৈঠকে বসেছে দলটির নেতারা। তবে বৈঠক শেষে কোনও নেতা কথা বলেননি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বৈঠকে অংশ নেওয়া আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর একাধিক সদস্য দৈনিক সত্যকথা প্রতিদিন কে জানান, জাতীয় পার্টিকে ২৬টি আসনে ছাড় দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তারপর আরও ১০টি আসনে ছাড়ের বিষয়টি বিবেচনা করার জন্য আলোচনা চলছে। এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত যেকোনও সময় জানানো হবে। তবে ছাড় দেওয়া আসনগুলো থেকে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে না। শরিক ও মিত্ররা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জিতে আসুক।
কোন কোন আসনে জাতীয় পার্টিকে (জাপা) ছাড় দেওয়া হচ্ছে, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের দিন শেষে ছাড় দেওয়া আসনের সংখ্যা নিশ্চিত হয়ে যাবে। তবে বর্তমান একাদশ জাতীয় সংসদে থাকা জাপার কয়েকজন ছাড়া অন্য এমপিরা এবং আগের দুই সংসদে (২০০৮ ও ২০১৪) এমপি হওয়া কয়েকজন এবার নতুন করে ছাড়ের তালিকায় যুক্ত হচ্ছেন বলে জানিয়েছে সূত্র।
বর্তমানে জাতীয় পার্টির এমপি আছেন ঠাকুরগাঁও-৩ আসনে হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদ, নীলফামারী-৩ আসনে রানা মোহাম্মদ সোহেল, নীলফামারী-৪ আসনে আহসান আদেলুর রহমান, কুড়িগ্রাম-২ আসনে পনির উদ্দিন আহমেদ, গাইবান্ধা-১ আসনে শামীম হায়দার পাটোয়ারী, বগুড়া-২ আসনে শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ, বগুড়া-৩ আসনে নুরুল ইসলাম তালুকদার, বরিশাল-৩ আসনে গোলাম কিবরিয়া টিপু, বরিশাল-৬ আসনে নাসরীন জাহান রত্না, ময়মনসিংহ-৮ আসনে ফখরুল ইমাম, কিশোরগঞ্জ-৩ আসনে মুজিবুল হক চুন্নু, ঢাকা-৪ আসনে সৈয়দ আবু হোসেন, ঢাকা-৬ আসনে কাজী ফিরোজ রশীদ, নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনে লিয়াকত হোসেন খোকা, নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে এ কে এম সেলিম ওসমান, সুনামগঞ্জ-৪ আসনে পীর ফজলুর রহমান, ফেনী-৩ আসনে মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী, চট্টগ্রাম-৫ আসনে আনিসুল ইসলাম মাহমুদ।
এছড়া রংপুর-১ আসনে মশিউর রহমান রাঙা, লালমনিরহাট-৩ আসনে জিএম কাদের, রংপুর-৩ আসনে সাদ এরশাদ, পিরোজপুর-৩ আসনে রুস্তম আলী ফরাজী এবং ময়মনসিংহ-৪ আসনে রওশন এরশাদ। তবে এবার রংপুর-৩ আসনে প্রার্থী হয়েছেন জিএম কাদের। আর রওশন এরশাদ, মশিউর রহমান রাঙা, রুস্তম আলী ফরাজী ও সাদ এরশাদ এবার দলীয় মনোনয়ন পাননি। ফলে এসব আসনে জাতীয় পার্টি নতুন প্রার্থী দিয়েছে, তারা ছাড় পাচ্ছেন বলে জানা গেছে। এ ছাড়া আগের দুই সংসদে (২০০৮ ও ২০১৪) এমপি হওয়া কয়েকজন এবার নতুন করে ছাড়ের তালিকায় যুক্ত হচ্ছেন।
শনিবার (১৬ ডিসেম্বর) আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে প্রথম বৈঠকটি হয় বিকাল সাড়ে ৫টায়, যা চলে দেড় ঘণ্টার মতো। দ্বিতীয় বৈঠকটি শুরু হয় রাত পৌনে ৯টায়, আর শেষ হয় রাত সাড়ে ১০টায়। প্রথম বৈঠকে ওবায়দুল কাদের ছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক, মির্জা আজম অংশ নেন। দ্বিতীয় বৈঠকে ওবায়দুল কাদের, সালমান এফ রহমান, বিএম মোজাম্মেল হক, মির্জা আজমের সঙ্গে যুক্ত হন দলের দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ, কার্যনির্বাহী সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত ও উপ-দফতর সম্পাদক সায়েম খান।
তবে রুদ্ধদ্বার এই দুই বৈঠকের বিষয়ে কোনও নেতাই কথা বলতে রাজি হননি। দলীয় সূত্র জানায়, উভয় বৈঠকেই আলোচনার মূল বিষয় ছিল শরিক ও মিত্র দলগুলোর সঙ্গে আসন সমঝোতা। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগের নির্বাচনি কৌশলের অংশ হিসেবে ভোটে থাকা দলটির স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সরিয়ে নিতে শরিক ও মিত্র দলগুলোর অনুরোধের বিষয়েও আলোচনা হলেও সাড়া আসেনি।
এর আগে ১৪ দলের শরিক দলগুলোকে ৭টি আসনে ছাড় দেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানায় আওয়ামী লীগ। তা নিয়ে অসন্তোষ দেখা দেওয়ার মধ্যেই জাতীয় পার্টির (জাপা) সঙ্গে আসন সমঝোতা নিয়ে এ পর্যন্ত পাঁচ দফা বৈঠক হয়েছে। জাতীয় পার্টি ৪০টি আসনে ছাড় চাইলেও ২৬টির বেশি দিতে রাজি নয় আওয়ামী লীগ। এ নিয়ে চলে নানামুখী আলোচনা।
এর আগে মঙ্গলবার (১২ ডিসেম্বর) রাতে বনানীর একটি বাড়িতে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির নেতাদের মধ্যে সবশেষ বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। এতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম ও সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম অংশ নেন। তাদের সঙ্গে জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু প্রায় আড়াই ঘণ্টা বৈঠক করেন।
গত ৫ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে বৈঠক করেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের, কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু। পরদিন ৬ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় আবারও গণভবনে যান জিএম কাদের, আনিসুল ইসলাম মাহমুদসহ ছয় জন কো-চেয়ারম্যান ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু। ওই দিন আওয়ামী লীগের এক নেতার গুলশানের বাসায় দলটির হাফ ডজন নেতার সঙ্গে বৈঠক করেন জাতীয় পার্টির দুই নেতা। আওয়ামী লীগের সভাপতি ও দলটির নেতাদের সঙ্গে জাতীয় পার্টির নেতাদের এসব বৈঠক নিয়েও সরাসরি কিছু জানায়নি দল দুটি।
এদিকে মঙ্গলবার (১২ ডিসেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে নিজের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত কয়েকজন নেতাকে নিয়ে গণভবনে যান বিরোধী দলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ। এসময় সঙ্গে ছিলেন বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ মসিউর রহমান রাঙ্গা, রওশনের রাজনৈতিক সচিব গোলাম মসীহ, কাজী মামুনুর রশীদ, সাদ এরশাদ ও তার স্ত্রীসহ আরও কয়েকজন নেতা। এ সময় জিএম কাদেরের নেতৃত্বে নির্বাচনে আসা জাতীয় পার্টির সঙ্গে জোট গড়া বা আসন সমঝোতা না করতে আওয়ামী লীগের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন বলেও জানা যায়।এর আগে গত ১৯ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন রওশন এরশাদ।