জাপাকে ডুবিয়েছে-জিএম কাদের চুন্নু-পদত্যাগে ৪৮ ঘন্টার আলটিমেটাম
পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের গত চার বছরে তার সাংগঠনিক দুর্বলতা ও রাজনৈতিক অদূরদর্শিতার কারণে জাতীয় পার্টিকে ধ্বংসের শেষ প্রান্তে নিয়ে গেছেন। তারই প্রতিফলন ঘটেছে এই নির্বাচনে।
স্টাফ রিপোর্টার : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির ভরাডুবির জন্য দলটির চেয়ারম্যান ও মহাসচিবকে দায়ী করে বিক্ষোভ করেছেন দলের শীর্ষ ও তৃণমূল নেতারা। নির্বাচনে দলের শোচনীয় অবস্থার জন্য পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুকে দায়ী করে তাদের পদত্যাগও দাবি করেছেন নেতাকর্মীরা।বুধবার বনানীতে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ ও লিখিত বক্তব্য পাঠ করা হয়। এ সময় আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তাদের পদত্যাগে বাধ্য করার কথাও বলা হয়।
জাতীয় নির্বাচন থেকে সরে আসতে বাধ্য হওয়া প্রার্থীদের পক্ষে জাতীয় পার্টি অতিরিক্ত মহাসচিব সাহিদুর রহমান টেপা লিখিত বক্তব্যে বলেন, দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে জাতীয় পার্টির চরম ভরাডুবি হয়েছে। পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের গত চার বছরে তার সাংগঠনিক দুর্বলতা ও রাজনৈতিক অদূরদর্শিতার কারণে জাতীয় পার্টিকে ধ্বংসের শেষ প্রান্তে নিয়ে গেছেন। তারই প্রতিফলন ঘটেছে এই নির্বাচনে। পার্টির প্রার্থীদের সঙ্গে চরম বিশ্বাসঘাতকতা, প্রতারণা করা এবং তাদের একপ্রকার পথে বসিয়ে দেওয়ার জন্য পার্টির দুই শতাধিক প্রার্থী নির্বাচন বর্জন করেছেন।
তিনি আরও বলেন, সরকারের কাছে ধরনা দিয়ে ২৬টি আসনে সমঝোতা করে সেখানেও ভরাডুবি হয়েছে। আমরা আশা করেছিলাম, জাতীয় পার্টিকে এতটা বিপর্যয়ের মধ্যে ফেলে দেওয়া এবং নির্বাচনে ভরাডুবির দায়িত্ব নিয়ে পার্টির চেয়ারম্যান এবং মহাসচিব পদত্যাগ করে তাদের সম্মান রক্ষা করবেন। কিন্তু সে বোধোদয়ও তাদের হয়নি। আমরা পার্টির সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের মনোভাব জানতে পেরেছি। তারা পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুকে তাদের পদ থেকে অপসারণ দেখতে চান। নির্বাচনে যাওয়া নিয়ে নাটকীয়তা, আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন ভাগ নিয়ে দেনদরবার করে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ২৬টি আসনে ছাড় পেয়েছিলো জি এম কাদেরের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি (জাপা)। কিন্তু জিততে পেরেছে মাত্র ১১টিতে।
নির্বাচিতরা হলেন- দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদের (রংপুর-৩), মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু (কিশোরগঞ্চ-৩), কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ (চট্টগ্রাম-৫), এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার (পটুয়াখালী-১), প্রেসিডিয়াম সদস্য মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী (ফেনী-৩), হাফিজ উদ্দিন আহমেদ (ঠাকুরগাঁও-৩), গোলাম কিবরিয়া (বরিশাল-৩), এ কে এম সেলিম ওসমান (নারায়ণগঞ্জ-৫), মো. আশরাফুজ্জামান (সাতক্ষীরা-২), এ কে এম মোস্তাফিজুর রহমান (কুড়িগ্রাম-১) ও শরিফুল ইসলাম (বগুড়া-২) । এদের মধ্যে রুহুল আমিন হাওলাদার ও আশরাফুজ্জামান ছাড়া বাকিরা বর্তমান সংসদের সংসদ সদস্য হিসেবে আছেন।
একাদশ সংসদে দলটির ২৩ জন সংসদ সদস্য ছিলেন। আর সংরক্ষিত নারী আসনে ছিলেন চারজন।বুধবার সংসদ ভবনে নতিুন নির্বাচিত ১১ জন শপথ নেন। যদিও মঙ্গলবার এ নিয়েও নাটকীয়তার জন্ম দেয় দলটি। একবার বলেছিলো তারা বুধবার শপথ নেবেন না। পরে আবার সিদ্ধান্ত বদলায় দলটি।
শপথ নেওয়া পর দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের কাছে পার্টি অফিসে নেতৃত্বের ব্যর্থতা নিয়ে বিক্ষোভ প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, এগুলো সাজানো জিনিস। কিছু লোক আমাদের পার্টিকে প্রশ্নবিদ্ধ করার অথবা ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার চেস্টা করছে। যেটা করা হয়েছে সকলের সাথে আলোচনা করে করা হয়েছে।
বনানীতে দলীয় চেয়ারম্যানের কার্যপালয়ের সামনে সাহিদুর রহমান টেপা বলেন, জাতীয় পার্টিকে রক্ষা করা এবং পার্টির ঐক্য বজায় রাখার জন্য আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে জি এম কাদের ও মুজিবুল হক চুন্নুকে তাদের পদ থেকে পদত্যাগ করতে হবে। সকালে বনানী কার্যালয়ে দলটির চেয়ারম্যান ও মহাসচিবের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যেই বিক্ষোভে নামেন পরাজিত সংসদ সদস্য ও তাদের নেতাকর্মীরা। সকাল থেকেই বনানীতে বাড়ছিলো নেতা-কর্মীদের ভিড়। সম্ভাব্য পরিস্থিতি মোকাবেলায় বাড়ানো হয় পুলিশের সংখ্যা।
এক সময় নেতাকর্মীদের দলীয় কার্যালয়ে ঢুকতে বাধা দেয় পুলিশ। পরে জোর করেই ভেতরে ঢুকে পড়েন নেতা-কর্মীরা। সমালোচনা করেন চেয়ারম্যান ও মহাসচিবের।দলের কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা বলেন, নির্বাচনের নামে দলকে ধ্বংস করা হয়েছে। তৃণমূলের সাথে আলোচনা করেই তারা পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন।
পরিস্থিতি টের পেয়ে দলটির চেয়ারম্যান ও মহাসচিব এখনও বনানী অফিসে আসেননি। শপথ নিতে সকালে বনানী অফিসে নতুন এমপিদের নিয়ে বৈঠক করার কথা থাকলেও, তা হয়নি। সংসদে বিরোধী দলের উপনেতার কক্ষে বৈঠক করে শপথ নেন তারা।
বনানী থানার ওসি কাজী সাহান হক বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে জাতীয় পার্টির বনানী কার্যালয়ে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।