জাতীয় গ্রিডের সমস্যা-সারা দেশে বিদ্যুত বিপর্যয়
শফিক আজিজি.ঢাকা: সারা দেশে বিদ্যুত বিপর্যয়ে গতকাল নগরবাসির দূর্ভোগ ছিল চরমে।রাত সাড়ে ১১টায় পর্যন্ত ঢাকা মহানগরীর বেশিরভাগ এলাকা ছিল অন্ধকারে। তবে জাতীয় গ্রিডের সমস্যার কারণে এখনো প্রায় পুরো দেশ বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন।বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য সার্বিকভাবে চেষ্টা চালানো হচ্ছে।
রাজধানীর মতিঝিল, উত্তরা, মোহাম্মদপুর এলাকায় বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা রাতে বলেছেন, রাত ১২টা নাগাদ রাজধানী ঢাকার অধিকাংশ এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হবে।
জাতীয় গ্রিডে কারিগরি সমস্যার কারণে আজ শনিবার বেলা ১১টা ২৭ মিনিটে সারা দেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। গ্রিডের এই সমস্যার প্রতিক্রিয়ায় বন্ধ হয়ে যায় দেশের সব কয়টি বিদ্যুৎকেন্দ্র। গ্রিডের সমস্যা এখনো শনাক্ত করা যায়নি।
এজন্য বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আহমেদ কায়কাউসকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
আজ শনিবার দেশে বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা ছয় হাজার ৬০০ মেগাওয়াট। বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের পর ১১টা ৪৫ মিনিটের দিকে কাপ্তাই বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু করা হয়। কিন্তু ১২টার দিকে সেটি বন্ধ হয়ে যায়। এরপর পর্যায়ক্রমে ময়মনসিংহের শম্ভুগঞ্জে ৭০ মেগাওয়াট, সিলেটে ভাড়াভিত্তিক ২০ মেগাওয়াট ও কাপ্তাইসহ কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু করা হয়।
বিকেল চারটার দিকে বিদ্যুতের উৎপাদন প্রায় ৫০০ মেগাওয়াটে পৌঁছে। কিন্তু সোয়া চারটার দিকে জাতীয় গ্রিড আবার বন্ধ হয়ে যায়। সে সময় কাপ্তাই বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র ছাড়া অন্য সবগুলো বন্ধ হয়ে যায়।
এরপর আবার বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো পর্যায়ক্রমে চালু করার প্রক্রিয়া শুরু করা হয়। রাত আটটা পর্যন্ত বিদ্যুতের উৎপাদন প্রায় ৭০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়।
আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক, ভৈরব ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি জানান, জাতীয় গ্রিডের বিপর্যয়ের কারণে দেশের বৃহত্তম আশুগঞ্জ বিদ্যুৎকেন্দ্রের চালু নয়টি ইউনিটের উৎপাদন একযোগে বন্ধ হয়ে গেছে।
এতে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহে বিপর্যয় দেখা দেয়। এ বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে নয়টি ইউনিটে প্রায় এক হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ। এ কারণে ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কিশোরগঞ্জ, হবিগঞ্জ, নরসিংদী, ঢাকাসহ আশপাশের কয়েকটি জেলায় বিদ্যুৎ বিতরণ বন্ধ রয়েছে।
বিদ্যুৎকেন্দ্রের কারিগরি বিভাগের পরিচালক সাজ্জাদুর রহমান জানান, ভেড়ামারা বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রের ত্রুটির কারণে জাতীয় গ্রিডে বিপর্যয় দেখা দেয়। দুপুর পৌনে একটায় আশুগঞ্জ বিদ্যুৎকেন্দ্রের ছয়টি ও রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের তিনটি ইউনিটের উৎপাদন একযোগে বন্ধ হয়ে যায়।
জাতীয় গ্রিডে প্রায় এক হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। তিনি জানান, জাতীয় গ্রিডের ত্রুটি সারাতে নিজস্ব প্রকৌশলীরা কাজ করছেন। তবে কখন সবকটি ইউনিট চালু হবে, তা তিনি নিশ্চিত করে বলতে পারেননি।
বাংলাদেশ-ভারত সঞ্চালন লাইনের ভেড়ামারা গ্রিডের ব্যবস্থাপক আলমগীর হোসেন বলেন, পাওয়ার গ্রিডের কোথাও সমস্যা হয়েছে। তবে সেটা ভেড়ামারায় কিনা, এখন পর্যন্ত তা নিশ্চিত না।
এ ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে ভারত থেকে আমদানি করা বিদ্যুতের সরবরাহ তারা ১১টা ২৭ মিনিটে বন্ধ করে দেন। তখন ভারত থেকে বাংলাদেশে ৪৩৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আসছিল। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত সেখান থেকে বিদ্যুৎ আসবে না।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আজ বেলা ১১টা থেকে বেলা তিনটার পর্যন্ত বিদ্যুৎ ছিল না। এ সময় বিদ্যুতের অভাবে একটি অস্ত্রোপচার কক্ষে অস্ত্রোপচার হয়নি। বাকি অস্ত্রোপচার কক্ষগুলোতে জেনারেটরের বিদ্যুৎ দিয়ে অস্ত্রোপচার সম্পন্ন করা হয়।