জমে উঠছে অনলাইনে ঈদ কেনাকাটা-এবার অর্ডার দ্বিগুণ গতবারের চেয়ে
আসমা খন্দকার : ঈদ উপলক্ষে অনলাইনে কেনাকাটা জমে ঊঠছে। এবারের ঈদ বাজারে অনলাইনে বিক্রির দ্বিগুণ অর্ডার পাওয়া যাচ্ছে বলে বিক্রেতারা জানিয়েছে। প্রতিদিনই বাড়ছে অনলাইন ক্রেতার সংখ্যা। কর্মব্যস্ত নগর জীবনে যানজট এড়িয়ে ঘরে বসেই কেনাকাটার প্রতি ঝুঁকছে নগরবাসী।নগরীতে শিশু, কিশোর, তরুণ-তরুণী, বৃদ্ধসহ সব বয়সী মানুষের চাহিদা মতো পণ্যের পসরা সাজিয়েছে অনলাইন বিপণি বিতানগুলো।
এবার ঢাকা ও চট্টগ্রামের বাইরের জেলাগুলোতেও অনলাইনে ঈদের কেনাকাটা হচ্ছে। গত বছরের ঈদুল ফিতরের তুলনায় এ বছর অনলাইনে কেনাকাটা প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।
দেশের নামী-দামী প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব ওয়েবসাইটের পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের মাধ্যমেও বেচাকেনা হচ্ছে বিভিন্ন পণ্য।
বিক্রয়ডটকম, এখনই ডটকম, আজকের ডিল, বাংলাদেশ ব্র্যান্ডশপ, ই-সুফিয়ানা, বিপণি ডটকম, উপহারবিডি, বাজারি ডটকম, ভাইপার প্রভৃতি মিলে প্রায় এক হাজার অনলাইন শপিং ওয়েবসাইট আছে। এসব অনলাইন বিপণি বিতানে রোজার শুরু থেকে ঈদ কালেকশনে পোশাকের ডিসপ্লে দেওয়া হয়।
‘বিক্রয়ডটকম’ বিপণন ব্যবস্থাপক ইশিতা শারমীন বলেন, সাধারণত ঈদের সময় হাল ফ্যাশনের পোশাকের চাহিদা বেশি থাকে। এই বিষয়টি মাথায় রেখে আমরা পণ্যের পসরা সাজায়। এর বাইরে মেয়েদের জুয়েলারি আইটেমও বিক্রি হয়। এ বছর ঈদে গতবছরের তুলনায় অনলাইনে কেনাকাটা উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বেড়েছে বলে তিনি জানান।
‘এখনই ডটকম’-এর সিইও ফাহিম মাশরুর বললেন, মুলত ১৫ রোজার পর থেকে অনলাইনে ঈদের কেনাকাটা জমতে শুরু করে। এবার আমরা ঢাকার বাইরের জেলাগুলো থেকেও অর্ডার পাচ্ছি। আশা করছি চলতি বছর অনলাইন বিকিকিনিতে নতুন রেকর্ড হবে।
আজকের ডিল দেশী ই-কমার্স সাইটগুলোর মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছে। এই ঈদে শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ, পাঞ্জাবি, জুতা ও শিশুদের পোশাকসহ হাজারের মতো পণ্যের পসরা রয়েছে এই ই-শপটিতে।
তারাও অর্ডার অন্যবারের তুলনায় বেশি পেয়েছে।
কথা হয় প্রতিষ্ঠানটির বিপণন ব্যবস্থাপক মশিউর রহমানের সঙ্গে। তিনি জানান, এবার ঈদে তারা প্রতিদিন ৫০০ থেকে ৬০০ অর্ডার পাচ্ছেন, যা গতবছরের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ। এবার শাড়ি, পাঞ্জাবি, শার্ট ও টি-শার্টের অর্ডার বেশি পাওয়া যাচ্ছে বলে তিনি জানান।বিপণি ডটকম শপটির সিইও এএইচ আহসানুল আলম জানান, ঈদে তাদের অর্ডার দ্বিগুণ বেড়েছে। ঈদ উপলক্ষে তারা কিছু মুল্য ছাড়ও দিচ্ছে বলে জানান।
ই-কমার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি রাজীব আহমেদ বলেন, এবার ঈদে অনলাইনে কেনাকাটা যে বেড়েছে, তার বড় প্রমাণ হলো কুরিয়ার সার্ভিসগুলোর ব্যস্ততা বৃদ্ধি এবং ফেসবুকে ই-শপ প্রতিষ্ঠানসমূহের বিজ্ঞাপনের প্রাচুর্য্য দেখে। অনলাইনে কেনাকাটা এখন স্বাভাবিক ব্যাপার হয়ে গেছে বলে তিনি মনে করেন।
তিনি বলেন, এবার ঈদে সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো দেশের ৬৪টি জেলা থেকে অনলাইনে পণ্যের অর্ডার পাওয়া যাচ্ছে। অথচ গতবছর পর্যন্ত ঢাকা-চট্টগ্রামের বাইরে অনলাইনে বিকিকিনি ছিল না। এ থেকে স্পষ্ট হচ্ছে- আগামী বছর ঈদে দেশব্যাপী অনলাইন শপিং সামগ্রিক বাণিজ্যে নতুন মাত্রা যোগ করবে।
রাজীব আহমেদ বলেন, অনলাইনে কি পারমাণ কেনাকাটা হচ্ছে- তার সঠিক হিসাব পাওয়া মুশকিল। কেননা বড় বড় ই-শপের বাইরে ছোট ছোট অগণিত ই-শপ রয়েছে। তারাও পণ্য বিক্রি করছে। তবে বড় ই-শপগুলোর পণ্যের অর্ডার দেখে স্পষ্টত বুঝা যায়, গত বছরের তুলনায় এবার ঈদে অনলাইনে কেনাকাটা উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বেড়েছে।
তিনি জানান, অনলাইন পোর্টাল থেকে এখন প্রবাসী বাংলাদেশিরাও কেনাকাটা করেন। এবারে ঈদে এ কেনাকাটা আরো বেড়েছে।রাজীব আহমেদ বলেন, অনলাইন কেনাকাটায় প্রতারণা এড়াতে পণ্য ডেলিভারি দেওয়ার পর টাকা পরিশোধের ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। ডিজিটাল বাংলাদেশের বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে প্রচারণা জোরদার করলে অনলাইন শপিং আরো দ্রুত সম্প্রসারণ হবে বলে তিনি মনে করেন।
প্রসঙ্গত, অনলাইনে সাধারণত দুইভাবে বেচাকেনা হয়। কিছু কিছু ওয়েবপোর্টালে পণ্যের ছবি, দাম ও যোগাযোগের নম্বরসহ বিস্তারিত তথ্য দেয়া থাকে। আগ্রহী ক্রেতারা সেই বিজ্ঞাপন দেখে বিক্রেতার সাথে যোগাযোগ করেন। আবার কিছু কিছু ওয়েবপোর্টাল রয়েছে, যেখানে তারা নিজেরাই পণ্য বিক্রি ও সরবরাহ করেন। এক্ষেত্রে ক্রেতার কাজ শুধু পণ্য পছন্দ করে অনলাইনে অর্ডার দেয়া। পরবর্তীতে ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ডের মাধ্যমে অনলাইনে পণ্যের মূল্য পরিশোধ করতে পারেন।