জব্বারের বলী খেলায় চ্যাম্পিয়ন দিদার বলির শক্তির উৎস কি?
চট্টগ্রাম থেকে প্রদীপ শীল : জব্বারের বলী খেলায় ফের চ্যাম্পিয়ন দিদার বলির শক্তি-মত্তার উৎস কি? এনিয়ে নানা কৌতুহল দেশবাসীর। দিদার বলি কি খেয়ে নিজের শক্তিমত্তা ধরে রেখেছেন তা নিয়ে মানুষের কল্পনার শেষ নেই! আজ মঙ্গলবার ১৩ বার চ্যাম্পিয়ন হওয়া দিদার বলি’র সঙ্গে কথা হয় অনলাইন দৈনিক জাতিরকন্ঠ পত্রিকার। তিনি জানালেন তার শক্তিমত্তার গোপন কথা।
জানা গেছে, চট্টগ্রামের শত বছরের ঐতিহ্যবাহী জব্বারের বলী খেলায় ১৫ বার অংশ নিয়ে ১৩ বারই চ্যাম্পিয়ন হওয়ার অন্যন্য রেকর্ড গড়েছেন তিনি! মঙ্গলবার বন্দর নগরী চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক লালদীঘি ময়দানে উখিয়ার শামসু বলীকে ১৭ মিনিটেই ধরাশায়ী করে আবারও চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেন দিদার।
জব্বারের বলী খেলার এবারের ১০৮তম আসরে চ্যাম্পিয়ন হতে তেমন বেগ পেতে হয়নি তাকে। শামসু বলী তাকে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলতে পারেননি। বরং চ্যাম্পিয়ন বাউটে একচেঁটিয়া প্রাধান্য বিস্তার করে শিরোপা মুকুট পড়েছেন দিদার বলী। জব্বারের বলী খেলায় চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সুবাদে এবার নগদ ২০ হাজার টাকা প্রাইজমানি ও চ্যাম্পিয়ন ট্রফি পেয়েছেন তিনি।
এবারের পহেলা বৈশাখেও শামসু বলীর সঙ্গে শাহাবুদ্দীনের বলী খেলার চ্যাম্পিয়ন বাউটে লড়েছিলেন দিদার বলী। চট্টগ্রামের সিআরবি সাত রাস্তার মোড় শিরীষ তলায় ওই চ্যাম্পিয়ন বাউটে অনায়সেই শামসুকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হন দিদার। মাত্র এক মিনিটেই শামসু বলীকে হারিয়ে দিয়ে চ্যাম্পিয়ন হন চট্টলাবাসীর কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠা দিদার বলী।
দিদার বলি জানান, সারা বছর নিজ এলাকার বলীদের সঙ্গে প্র্যাকটিস করেন দিদার বলী। শুধু তাই নয়, নিয়মিত ব্যায়াম ও উন্নতমানের খাবার খান তিনি। এ জন্য মাসে প্রায় ৫০ হাজার টাকা খরচ হয় তার! খাবার মেন্যুতে গরু ও ছাগলের মাংস বাদ। তবে নিয়মিত খান তিনি মুরগীর মাংস, দুধ, ডিম, ছোলা আর সবজি। আর এভাবেই সুশৃংখল জীবন যাপন করে চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী জব্বারের বলী খেলার অঘোষিত সম্রাট হয়েছেন দিদার।
গতবারও এই জব্বারের বলী খেলার ১০৭তম আসরে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার দারুণ সম্ভাবনা তৈরি করেছিলেন দিদার বলী। গতবার এই দুই বলী টানা ২৫ মিনিট লড়াই করেন। তারপরও কেউ কাউকে হারাতে না পারলে বিচারকরা দু’জনকে ১০ মিনিট সময় বেধে দেন। ওই ১০ মিনিটে দিদার বলী কয়েক দফা ফাউল করলে শামসু বলীকে চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করা হয়।
গতবারই দিদার বলী ঘোষণা দিয়েছিলেন এবারের আসরে অংশ নেয়ার পর অবসর নেবেন তিনি। তাই পূর্বের ঘোষণা অনুযায়ী অবসরের আগে এবার চ্যাম্পিয়ন হয়েই জব্বারের বলী খেলা ছাড়লেন দিদার। এবারের আসরে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর উচ্ছ্বসিত দিদার বলী নিজের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, চ্যাম্পিয়ন হওয়ার আশা নিয়েই সারা বছর নিজ এলাকার বলীদের সঙ্গে প্র্যাকটিস করি।
নিয়মিত ব্যায়াম করি। কক্সবাজার ও রামুতে আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সেখান থেকে যে টাকা-পয়সা পাই, তা দিয়ে নিয়মিত মুরগীর মাংস, ডিম, দুধ ও ছোলাসহ উন্নত মানের খাবার খাই। এ কারণেই জব্বারের বলী খেলায় চ্যাম্পিয়নশিপ ধরে রাখতে পেরেছি।
তিনি বলেন, আমি ২০০১ সাল থেকে এই বলী খেলায় অংশ নিচ্ছি।
মাঝখানে অসুস্থ ও নিষেধাজ্ঞা থাকায় খেলতে পারিনি। এ পর্যন্ত ১৫ বার এই জব্বারের বলী খেলায় অংশ নিয়ে ১৩ বার চ্যাম্পিয়ন হয়েছি। এরমধ্যে হ্যাটট্রিকসহ সাতবার এককভাবে চ্যাম্পিয়ন আর বাকি ছয়বার মর্ম সিং বলীর সঙ্গে যৌথভাবে চ্যাম্পিয়ন হয়েছি।
১৯০৯ সালে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে লড়তে দেশের তরুণ যুবকদের শারীরিকভাবে তৈরি করতে চট্টগ্রামের বদরপাতি এলাকার বাসিন্দা আবদুল জব্বার এই বলী খেলার প্রচলন করেছিলেন। ধারাবাহিকভাবে শত বছর পেরিয়ে বর্তমানে দেশের সর্বশ্রেষ্ঠ ঐতিহ্যবাহী লোকজ উৎসবেই শুধু পরিণত হয়নি জব্বারের এই বলী খেলা, ঠাঁই করে নিয়েছে ইতিহাসেও।
এরই ধারাবাহিকতায় বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে মঙ্গলবার রবির পৃষ্ঠপোষকতায় নগরীর ঐতিহাসিক লালদীঘির ময়দানে ঐতিহ্যবাহী জব্বারের বলী খেলার এই ১০৮ তম আসরের আয়োজন করা হয়। এবারের বলী খেলায় দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে শতাধিক বলী অংশ নেন। সাধারণ, চ্যালেঞ্জিং ও চ্যাম্পিয়ন- এই তিনটি বাউটে অংশ নেন বলীরা। বিকেল চারটায় এবারের বলী খেলার উদ্বোধন করেন চট্টগ্রাম সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন।
এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মাসুদ উল হাসান ও রবির ডিরেক্টর নাজির আহমদ। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন এই বলী খেলা ও মেলা কমিটির সভাপতি কাউন্সিলর জহুরলাল হাজারী এবং সাধারণ সম্পাদক ও আব্দুল জব্বারের নাতি শওকতুল আনোয়ার বাদল প্রমুখ।