জনতার প্রতিশোধ বনাম নিরব প্রতিশোধ-রায় মিলবে ২৮ এপ্রিল
আসমা খন্দকার.ঢাকা: জনতার প্রতিশোধ বনাম নিরব প্রতিশোধ-রায় মিলবে ২৮ এপ্রিল।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যদি দেশের মানুষ প্রতিশোধ নেয় তিনি কোথায় যাবেন? অন্যদিকে খালেদা জিয়া বলেছেন, তিন সিটি নির্বাচনে নিরব প্রতিশোধ নেয়ার।বল এখন সাধারন মানুষের কোর্টে।রায় মিলবে ২৮ এপ্রিল।দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ‘প্রতিশোধ’ নেওয়ার কথা বলছেন বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি প্রশ্ন তুলে বলেন, ভাবমূর্তি নষ্ট করার কারণে যদি দেশের মানুষ ‘প্রতিশোধ’ নেয় তিনি কোথায় যাবেন, সেটা তাঁর ভেবে দেখা উচিত।
ইন্দোনেশিয়া সফর নিয়ে গণভবনে আজ রোববার বিকেলে সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ মন্তব্য করেন। সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা ৫ জানুয়ারির নির্বাচন পরবর্তী পেট্রলবোমায় মানুষ মারা, সিটি করপোরেশন নির্বাচন, খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলা, ভূমিকম্প এবং দেশের রাজনীতি নিয়ে কথা বলেন। তবে ইন্দোনেশিয়া সফর নিয়ে সংবাদ সম্মেলন হলেও একজন সাংবাদিক ছাড়া কেউ এ নিয়ে কোনো প্রশ্ন করেননি। সবার প্রশ্ন ছিল চলমান রাজনৈতিক অবস্থা, সিটি নির্বাচন, ৫ জানুয়ারির পর আন্দোলন প্রভৃতি নিয়ে।
এর আগে এক সংবাদ সম্মেলনে ২৮ এপ্রিল তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ঢাকা ও চট্টগ্রামবাসীকে ‘নীরব প্রতিশোধ’ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এ ব্যাপারে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপির সভাপতি অমিত শাহের ফোনালাপ ও কংগ্রেসম্যানের সই নকল করে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করেছে বিএনপি। সজীব ওয়াজেদ জয়কে ‘হত্যা’ ও ‘ক্ষতির’ জন্য যুক্তরাষ্ট্রের এফবিআইকে ঘুষ দিয়েছে বিএনপি নেতা, এটা ওই দেশে প্রমাণিত হয়েছে।
৫ জানুয়ারির নির্বাচনের এক বছর পূর্তিতে পেট্রলবোমা মেরে ও বাসে আগুন দিয়ে তারা মানুষ মেরেছে। বোমা মারতে গিয়ে তাদের দলের নেতা-কর্মীরা সাধারণ মানুষের হাতে গণধোলাই খেয়েছে। বোমা বানাতে গিয়ে বিএনপির নেতা-কর্মীরা আহত হয়েছে। দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করেও উনি (খালেদা জিয়া) ‘প্রতিশোধ’ নেওয়ার কথা বলছেন। এর প্রতিশোধ যদি জনগণ নেয়, তিনি কোথায় যাবেন তাও ভেবে দেখা উচিত।
সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়া বলেন, সিটি নির্বাচনে কেউ টাকা দিলে নেবেন, তবে ভোট দেবেন অন্য জায়গায়। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অর্থ নেওয়াটা উনি (খালেদা জিয়া) ভালো বোঝেন, অর্থ নেওয়া ও বেইমানি করা তাদের স্বভাব। বিএনপি যখনই ক্ষমতায় এসেছে তখনই দেশকে ‘নরক’ বানিয়েছে।
খালেদার সম্মেলনে ‘মিথ্যার ফুলঝুরি’
খালেদা জিয়া সংবাদ সম্মেলনে ‘মিথ্যার ফুলঝুরি’ দিয়ে গেছেন বলে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘কাজে ছিলাম তাই খালেদা জিয়ার পুরা বক্তব্য শুনতে পারি নাই, একটু শুনেছি। আমরা বিশ্বের কাছে বাংলাদেশকে রোল মডেল করেছি। ২০০১ সালে খালেদা জিয়া যখন সরকারে ছিল, তখন মানুষ হত্যা ও রেপ হয়েছে। অপারেশন ক্লিন হার্টের মাধ্যমে মানুষ হত্যা করেছে। তখন দুর্নীতি ও জঙ্গিবাদের দেশ হয়েছিল বাংলাদেশ। অথচ খালেদা জিয়া এখন সংবাদ সম্মেলনে মিথ্যার ফুলঝুরি দিয়ে যাচ্ছেন।’
‘হরতাল-অবরোধের নামে মানুষ খুন করবেন উনি (খালেদা জিয়া) আর এর দায়-দায়িত্ব সরকারের
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলনের সময় পেট্রলবোমায় মানুষ নিহতের দায় সরকারের-খালেদা জিয়ার এ দাবির সম্পর্কে সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘হরতাল-অবরোধের নামে মানুষ খুন করবেন উনি (খালেদা জিয়া) আর এর দায়-দায়িত্ব সরকারের? পেট্রল-বোমাবাজদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, তাদের ইন্ধনদাতাদেরও ধরা হবে।’ তিনি সিটি নির্বাচনে বিএনপি-সমর্থিত প্রার্থীর বাস মার্কা সম্পর্কে বলেন, ‘যে বাসে বোমা মেরে মানুষকে পোড়ালেন তিনি সেই বাস মার্কায় ভোট চান কি করে। হুকুমের আসামি হিসেবে অবশ্যই তার বিচার হবে।’
৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে সমঝোতার জন্য খালেদা জিয়াকে করা ফোনের প্রসঙ্গে তুলে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ফোন করে মুখ ঝামটা আর যে ঝাড়ি খেয়েছি জীবনে আর কোনো দিন খাইনি। তিন ঘণ্টা আগে তাঁকে ফোন করে সময় নেওয়া হয়েছিল।’ আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুর পর খালেদা জিয়াকে সহানুভূতি জানাতে তার কার্যালয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সহানুভূতি জানাতে গেলাম, দরজা বন্ধ করে আমাকে ঢুকতে পর্যন্ত দিল না।’
খালেদার নিরাপত্তাকর্মীরা হামলা চালায়
রাজধানীর কারওয়ান বাজারে খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলা প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘হরতালের ক্ষতির কারণে কালো পতাকা নিয়ে ব্যবসায়ীরা কেউ দাঁড়ালে আপনি একে বলবেন ব্যবসায়ীরা প্ল্যাকার্ড দেখাল কেন? এর জন্য খালেদা জিয়ার নিরাপত্তাকর্মীরা অস্ত্র হাতে হামলা চালাল। তখনই সেখানে থাকা অন্যরা হামলা চালিয়েছে।’
তবে কারওয়ান বাজারে খালেদার জিয়ার গাড়িবহরে ‘জয় বাংলা’ বলে হামলার ঘটনা ঘটে।
এদিকে রাজধানীর বাংলামোটরে খালেদা জিয়ার গাড়িবহরের নিচে চাপা পড়ে একজন পথচারী আহত হওয়াসহ কয়েকটি ছবি দেখিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এ ঘটনার পর কেউ এ খবর তো ছাপেন নাই। আপনারা শত শত ছবি তোলেন, কিন্তু এ সব ছবি তো প্রচার করেন নাই।’
গণমাধ্যম স্বাধীনভাবে কাজ করতে না পারার ঘটনা ঘটেছে কি?
বেসরকারি টেলিভিশনের এক সাংবাদিক জানতে চান কয়েক দিন পরে সাংবাদিকেরা স্বাধীনভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন কি-না।
এ প্রসঙ্গে পাল্টা প্রশ্ন তুলে শেখ হাসিনা বলেন, গণমাধ্যম স্বাধীনতা ভোগ না করতে পারার মতো কোনো ঘটনা ঘটেছে কি?
এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনার চ্যানেলে টক’শোতে আপনি কীভাবে আমাদের দোষগুলো পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে দেখান সেটাও আমি মাঝে মাঝে দেখি।’
খালেদা নির্বাচনী আচরণ ভঙ্গ করেছেন
নির্বাচনী আচরণবিধির কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দাবি করেন, খালেদা জিয়া নির্বাচনী আচরণ বিধি ভঙ্গ করেছেন। গাড়িবহর নিয়ে উনি ভোট চেয়ে বেড়াচ্ছেন। খালেদা ঢাকা সিটিকে দুই ভাগের সমালোচনা করে বলেন, এ জন্য তিনি হরতাল দিয়েছেন। নাগরিক সেবা বাড়ানোর জন্য আমরা তো ঢাকা সিটিকে আরও কয়েক ভাগে করতে চাই।
‘নীরব প্রতিশোধ’ নেওয়ার আহ্বান-খালেদা জিয়ার