• বৃহস্পতিবার , ৭ নভেম্বর ২০২৪

জনগন উপেক্ষিত হচ্ছে-আমাকে ভয় দেখাবেন না: ফরহাদ মজহার


প্রকাশিত: ৮:০৮ পিএম, ১ নভেম্বর ২৪ , শুক্রবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ১০ বার

 

বিশেষ প্রতিনিধি : লেখক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক ফরহাদ মজহার বলেছেন, ‘সংবিধান’ শব্দটি পরিবর্তন করতে হবে। এটি ঔপনিবেশিক শব্দ। ব্রিটিশ শাসকেরা সংবিধান নামে আইন চাপিয়ে দিয়ে শাসন চালাত। কিন্তু গণতন্ত্রে শাসনের অস্তিত্ব নেই। সংবিধানের আভিধানিক অর্থ হবে ‘গঠনতন্ত্র’। জুলাইয়ের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের ভেতর দিয়ে জনগণের রাষ্ট্রগঠনের অভিপ্রায়ই ব্যক্ত হয়েছে।শুক্রবার (১ নভেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে সেন্টার ফর ডেমোক্রেসি অ্যান্ড পিস স্টাডিজ আয়োজিত ‘দুর্নীতি ও রাষ্ট্রপতি বা সংস্কার’ শীর্ষক গোল টেবিল বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন।

ফরহাদ মজহার বলেন, আমরা গণতন্ত্রের কথা বলি তবে জনগণকে উপেক্ষা করে। আমরা গণঅভ্যুত্থানের পরেও জনগণকে উপেক্ষা করি, এটা অদ্ভুত ব্যাপার। এতগুলো মানুষ শহীদ হয়ে গেল, এতগুলো মানুষ পঙ্গু হয়ে পড়ে আছে, তারপরেও কিন্তু আমরা জনগণকে উপেক্ষা করেছি। আপনি ধরে নিচ্ছেন তথাগত রাজনৈতিক দলগুলো জনগণের প্রতিনিধি। এটা ঠিক নয়।

অনেকে বলেন বাংলাদেশে ইসলাম কায়েম করতে হলে ফরহাদ মজহারকে নাকি কতল (হত্যা) করতে হবে। আমি কিন্তু বিষয়টা জেনে গেছি। আমাকে যেখানে বলবেন আমি যাব, আমাকে কতল করে ফেলবেন। আমাকে কতল করলে যদি ইসলাম কায়েম হয় তবে ইনশাআল্লাহ আল্লাহর নামে কতল হয়ে যাবো। আমাকে ভয় দেখাবেন না। কিন্তু ফ্যাসিজমকে ইসলাম বলে প্রচার করবেন না। আপনারা কোথা থেকে আসেন, সেটা আমরা জানি। আপনাদের কারা পাঠায়, সেটাও আমরা জানি।

এই রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলেন, সংবিধান শব্দটা সঠিক নয়। এটা ঔপনিবেশিক শক্তি ব্যবহার করে। তারা যাদেরকে শাসন করবে, তাদের শাসন করার জন্য আইন প্রণয়ন করা হয়। এটাকেই বলা হয় সংবিধান। কনস্টিটিউশনের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে গঠন। কনস্টিটিউশনের লিগ্যাল এবং পলিটিক্যাল অর্থ হচ্ছে যুগপৎ। আপনারা কনস্টিটিউশন শব্দটা বাদ দেওয়ার চেষ্টা করবেন। এটার ব্যবহার ইংরেজ আমল থেকে শুরু হয়েছে। আমি একটা আইন দেব, সে আইনের দ্বারা আমি শাসন করব। আপনি শাসিত এবং আমি শাসক।

গণতন্ত্রে শাসিত এবং শাসক বলে কোনো পার্থক্য থাকতে পারে না। গণতন্ত্রে জনগণ নিজের শাসক। আইন এবং রাজনীতির সম্পর্ক আমরা বুঝি না বলে এবার গণঅভ্যুত্থানটা ব্যর্থ হয়েছে। ব্যর্থ হওয়াটা জরুরি ছিল। যাতে আমরা টের পাই আমাদের অজ্ঞতা, আমাদের বেহুঁশ অবস্থা, এটা আমাদেরকে ভুল দিকে নিয়ে যাবে। আমরা বারবার সংস্কার সংস্কার বলছি। আপনি তো বাড়িই গঠন করেন নাই, সংস্কার কীভাবে করবেন?

তিনি বলেন, ৭২ সালে আপনি যাদের পাকিস্তানের গঠনতন্ত্র বানানোর জন্য ভোট দিয়েছেন, তারাই ফিরে এসে স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়ন করল। তারা শাসন করতে যেটা চেয়েছে সেটাই করেছে। তারা সমাজতন্ত্র ঢুকিয়েছে, ধর্মনিরপেক্ষতা ঢুকিয়েছে। ওদের যে মতাদর্শ যেটাকে আমরা ফ্যাসিজম বলি। এটা আমাদের ওপর চাপিয়ে দিয়ে এতটা বছর শাসন করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ বুঝানোর চেষ্টা করেছে, আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ধারণ করেছি। অথচ মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছিল সাম্য মানবিক মর্যাদা এবং ন্যায়বিচার।

ফরহাদ মজহার বলেন, আপনি একটা গণঅভ্যুত্থান করেছেন। কোনো অভ্যুত্থানে কখনও শপথ করা লাগে না। আপনি যদি শহীদ মিনার বা রাজু ভাস্কর্যের সামনে শপথ গ্রহণ করতেন তাহলে যারা শহীদ হয়েছে, যারা পঙ্গু হয়েছে, তাদের যথার্থ মর্যাদা আপনিই দিতে পারতেন। যখনই আপনি বঙ্গভবনে ঢুকেছেন তখনই শহীদের রক্তের সঙ্গে বেইমানি করেছেন। তারই কিন্তু কুফল প্রত্যেকটা দিন আপনারা দেখছেন। এর কুফল আপনারা আগামী দিনেও দেখতে পারবেন। এটা বারবার বিভিন্নভাবে আসবে।

তিনি বলেন, আপনারা সরকারের দুই একটা সংস্কার নিয়ে কথা বলছেন। এটা কিন্তু এখনকার আলোচনার বিষয় না। সরকারে আজকে একজন আছে আগামীকাল আরেকজন থাকবে। মূল বিষয়টা হচ্ছে রাষ্ট্র গঠন করা। আপনার এমন একটি রাষ্ট্র গঠন করতে হবে, যেখানে রাষ্ট্রের মধ্যে আমরা প্রত্যেকেই এই রাষ্ট্রের অন্তর্গত। আমাদের অভিপ্রায়টা সার্বজনীন থাকতে হবে। আমরা এমন একটা রাষ্ট্র চাই যেটা আমাদের জীবন ও জীবিকা নিশ্চিত করবে। আমার জীবন ও ব্যক্তির স্বাধীনতা ও মর্যাদা হরণ করতে পারবে না। একটা গঠনতন্ত্র তৈরি করা খুব কঠিন কাজ না।

বাংলাদেশ কংগ্রেসের মহাসচিব ইয়ারুল ইসলাম বলেন, রাজনৈতিক সরকার তাদের সুবিধামতো সংস্কার করে থাকে। কাজেই রাজনৈতিক সরকার যে বিষয়গুলো সংস্কার করবে না, দেশ ও জনগণের স্বার্থে অন্তর্বর্তী সরকারকে সেই বিষয়গুলোর সংস্কার করতে হবে।

জাতীয় হিন্দু মহাজোটের সম্পাদক গোবিন্দ প্রামাণিক বলেন, রাষ্ট্রপতির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। দেশের এক নম্বর ব্যক্তির বিরুদ্ধেই যদি দুর্নীতির অভিযোগ আসে, তবে তাঁকে ক্ষমতায় রেখে দুর্নীতি দমন করা কীভাবে সম্ভব?

জাস্টিস পার্টির চেয়ারম্যান আবুল কাশেম মজুমদার বলেন, রাষ্ট্রপতিই এখন সংস্কারের পথে প্রধান বাধা। রাষ্ট্রপতির সংস্কারই হচ্ছে প্রধান সংস্কার। একই সঙ্গে প্রশাসনের সব দুর্নীতিবাজকে অপসারণ করতে হবে।

গণ অধিকার পরিষদের নেতা মাহবুবুল বারী চৌধুরী বলেন, ‘বাঙালি দুর্নীতিতে একাধিকবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের রেকর্ড করেছে। দুর্নীতিকে আমরা দুর্নীতি বলে মনে করি না। সমাজসংস্কারের পাশাপাশি নিজেদেরও সংস্কার প্রয়োজন।’

গোলটেবিল বৈঠকে আরও বক্তব্য দেন শিক্ষাবিদ মোমেনা খাতুন, অধ্যাপক ঈসা মোহাম্মদ, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সাইফুল আলম, প্রাবন্ধিক মেহেদি হাসান, প্রকৌশলী আল মামুন, রাজনীতিক মমতাজ উদ্দিন আহমদ, মাসুদুর রহমানসহ অনেকে। সঞ্চালনা করেন সেন্টার ফর ডেমোক্রেসি অ্যান্ড পিস স্টাডিজের নির্বাহী পরিচালক সাদেক রহমান।