জঙ্গি সাইফুলের টার্গেট যখন ধানমন্ডি!
এস রহমান : জঙ্গি সাইফুলের ধানমন্ডি টার্গেটের নানা তথ্য উদঘাটিত হয়েছে। জঙ্গিরা টার্গেট করেছিল জাতীয় শোক দিবসকে কেন্দ্র করে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে প্রচুর জনসমাগম’কে! টার্গেট মত নব্য জেএমবির একটি সেল বড় ধরণের নাশকতার পরিকল্পনা করছে বলে গোয়েন্দাদের হাতে অস্পষ্ট তথ্য ছিল। সেই অস্পষ্ট তথ্যই শেষ পর্যন্ত গোয়েন্দাদের নিয়ে যায় আত্মঘাতি নিহত জঙ্গি সাইফুল ইসলামের কাছে।
পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহিদুল হক জাতিরকন্ঠ কে বলেন, ‘অস্তিত্ব সংকটে থাকা জেএমবি নিজেদের সক্ষমতা জানান দিতে একটা হামলার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে। এজন্য ১৫ আগস্টকে তারা বেছে নিয়েছে বলে অস্পষ্ট তথ্য ছিল গোয়েন্দাদের হাতে। তাই ধানমন্ডি এলাকায় গোয়েন্দা কার্যক্রম বাড়ানো হয়।
এরপর পুলিশ নিশ্চিত হয় যে, ধানমন্ডি ৩২ নম্বরকে টার্গেট করে জঙ্গিরা আশেপাশে অবস্থান নিয়েছে। মিরপুর রোডের পাশাপাশি পান্থপথকেও খুব গুরুত্ব সহকারে চিহ্নিত করে পুলিশ। বিশ্বস্ত সূত্র, তথ্য ও প্রযুক্তির মাধ্যমে নিশ্চিত হয় সন্দেহভাজন জঙ্গির উপস্থিতির বিষয়ে। একপর্যায়ে পুলিশ নিশ্চিত হয় কোন আবাসিক হোটেল বা মেসে অবস্থান তারা নিয়েছে। এরপর শুরু হয় দ্বিতীয়বারের মতো ব্লকরেইড।’
পুলিশের সিটিটিসি প্রধান মনিরুল ইসলাম জানান, ‘রেইড চলাকালে হোটেল ওলিও ইন্টারন্যাশনালের সব কক্ষ নক করার সঙ্গে সঙ্গে খুলে দেয়। কিন্তু সাইফুল তার ৩০১ নং কক্ষটি খোলেনি। সে তার কক্ষের ভেতর থেকে জানায়, সকালের আগে খুলবো না। করিডোরের পাশে জানালা দিয়ে সন্দেহজনক ব্যাগ ও তার দেখতে পান পুলিশ সদস্যরা। তখন ব্লক রেইডে অংশ নেওয়া পুলিশ সদস্যরা বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে দরজার বাইরে থেকে তালা লাগিয়ে দেন। যাতে ভেতরে থাকা ব্যক্তি পালাতে না পারে।’
এরপর সাইফুলকে বারবার আত্মসমর্পণের আহ্বান জানানো হলেও সে আত্মসমর্পণ করেনি বলে জানান সিটিটিসি মনিরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী পুলিশ আগে থেকেই প্রস্তুত ছিল। এরপর খুব দ্রুত সময়ে সোয়াট ও বোম্ব ডিসপোসাল ইউনিট ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়।’
এরপর সোমবার সকালে সোয়াটের নেতৃত্বে অভিযান পরিচালনাকারী সদস্যরা গুলি করতে করতে রুমের সামনে চলে যান। তখন ওই ভবনের ভেতর থেকে একটা বিস্ফোরণ ঘটায়। পুলিশের গুলি ও আর তার বিস্ফোরণে দরজা ভেঙে যায়। তখন সে (সাইফুল) বিস্ফোরকসহ বাইরে বেরিয়ে আসে। আরেকটি বিস্ফোরণ ঘটানোর চেষ্টা করলে সোয়াট সদস্যরা গুলি চালায়। গুলি আর দ্বিতীয় বিস্ফোরণে নিহত হয় সাইফুল।
আত্মঘাতি কে এই জঙ্গি সাইফুল–
নিহত জঙ্গি সাইফুল ইসলামের সম্পর্কে জানা যায়, চাকরির খোঁজে ঢাকা যাচ্ছি বলে গত শুক্রবার বাড়ি থেকে বের হয়। সাইফুলের গ্রামের মেম্বার শফিকুল ইসলাম বলেছেন, সোমবার সাইফুল বোনকে ফোন দিয়ে বলেছে আগামী বুধবার সে বাড়ি যাবে।
মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর পান্থপথের ওলিও ইন্টারন্যাশনাল হোটেলে সোয়াটের গুলি ও নিজের কাছে থাকা বোমা বিস্ফোরণে নিহত হয় খুলনা বিএল কলেজের ছাত্র সাইফুল ইসলাম। অভিযানের পর পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহিদুল হক জানান নিহত সাইফুলের বাবা জামাতের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। সাইফুল সাবেক শিবির কর্মী।
খোঁজ নিয়ে জানা যায় নিহত সাইফুলের গ্রামের বাড়ি খুলনার ডুমুরিয়া থানার ৯ নং সাহস ইউনিয়নের নোয়াকাটি গ্রামে। সে পড়াশুনা করত খুলনা বিএল কলেজে। ৯ নং সাহস ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জয়নুল আবেদিন জাতিরকন্ঠকে জানান, নিহত সাইফুল ইসলামের গ্রামের নাম নোয়াকাটি। তার বাবার নাম আব্দুল খয়ের মোল্লা। তিনি গ্রাম মসজিদের ইমাম। সাইফুলের মা বাকপ্রতিবন্ধী। তার স্কুল পড়ুয়া দুই বোন আছে। সাইফুল ও তার বাবার রাজনৈতিক মতাদর্শ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘নোয়াকাটি একেবারেই গ্রাম এলাকা। এখানে রাজনীতি তেমন হয় না। তবে তিনি জামাতে ভোট দেন।’
খুলনা বিএল কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সামছুর রহমান বলেন, ‘সাইফুল ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষে বিএল কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞান অনুষদে ভর্তি হয়। প্রথম বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেও দ্বিতীয় বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষায় ইংরেজিতে অকৃতকার্য হয়। তৃতীয় বর্ষে কোনো ক্লাস করেনি। ফর্ম ফিলআপও করেনি। সাইফুলের সহপাঠীরা তৃতীয় বর্ষ ফাইনাল দিয়ে এখন চতুর্থ বর্ষে। কিন্তু তৃতীয় বর্ষ থেকে সাইফুলের কোনো তথ্য নেই কলেজে । ক্লাস না করায় তার তেমন বন্ধুও তৈরি হয়নি।