জঙ্গি তৈরীর আড়ত উত্তরার লাইফ স্কুল
সাইফুল বারী মাসুম : জঙ্গি তৈরীর আড়ত উত্তরার লাইফ স্কুল নিয়ে তোলপাড় চলছে। এই স্কুল থেকেই জঙ্গি মোটভেশন করা হতো। র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন ঢাকার উত্তরা ও কলাবাগান এলাকা থেকে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জেএমবির ‘তামিম-সরোয়ার’ গ্রুপের সন্দেহভাজন ১০ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে। এদের মধ্যে তিনজন ধর্মভিত্তিক ইংরেজি মাধ্যমের একটি স্কুল পরিচালনায় যুক্ত ছিলেন।
র্যাব বলছে, লাইফ স্কুল নামের ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আড়ালে আসলে জঙ্গি দলের জন্য সদস্য সংগ্রহ করা হচ্ছিল। রোববার রাত থেকে সোমবার দুপুরের মধ্যে বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ওই দশজনকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে র্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান জানান।
এই দশজন হলেন- উত্তরার ১৩ নম্বর সেক্টরের লাইফ স্কুলের সাবেক অধ্যক্ষ শরিফুল ইসলাম (৪৬), তার ভাগ্নে ও স্কুলের সাবেক পরিচালক জিয়াউর রহামন (৩১), বর্তমান অধ্যক্ষ মো. মিজানুর রহমান (৪৩), আবু সাদাত মো. সুলতান আল রাজি ওরফে লিটন (৪১), আল মিজানুর রশিদ (৪১), জান্নাতুল মহল ওরফে জিন্নাহ (৬০), মো. কৌশিক আদনান সোবহান (৩৭), মেরাজ আলী (৩০), মুফতি আবদুর রহমান বিন আতাউল্লাহ (৩৭) ও মো. শাহরিয়ার ওয়াজেদ খান (৩৬)।
সোমবার বিকালে কারওয়ানবাজারে র্যাবের অতিরিক্ত মহা পরিচালক আনোয়ার লতিফ খান বলেন, যাদের জঙ্গি মতবাদে আকৃষ্ট করা যাবে বলে মনে হত, কেবল তাদের সন্তানকেই লাইফ স্কুলে ভর্তি করা হত।স্কুলের সঙ্গে আগে একটি নামাজের ঘর ছিল, পরে মসজিদে পরিণত করা হয়। সেখানেই অভিভাবকদের মোটিভেট করা হত।
তবে এই দশজন কোনো জঙ্গি হামলার ঘটনায় সম্পৃক্ত নয় বলেই মনে করছেন এই র্যাব কর্মকর্তা। ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠিত লাইফস্কুলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা শতাধিক। স্কুলের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, তারা প্লে গ্রুপ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থী ভর্তি করে। তাদের শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হয় কেমব্রিজ ও ইসলামিক কারিকুলাম অনুযায়ী।
গ্রেপ্তার শরিফুলের স্ত্রী জানান, গত বছর জুলাই মাসে তার স্বামী, জিয়াউরসহ চারজন লাইফ স্কুল ছেড়ে দিয়ে উত্তরার ৯ নম্বর সেক্টরে ‘নলেজ হোম’ নামে একই ধরনের আরেকটি স্কুল চালু করেন।
আমি নিজেও মাঝেমধ্যে সেখানে বাংলা ক্লাস নিতাম। পার্টনারশিপ নিয়ে সমস্যার কারণে শরীফুল লাইফ স্কুল ছেড়ে দেয়। তার ৪২ মাসের বেতন বকেয়া আছে।
সোনিয়া বলেন, সোমবার ভোর ৫টার দিকে উত্তরা ৪ নম্বর সেক্টরে তাদের বাসা থেকে কয়েকজন লোক আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে শরীফুলকে ‘তুলে নিয়ে যায়’। পরে তিনি জানতে পারেন, ৯ নম্বর সেক্টরের বাসা থেকে জিয়াউরকেও একইভাবে ‘তুলে নেওয়া’ হয়েছে।
গোয়েন্দাদের বরাত দিয়ে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে আসা খবরে বলা হচ্ছে, সম্প্রতি পুলিশের অভিযানে নিহত নব্য জেএমবির দুই গুরুত্বপূর্ণ নেতা অবসরপ্রাপ্ত মেজর জাহিদুল ইসলাম ও তানভীর কাদেরীর লাইফ স্কুলে যাতায়াত ছিল।
ওই স্কুলের সাবেক দুই শিক্ষক ফয়সাল হক ও মাঈনুল ইসলাম এখন নব্য জেএমবির হাল ধরেছেন বলে ধারণা করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী; এ কারণে তাদের খোঁজে অনুসন্ধান চলছে বলে সংবাদমাধ্যমের তথ্য।