জঙ্গির চাষবাস-রাবিতে-ইমামসহ ১৪ শিবির পাকরাও
রাবি প্রতিনিধি : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে তল্লাশি চালিয়ে হল মসজিদের ইমামসহ ছাত্রশিবির ১৪ নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। শনিবার বিকালে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শের-ই-বাংলা হলে তল্লাশি চালানো হয়।
তল্লাশি চলাকালে হল মসজিদের আলমারি থেকে প্রচুর সংখ্যক জিহাদী বই, শিবিরের প্রচারপত্র ও শিবির নেতাদের বায়োডাটা উদ্ধার করা হয়। একই সঙ্গে হল শাখা শিবিরের সাথী মানের ৩৫ জনের তালিকা উদ্ধার করেছে পুলিশ।এসময় ঘটনাস্থলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি, প্রক্টর, ছাত্র উপদেষ্টা এবং রাজশাহী মহানগর পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত হন।
আড়াই ঘন্টাব্যাপী তল্লাশিতে দুই শতাধিক পুলিশ সদস্য অংশ নেয়। তল্লাশি শেষে হলের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এনিয়ে ক্যাম্পাসে উত্তেজনা বিরাজ করছে। অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে হল ও ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
আটককৃতরা হলেন- মার্কেটিং বিভাগের এমবিএ শিক্ষার্থী আনারুল ইসলাম, তৃতীয় বর্ষের মুস্তাক আহমেদ, দর্শন বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী ইউসুফ আলী, আবুল খায়ের, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী লোকমান হোসেন সিরাজী, আব্দুস সবুর, মেহেদী হাসান,
একই বিভাগের চতুর্থ বর্ষের আবদুল হক মানিক, শরিফুল ইসলাম, ক্রপ সায়েন্স বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী ফাহাদুল আলম, ইসলামের ইতিহাস বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মুরাদ আহমেদ, প্রাণিবিদ্য বিভাগের মাস্টার্সের সিরাজুল ইসলাম সুমন, ভাষা বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী রায়হান আহমেদ এবং হল মসজিদেও ইমাম মাওলানা মো. সানাউল্লাহ।
পুলিশ সূত্র জানায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মজিবুল হক আজাদ খানকে সঙ্গে নিয়ে শের-ই-বাংলা হলে মতিহার থানার ওসি হুমায়ন কবীরের নেতৃত্বে তল্লাশি শুরু করে পুলিশ। এসময় হল মসজিদের আলমারির পেছনে একটি ব্যাগে শিবিরের প্রচারপত্র ও প্রকাশনা সামগ্রী পায় পুলিশ।
পরে মসজিদের ইমামকে ডেকে চাবি নিয়ে আলমারি খুলে শিবিরের অসংখ্য বই ও লিফলেট উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে শিবিরের সাথী মানের ৩৫ জনের গোপন তালিকা উদ্ধার করে গোয়েন্দা পুলিশ। তালিকায় নাম, বিভাগ, মোবাইল নম্বর ও কক্ষ নম্বর ছিল। পরে ওই তালিকা ধরে হলের বিভিন্ন কক্ষে তল্লাশি চালায় পুলিশ।
তালিকাভুক্তদের মধ্যে ১৩ জনকে আটক করে। অন্যরা তল্লাশির বিষয়টি আগেই আঁচ করতে পেরে সটকে পড়ে। এছাড়া মসজিদের আলমারিতে সরকারবিরোধী এসব লিফলেট ও শিবিরের বইপত্র রাখার অভিযোগে ইমাম মাওলানা মো. সানাউল্লাহকে আটক করে পুলিশ।
এদিকে উদ্ধারকৃত গোপন তালিকায় থাকা ৩৫ জনের মধ্যে যারা আগে সটকে পড়েছেন তারা হলেন- আরবি বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী ইয়াকুব আলী, নুরুজ্জামান মানিক, নাছিমুল ইসলাম, মামুন বিন মাজিদ, আবু তাহের, সমাজকর্ম বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী আইয়ুব আলী ওরফে সুজন, নাসির উদ্দিন, মিঠুন আলী, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের মাস্টার্সের মুরাদ আহমেদ, চতুর্থ বর্ষের শেখ মিজানুর রহমান, চতুর্থ বর্ষের আরিফুল ইসলাম, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের মাস্টার্সের হাবিবুর রহমান, নজরুল ইসলাম, খালিদ সাইফুল্লাহ, আবরারুল হক রাকিব, শাহীনুর রহমান, একই বিভাগের তৃতীয় বর্ষের মো. হানজালা পরিসংখ্যান বিভাগের মাস্টার্সের মাহফুজুর রহমান, আরিফুল ইসলাম, বিপ্লব হোসেন, দর্শন বিভাগের মাস্টার্সের মঞ্জুরুল ইসলাম, বুলবুল হোসেন, ইসলামের ইতিহাস বিভাগের মাস্টার্সের সাজিদুর রহমান, বাবু হোসেন, সাকিবুল হাসান, ইনফরমেশন সায়েন্স এন্ড লাইব্রেরি ম্যানেজমেন্টের চতুর্থ বর্ষের মিজানুর রহমান, ভূ-তত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের জুয়েল রানা।
গোপন এ তালিকাটি জাতিরকন্ঠ প্রতিবেদকের কাছে সংরক্ষিত আছে। তালিকায় থাকা শিবির নেতাদের বেশিরভাগই আবাসিক হলে অবস্থান করে ক্যাম্পাসে ছাত্রশিবিরের কার্যক্রম চালিয়ে আসছেন। ছাত্রলীগের হল ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখার বেশ কিছু নেতাকর্মী এদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয় বলে অভিযোগ রয়েছে।
গোয়েন্দা পুলিশ সূত্র জানায়, হলে তল্লাশি চালিয়ে শিবিরের ব্যাপক কার্যক্রমের নথিপত্র পাওয়া গেছে। সেখানে একটি তালিকাও পেয়েছে পুলিশ। তালিকায় থাকা শিবিরের এসব নেতাকর্মীদের গ্রেফতারে দ্রুত অভিযান চালানো হবে।
রাজশাহী মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (পূর্ব) আমীর জাফর বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে শনিবার সকাল থেকে শের-ই-বাংলা হলে নজরদারি বাড়ানো হয়। বিকেল সাড়ে ৩টায় তল্লাশি শুরু করা হয়। হল মসজিদে শিবিরের বই, নথি, ডারেরি, বায়োডাটা ও তালিকা উদ্ধার করা হয়। পরে বিভিন্ন কক্ষে তল্লাশি চালিয়ে সন্দেহভাজন ১৩ শিক্ষার্থী ও হল মসজিদের ইমামকে আটক করে থানায় নেওয়া হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া অন্য নথিপত্র ও নামের তালিকাও খতিয়ে দেখবে পুলিশ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি অধ্যাপক ড. চৌধুরী সারওয়ার জাহান বলেন, জঙ্গি তৎপরতায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জড়িয়ে পড়ছে দেখছি। সেজন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় কঠোর নজদারি রাখা হচ্ছে। তারই অংশ হিসেবে হলে তল্লাশি চালিয়ে কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে পুলিশ।
শহীদ হবিবুর রহমান হলে আটক ২ : এদিকে শুক্রবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ হবিবুর রহমান হলে শিবির সন্দেহে দুই শিক্ষার্থীকে আটক করে পুলিশে দিয়েছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
আটককৃতরা হলেন রাবির উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রাজিবুল হাসান সৈকত ও রাজশাহী কলেজের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী আব্দুর রাজ্জাক। তারা দু’জনেই বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন মির্জাপুরের জুই ছাত্রাবাসে বসবাস করতেন। তারা হলের ডাইনিংয়ে রাতের খাবার খেতে আসলে ছাত্রলীগের সভাপতি মামুন-অর-রশিদ তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। তাদের মোবাইল ও ফেসবুক ঘেঁটে শিবিরের কর্মকাণ্ডে যুক্ত বলে শনাক্ত করা হয়। পরে মতিহার থানা পুলিশ তাদেরকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়।