• শুক্রবার , ৩ মে ২০২৪

জঙ্গিরা গুড়িয়ে দিল ৩ তরুণের স্বপ্ন-কান্না থামছে না ওদের স্বজন-বন্ধুদের


প্রকাশিত: ৩:২৬ পিএম, ৩ জুলাই ১৬ , রোববার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৭৬ বার

এস রহমান   :  জঙ্গিরা গুড়িয়ে দিল ৩ তরুণের স্বপ্ন-কান্না থামছে না ওদের স্বজনদের সহপাঠি gongi-attatck-www.jatirkhantha.com.bdবন্ধুদের।এরা হলেন  ফারাজ হোসেন, অবিন্তা কবির ও তারিশি জৈন। এরা তিন জনই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তিন শিক্ষার্থী।

ঢাকার কূটনৈতিক এলাকা গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে বহু দেশের নাগরিক বসেছিলেন। এ সময় সন্ত্রাসীরা তাঁদের জিম্মি করে এবং ২০ জনকে হত্যা করে। এর বাইরে দুই পুলিশ কর্মকর্তা ও ছয় সন্ত্রাসী নিহত হয়।

নিহতদের মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তিন শিক্ষার্থীর পরিবার ও সহপাঠীদের সঙ্গে কথা বলে জানা তাঁদের নানা আর্তনাদ ও গুমরে ওঠা কাহিনী।

অবিন্তা কবিরের জন্যে ফ্লোরিডা’য় পতাকা অর্ধনমিত-

Ishrat-Akhond.www.jatirkhantha.com.bdযুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের রাজধানী আটলান্টার ইমোরি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি ঢাকায় পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে ছুটি কাটাতে এসেছিলেন। তাঁর শৈশবের বন্ধু এমা লুইসা জ্যাকোবি সিএনএনকে বলেন, ‘সে বিশ্বের সম্পদ ছিল।’ ঢাকায় অবিন্তা আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে পড়াশোনা করেছেন।

জ্যাকোবি বলেন, ‘তার কাজের নীতি আমার কাছে সব সময়ই ছিল উদ্দীপনামূলক। তার ছিল অবিশ্বাস্য, কাজের প্রতি ছিল অঙ্গীকারবদ্ধ এবং কারিকুলামের বাইরে বিভিন্ন বিষয়ে সে জড়িত ছিল। সবকিছুর ওপরে সে চমৎকার অ্যাথলেট ছিল। যা কিছুই অর্জন করেছে আমি বলব, সে তা নিজের চেষ্টায় আদায় করে নিয়েছে।’

অবিন্তার কলেজের সহপাঠী রুশে আমারাথ-মাদাভ বলেন, ‘আমার মনে আছে, একদিন আমি নাচের অনুশীলনে যাচ্ছিলাম এবং এ জন্য কালো লেগিংস খুব দরকার ছিল। আমারটা পরিষ্কার করতে দিয়েছিলাম। এ কারণে আমি তাঁর দরজায় কড়া নাড়লাম, সে আমাকে তার লেগিংস দিল। যদিও আমরা সে রকম ঘনিষ্ঠ ছিলাম না।’

অবিন্তা থাকতেন ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের মায়ামিতে। সেখানকার গভর্নর রিক স্কট অবিন্তা স্মরণে রোববার যুক্তরাষ্ট্র ও তাঁর অঙ্গরাজ্যের পতাকা অর্ধনমিত রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।

faraj-www.jatirkhantha.com.bdফারাজের জন্যে এমোরি সম্প্রদায় শোকগ্রস্ত

আটলান্টার কাছে অক্সফোর্ড কলেজের গ্র্যাজুয়েট শিক্ষার্থী ছিলেন ফারাজ। এমোরির গোইজুয়েটা বিজনেস স্কুলেও পড়তেন তিনি।
ফারাজের এক বন্ধু বলেন, তিনি ক্লাস প্রেসিডেন্ট এবং প্রম কিং (যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে নির্বাচিত সাম্মানিক পদ) নির্বাচিত হয়েছিলেন।আরেক বন্ধু রিফাত মুরসালিন বলেন, একটি স্কুল প্রকল্পের মাধ্যমে তিনি ফারাজের সঙ্গে পরিচিত হয়েছিলেন।

মুরসালিন বলেন, ‘আমি যে প্রকল্প নিয়ে কাজ করছিলাম, সেটা নিয়ে ফারাজ আমাকে সহায়তা করতে এগিয়ে আসে এবং সে সময় তার সঙ্গে পরিচয় হয় আমার। এর মাধ্যমে বোঝা যায়, সে কেমন মানুষ ছিল। সে সময় খুব সদয়, যত্নবান, উপকারী ছিল। আর খুব ঘুরতে পছন্দ করত।’

মুরসালিন বলেন, ‘আমাদের এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না যে, আমার দুই বাড়ি ঢাকা ও এমোরি ইউনিভার্সিটি—তাঁর নির্মম বিদায়ে শোকভিভূত হয়ে পড়েছে।’বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শনিবার এক বিবৃতিতে জানায়, ‘এমোরি সম্প্রদায় এই নির্মম ও অর্থহীন ঘটনায় শোকগ্রস্ত।’ফারাজের পুরো নাম ফারাজ আইয়াজ হোসেন। তিনি ট্রান্সকম গ্রুপের মালিক লতিফুর রহমানের নাতি।

ঈদ করা হলো না ফারাজের-

ঈদ করা হলো না ফারাজ আইয়াজ হোসেনের (২০)। জঙ্গিরা গুড়িয়ে দিল ফারাজের সব স্বপ্ন-।জঙ্গিদের কালো থাবায় কান্না থামছে না পরিবারটিতে।মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আটলান্টার ইমোরি বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্ডারগ্র্যাজুয়েট শিক্ষার্থী ছিলেন ফারাজ।

ছুটিতে পরিবারের সাথে ঈদ উদযাপন করতে গত ১৮ মে দেশে আসেন তিনি। আগামী ২২ আগস্ট তার যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেই ফেরা আর হল না। এর আগেই গুলশানের হলি আর্টিসান রেস্তোরাঁয় জঙ্গী হামলার বলি হয়ে চির বিদায় নিলেন তিনি।.

নিহত ফারাজ ট্রান্সকম গ্রুপের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী লতিফুর রহমানের দৌহিত্র। তাঁর মা সিমিন হোসেন প্রথম আলোর প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান মিডিয়া স্টার লিমিটেডের একজন পরিচালক। বাবা ওয়াকার হোসেন। ট্রান্সকম গ্রুপের একজন কর্মকর্তা জানান, দুই ভাইয়ের মধ্যে ছোট ফারাজ চঞ্চল প্রকৃতির ছিলেন। পরিবারের সবাইকে সব সময় আনন্দে মাতিয়ে রাখতেন।

১৯৯৬ সালের ১৫ এপ্রিল জন্ম নেওয়া ফারাজ রাজধানীর স্যার জন উইলসন ও আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের ছাত্র ছিলেন। শুক্রবার বন্ধুদের নিয়ে খাবার খেতে গিয়েছিলেন আর্টিসান রেস্তোরাঁয়। নিজেই গাড়ি চালিয়ে ওই ক্যাফেতে গিয়েছিলেন তিনি।

আগামীকাল মঙ্গলবার আসরের নামাজের পর গুলশান আজাদ মসজিদে ফারাজের জানাজা অনুষ্ঠিত হবে বলে পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন।

তারিশি জৈনের মনটা ছিল খুব বড়-

ভারতীয় নাগরিক তারিশি বার্কেলেতে ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার শিক্ষার্থী ছিলেন। ঢাকায় ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেডে ইন্টার্নশিপ শুরু করেছিলেন।ঢাকায় তিনি আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে পড়েছেন। তাঁর বাবা এখানে পোশাক ব্যবসা করতেন।

ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর বাংলাদেশ স্টাডিজের পরিচালক সঞ্চিতা সাক্সেনা বলেন, ‘তিনি ছিলেন স্মার্ট ও উচ্চাকাঙ্ক্ষী। তাঁর মন ছিল খুব বড়। তাঁর পরিবারের প্রতি আমাদের গভীর সমবেদনা।’

শিক্ষার্থীদের পরিচালনায় এথিক্যাল নামের পোশাক প্রতিষ্ঠানে বিক্রয় বিভাগে কাজ করতেন তারিশি। তাঁর সহকর্মী হানা নগুয়েন বলেন, ‘আমাদের সব দেখা-সাক্ষাতে মনে হয়েছে, সে সব সময় মানুষকে খুশি রাখত। তাঁর হাসি ছিল সংক্রামক।’