ছোটো বৌমার পুত্র সন্তান কামনায়-তন্ত্রমন্ত্র-নাতনির আঙুল কেটে রক্ত চন্দনে পুজো
কলকাতা প্রতিনিধি: ঠাকুর ঘরের এক পাশে রাখা শিশুর বস্তাবন্দি মৃতদেহ। ঠাকুরের আসনের সামনে তার মায়ের ছবি। তার সামনে রাখা একটি ছোট গামলা। তার ভিতরে রাখা ছোট দু’টি রক্ত মাখা আঙুল। তাতে রক্ত চন্দন আর রক্ত জবা দিয়ে পুজো করছেন এক বৃদ্ধা। পরনে গরদের শাড়ি।
এ কোনও ভৌতিক গল্প নয়। পুলিশের দাবি, মহালয়ার দিন বেলার দিকে এমনই ছবি ছিল আরতি নস্করের ঠাকুর ঘরের। যে আপাতত নিজের চার বছরের নাতনি প্রীতিকে খুনের অভিযোগে নিউ টাউন থানার পুলিশের হেফাজতে রয়েছে। ঘটনার পিছনে ষাটোর্ধ্ব আরতির কুসংস্কারাচ্ছন্ন মানসিকতাকেই দায়ী করছে পুলিশ।
নিউ টাউন থানা এলাকার মহিষগোঠের শিবতলার বাসিন্দা প্রীতি মহালয়ার দিন বেলা এগারোটা থেকে নিখোঁজ ছিল। আটচল্লিশ ঘণ্টা পরে তার বস্তাবন্দি মৃতদেহ পাওয়া যায় তারই কাকা শঙ্কর নস্করের বাড়ির চিলেকোঠার ঘর থেকে। পরে প্রীতিকে খুনের অভিযোগে পুলিশ তার ঠাকুরমা আরতি এবং কাকিমা কবিতাকে গ্রেফতার করে।
পুলিশের দাবি, জেরায় আরতি জানিয়েছে, প্রীতির মৃতদেহের কাছেই ঠাকুরের আসনের সামনে তার দু’টি কাটা আঙুলকে রেখে পুজো করা হয়। মাত্র পঞ্চাশ মিনিটের মধ্যে বার তিনেক পুজো করা হয়। তার পরে সেই কাটা আঙুল দু’টি বাড়ির পাশের ডোবায় ফেলে দেয় তারা। তার পরে রাত ১টা নাগাদ বাড়ির চিলেকোঠায় প্রীতির দেহ রেখে আসে আরতি ও কবিতা।
পুজোর মধ্যেই পুলিশ আরতির বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে একটি কাটারি আর একটি ছোট গামলা বাজেয়াপ্ত করেছিল। তদন্তকারীদের দাবি, ওই কাটারি দিয়েই আঙুল কেটে গামলাটিতে রাখা হয়েছিল পুজোর জন্য। জেরায় আরতি এমনটাই জানিয়েছে বলে পুলিশের দাবি।
তদন্তকারীরা জানান, গত শনিবার আরতি ও তার ছোট ছেলের স্ত্রী কবিতাকে গ্রেফতার করার পরে দফায় দফায় তাদের জেরা করা হচ্ছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তারা পুলিশের সঙ্গে সহযোগীতা করতে চাইছে না। তা সত্ত্বেও মাঝেমাঝে দু’-একটি করে কথা যা বলছে, তাতে প্রীতি খুনের পিছনে তন্ত্র বিদ্যার তত্ত্ব্ই পুলিশের কাছে জোড়ালো হচ্ছে। এমনকী, ঘটনার পিছনের কোনও তান্ত্রিকের পরামর্শ থাকলেও থাকতে পারে বলেই ধারণা তদন্তকারীদের।
পুলিশ জানাচ্ছে, জেরায় আরতি কবুল করেছে যে, ছোটো বৌমার পুত্র সন্তানের কামনাতেই সে নাতনির আঙুল কাটে। তার জন্য নাকি সে তারা মায়ের স্বপ্নাদেশ পেয়েছিল। সেই মতো মহালয়ার দিন সকালেই স্নান সেরে গরদের শাড়ি পড়ে পুজোর ঘরে ঢুকে পড়েছিল সে। আঙুল কাটার পরে সেই শাড়িতে রক্তের দাগ লেগে যায়। নাতনির কান্না যাতে বাইরের লোক শুনতে না পান, তাই ঠান্ডা মাথায় প্রীতিকে পুজোর ঘরের ভিতরেই খুন করা হয়। প্রীতির মাথায় যে বেলনটি দিয়ে আঘাত করা হয়েছিল, সেটিও বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ। তবে সেটি দিয়ে কে প্রীতির মাথায় আঘাত করেছিল, তা এখনও পরিষ্কার নয় পুলিশের কাছে।
গোয়েন্দাপ্রধান কঙ্করপ্রসাদ বারুই জানান, রক্তের দাগ লাগা শাড়িটি অভিযুক্তদের শনাক্ত করতে সাহায্য করে। কারণ ওই শাড়িটি হাতে পাওয়ার পরে পুলিশ আরতির আরও অনেকগুলি শাড়ি পরীক্ষা করে। সেগুলিতে রক্তের কোনও দাগ ছিল না। আর তার জেরেই আরতির প্রতি সন্দেহ জোরালো হয় পুলিশের।
গ্রেফতারের পরে আরতিরা পুলিশকে জানিয়েছিল, নাতনি দুষ্টুমি করায় রাগের বশত সে তাকে খুন করে। ফলে পুলিশ প্রথমে তন্ত্রের তত্ত্বকে গুরুত্ব দিতে চায়নি। তবে আরতি নতুন করে স্বপ্নাদেশের তত্ত্ব দেওয়ায় এ বার পুলিশ ফের তন্ত্র তত্ত্বের দিকে জোর দিচ্ছে।