ছাত্রশিবির থেকে জঙ্গি জেহাদী নিহত রাব্বি’র অজানা অধ্যায়
বিশেষ প্রতিনিধি : নব্য জঙ্গিদের গডফাদার তামিমের সঙ্গি ছিল নিহত ফজলে রাব্বি। একসময় সে ইসলামী ছাত্রশিবির এর ক্যাডার ছিল।‘জিহাদে যাচ্ছি’ বলে বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছিল নিহত জঙ্গি কাজী ফজলে রাব্বী। যে মসজিদে নিয়মিত নামাজ পড়তো সেখানকার কয়েকজন হুজুরের সঙ্গে বাড়ি ছাড়ে সে। এলাকাবাসী ও রাব্বীর বাবার সঙ্গে কথা বলে এই তথ্য পাওয়া যায়।
জঙ্গিদের অবস্থানের সংবাদ পেয়ে শনিবার ভোরে পাইকপাড়ার কবরস্থান এলাকার নরুউদ্দিন দেওয়ানের তিনতলা বাড়ি ঘিরে ফেলে অভিযান চালান ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের সদস্যরা। পরে র্যাবসহ অন্য বাহিনীগুলোও অভিযানে যোগ দেয়।
‘অপারেশন হিট স্ট্রং ২৭’ নামের এক ঘণ্টার অভিযানে ওই আস্তানায় নব্য জেএমবির প্রধান ও গুলশান হামলার মাস্টারমাইন্ড তামিম আহমেদ চৌধুরীসহ তিনজন নিহত হন।বাকি দুইজন হলেন ধানমণ্ডির তাওসিফ হোসেন ও যশোরের কাজী ফজলে রাব্বী।
রবিবার রাব্বি সম্পর্কে খোঁজ খবর নিলে প্রতিবেশীরা জানান, রাব্বী এলাকার ছেলেদের সঙ্গে খুব একটা মিশতেন না। শুধু স্থানীয় মসজিদের ইমাম মো. ইয়াহহিয়ার সঙ্গে তার সখ্য ছিল। স্থানীয়রা জানান, রাব্বী এলাকায় কারও সঙ্গেই মিশতেন না। বাড়ির পাশে মসজিদে নামাজ পড়তে আসতেন। সেখানে ইমামতি করতেন মো. ইয়াহহিয়া। তিনিই রাব্বীসহ চার-পাঁচজনকে জঙ্গি তৎপরতার সঙ্গে সম্পৃক্ত করার প্রয়াস চালান।
বিষয়টি জানার পর স্থানীয় লোকজন ইয়াহহিয়াকে ওই মসজিদ থেকে বের করে দেন। রাব্বীর বিষয়ে প্রতিবেশী মশিয়ার রহমান জানান, সে বাড়িতে ল্যাপটপ ব্যবহার করতো। কিন্তু ঘরে তার বাবা-মা ঢুকলেই তা বন্ধ করে দিতো। তার বাসায় জেহাদের নানা বই পাওয়া যায়, যেগুলো তার বাবা নষ্ট করে ফেলেছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা শফিউল আলম বলেন, ‘রাব্বীর বাবা যশোর উপশহর ডিগ্রি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ কাজী হাবিবুল্লাহ। ১০-১২ বছর আগে এখানে (কিসমত নওয়াপাড়া, বিশ্বাসপাড়া) জমি কিনে বাড়ি তৈরি করেন। তিনি নামাজ-কালাম করতেন। মসজিদের ইমাম রাব্বীসহ আরও কয়েকজনকে জঙ্গি বানানোর জন্য তৎপরতা শুরু করে। কিন্তু অন্যরা এড়াতে পারলেও রাব্বী প্রভাবিত হয়ে যায়। গত এপ্রিলে সে বাড়ি ছেড়ে যায়।’
আরেক প্রতিবেশী নাসরিন আক্তার বলেন, ‘রাব্বীরা কেউই এলাকার লোকজনের সঙ্গে মিশতেন না। বাড়ির পাশে মসজিদে নামাজ পড়তেন। এখানে (মসজিদে) বিভিন্ন সময় বিভিন্ন এলাকার মুসল্লিরা আসতেন, এমনকি মধ্যপ্রাচ্যের লোকজনও আসতেন। রাব্বী বাড়ি থেকে যেদিন চলে যান, হুজুরদের সঙ্গেই গিয়েছিলেন।’
একই তথ্য জানান ওই মসজিদে নামাজ আদায় করা মুসল্লি মো. রবিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ছেলেটি নামাজ-কালাম করতো। চিল্লার দাওয়াত দিতো। কিন্তু সে যে জঙ্গি সদস্য বা এমন খারাপ কাজ করতে পারে, তা জানতাম না।
‘অপারেশন হিট স্ট্রং ২৭’ এ নিহত কাজী ফজলে রাব্বী গত ৫ এপ্রিল বাড়ি ছেড়ে বের হয়ে যায়। ৭ এপ্রিল জিডি করা হলেও তার আর কোনও খোঁজ পাওয়া যায়নি। গোয়েন্দা সূত্রে আরও জানা যায়, রাব্বী এক সময় ছাত্রশিবিরের সমর্থক ছিল। পরে যশোরে থাকতেই সে এই সংগঠন ছেড়ে জঙ্গি তৎপরতায় জড়িয়ে পড়ে।
রাব্বীর বাবা কাজী হাবিবুল্লাহ বলেন, ‘শনিবার আমার ছেলে মারা গেছে- এটা আমি জানি। তার বিষয়ে রিপোর্ট করেন, আমার কোনও সমস্যা নেই। তবে আমার ছেলেকে যারা জঙ্গি বানিয়েছে, বিষ খাইয়েছে- সরকার তাদের কেন ধরছে না।’ লাশ নিয়ে আসার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘অবশ্যই আমার ছেলের মরদেহ আনবো।’
গত মাসে যশোর পুলিশ যে পাঁচজনকে জঙ্গি হিসেবে সাব্যস্ত করে পোস্টার ছাপে, ফজলে রাব্বির নাম ও ছবি সেই তালিকায় দ্বিতীয় নাম্বারে ছিল। তিনি যশোর সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজের পদার্থবিদ্যা (অনার্স) দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন।
গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রে জানা যায়, তারা রাব্বীর সম্বন্ধে বিস্তারিত খোঁজ-খবর নিয়েছেন। তারা জানতে পেরেছেন, রাব্বী এক সময় ছাত্রশিবিরের সমর্থক ছিলেন। পরে তিনি এই সংগঠন ছেড়ে জঙ্গি তৎপরতায় জড়িত হয়ে পড়েন। তবে ঠিক কোন জঙ্গি গোষ্ঠীর সঙ্গে তার যোগ ছিল, তা নিশ্চিত হতে পারেননি যশোরের গোয়েন্দা কর্মকর্তারা।