• বুধবার , ২০ নভেম্বর ২০২৪

চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সাফল্যে হাসিনা সরকার


প্রকাশিত: ১২:৪৯ পিএম, ৩০ ডিসেম্বর ১৫ , বুধবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৯২ বার

biday-2015---------------এস রহমান:  চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সাফল্যে’র মুখ দেখেছে হাসিনা সরকার ।২০১৫ সাল ছিল আওয়ামী লীগের জন্য চ্যালেঞ্জিং বছর। কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হয়েছে আওয়ামী লীগের প্রধান শেখ হাসিনাকে। দলের নেতারা
ঐক্যবদ্ধ থাকায় প্রতি্ক্রিয়াশীল চক্র মাথাচাড়া দিতে সক্ষম হয়নি ।

২০১৫-এর শুরুতে বিএনপি-জামায়াতের টানা আন্দোলনে sheikh-hasina--www.jatirkhantha.com.bdজ্বালাও-পোড়াও, পেট্রলবোমা, ককটেল বিস্ফোরণসহ সহিংস ঘটনায় বিপাকে পড়েছিল সরকারি দল আওয়ামী লীগ। কিন্তু চলতি বছরের এপ্রিল থেকে প্রায় ছয় মাস এবং পৌরসভা নির্বাচনে বিএনপিসহ বেশির ভাগ দল অংশ নেওয়ায় দল ও সরকারের মধ্যে স্বস্তি ফিরে আসে।

ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-ময়মনসিংহ চার লেন, পদ্মা সেতর মূল কাজের উদ্বোধনসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ সরকারি দলকে স্বস্তিতে রাখে।তবে বছরের শেষ ভাগে এসে দুজন বিদেশি হত্যা, ধর্মযাজকদের ওপর হামলা, লেখক-প্রকাশক-ব্লগার হত্যা এবং কয়েকটি মসজিদ-মন্দিরে হামলা, শিয়াদের তাজিয়া মিছিলের প্রস্তুতিতে বোমা হামলাসহ বিভিন্ন ঘটনায় দেশে-বিদেশে অস্বস্তিতে পড়ে ক্ষমতাসীন দল।

07-09-15-PMচলতি বছরেই ৫ জন ব্লগার খুন হয়েছেন। এই খুন এবং এর বিচার না হওয়ায় সারা বছরই প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে দলটিকে। ২০১৫ সালটি আওয়ামী লীগের জন্য কেমন ছিল জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ‘২০১৫ সালটি আওয়ামী লীগের জন্য চ্যালেঞ্জিং ছিল। সামগ্রিকভাবে কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হয়েছে আওয়ামী লীগের প্রধান শেখ হাসিনাকে। আওয়ামী লীগ নেতারা ঐক্যবদ্ধ থাকলে শত বাধা অতিক্রম করে দলটি এগিয়ে যাবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।’

আওয়ামী লীগের ২০১৫ সাল কেমন গেল জানতে চাইলে দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নূহ উল আলম লেলিন বলেন, ‘এক কথায় অম্ল-মধুর গেছে। কারণ বছরের শুরুতেই বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার আগুন-সন্ত্রাসের কারণে মানুষের জীবন নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছিল। যেটা কারোর জন্য শুভকর বিষয় ছিল না। এরপরও সরকার নানা উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রেখেছে, যা অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে।

Sheikh-Hasina1_1পরিবেশ রক্ষায় প্রধানমন্ত্রীর চ্যাম্পিয়ন অব দ্য আর্থ পুরস্কার লাভ, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর মূল কাজের উদ্বোধন, ছিটমহল বিনিময়ের মাধ্যমে সীমান্ত সমস্যার সমাধান ও দুজন শীর্ষ অপরাধীর ফাঁসির রায় কার্যকর ইত্যাদি সরকারের বড় সাফল্য। বছর শেষে দলীয় প্রতীকে পৌরসভা নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ আওয়ামী লীগের জন্য আশাব্যঞ্জক হয়ে থাকবে।

বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলন: জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী জানান, বিএনপি-জামায়াতের নাশকতায় ৫২ দিনে ১০১ জন মারা গেছে। তাদের অধিকাংশকেই আগুনে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। ১ হাজার ১৭৩টি যানবাহন ও ৬টি লঞ্চে আগুন দেওয়া হয়েছে। ট্রেনে ২৫ দফায় নাশকতা হয়েছে। এতে রাষ্ট্রের ১ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকার বেশি আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।

ক্ষমতা গ্রহণের এক বছরের শুরুতে বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলনের নামে সহিংসতায় বিচলিত হয়ে পড়ে সরকার। তবে আন্দোলনের মুখে অনমনীয় থাকে সরকার। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও নেতা-কর্মীদের সহায়তায় শক্ত হাতে নাশকতা দমন করে নিজেদের ভিত মজবুত করে আওয়ামী লীগ।

৫ জানুয়ারি সকাল থেকেই ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ সব মোড়ে অবস্থান নেয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। আওয়ামী লীগের শক্ত অবস্থানের কারণে রাজধানীতে মাঠেই নামতে পারেনি বিএনপি-জামায়াত। তবে দেশের বিভিন্ন জেলায় পেট্রলবোমা নিক্ষেপ সরকারকে সব সময় তটস্থ রেখেছিল।

এর মধ্যে ২৪ জানুয়ারি আরাফাত রহমান কোকোর মারা গেলে খালেদা জিয়াকে সান্ত্বনা দিতে তাঁর গুলশান কার্যালয়ে ছুটে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে প্রধানমন্ত্রীকে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে ঢুকতে না দেওয়ায় শুরু হয় নতুন বিতর্ক।৬ ফেব্রুয়ারি আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে আলোচনার না করার সিদ্ধান্ত হয়। এরপর সরকারের কঠোর অবস্থানের কারণে বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলনে ভাটা পড়ে।

সিটি করপোরেশন নির্বাচন: ১৮ মার্চ ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি করপোরেশন এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের তফসিল ঘোষণা করে সরকার। আওয়ামী লীগ-বিএনপির অংশগ্রহণে দেশে নির্বাচনী হাওয়া বইতে থাকে। সিটি করপোরেশন নির্বাচন হয় ২৮ এপ্রিল। তিনটিতেই জয়ী হন আওয়ামী লীগ-সমর্থিত মেয়র প্রার্থীরা।

তবে এই নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ ওঠে।ছিটমহল বিনিময়: ভারতের লোকসভায় ছিটমহল বিনিময়ের জন্য ঐতিহাসিক সীমান্ত বিল পাস হওয়ায় ছিটমহলবাসীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে মুক্তির আনন্দ। ৩১ জুলাই শুরু হয় ছিটমহল বিনিময়। ফলে দীর্ঘ ৪১ বছর পর ১৯৭৪ সালের দুই দেশের স্থলসীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নের চূড়ান্ত প্রক্রিয়া শুরু হয়।

‘পলিসি লিডারশিপ’ ক্যাটাগরিতে জাতিসংঘের পরিবেশবিষয়ক সর্বোচ্চ পুরস্কার চ্যাম্পিয়ন অব দ্য আর্থ এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠন ও তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়নে বিশেষ অবদানের জন্য জাতিসংঘ ‘আইসিটি টেকসই উন্নয়ন পুরস্কার’ লাভ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এটাকেও সরকারের একটি বড় সাফল্য বলে ধরা হয়।

পদ্মা সেতুর মূল কাজের উদ্বোধন: ১২ ডিসেম্বর মূল পদ্মা সেতুর কাজের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০১৮ সালের মধ্যে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা। নিজস্ব অর্থায়নে এটি এ পর্যন্ত দেশের সবচেয়ে বড় প্রকল্প।

২৪ নভেম্বর পৌরসভা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে সরকার। ৩০ ডিসেম্বর দেশের ২৩৪ পৌরসভায় ভোট হবে। এই নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীদের বিজয়ী করতে তৃণমূলে ব্যস্ত সময় পার করছেন দলীয় নেতা-কর্মীরা। নানা বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে পৌরসভা নির্বাচনে বিএনপিসহ ক্রিয়াশীল সব দল অংশ নেওয়ায় বছর শেষে স্বস্তি আর ফুরফুরে মেজাজে সরকার।

বিদেশি ও লেখক-প্রকাশক হত্যা এবং সন্ত্রাসী হামলা: লেখক-ব্লগার হত্যার সবচেয়ে ভয়াবহ ঘটনা ঘটে ফেব্রুয়ারিতে। ২৬ ফেব্রুয়ারি একুশের বইমেলা থেকে বের হওয়ার পথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় মুক্তমনা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা ও বিজ্ঞান লেখক অভিজিৎ রায়কে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। হামলায় আহত হন তাঁর স্ত্রী রাফিদা আহমেদ। এরপর ব্লগার অনন্ত বিজয় দাস ও নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায় হত্যা; ঢাকার গুলশান এলাকায় ২৮ সেপ্টেম্বর ইতালীয় নাগরিক সিজার তাবেলা, ৩ অক্টোবর রংপুরে

জাপানি নাগরিক কুনিও হোশিকে হত্যা; ২৩ অক্টোবর দিবাগত রাতে রাজধানীর হোসনি দালানে তাজিয়া মিছিলের প্রস্তুতির সময় বোমা হামলায় দুজন নিহত ও আহত শতাধিক আহতের ঘটনা; ৩১ অক্টোবর নৃশংস হামলা চালিয়ে প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান জাগৃতির মালিক ফয়সাল আরেফিন দীপনকে হত্যা এবং একই দিন প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান শুদ্ধস্বরের প্রকাশক আহমেদুর রশীদ চৌধুরী ও তাঁর সঙ্গে থাকা দুই ব্লগার তারেক রহিম ও রনদীপম বসুর

গুরুতর জখমের ঘটনা; ২৬ নভেম্বর বগুড়ায় একটি শিয়া মসজিদে সন্ত্রাসী হামলায় মুয়াজ্জিন নিহত ও আরও তিনজন গুলিবিদ্ধ হন এবং সর্বশেষ ২৬ ডিসেম্বর রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার আহমদিয়া সম্প্রদায়ের একটি মসজিদে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে বোমা বহনকারী নিহত ও আরও কয়েকজন আহত হন।

এ ছাড়া দিনাজপুরের কান্তজিউর মন্দিরে হামলা এবং বিভিন্ন এলাকার ধর্মযাজকদের ওপরে হামলার ঘটনা ঘটে।বিরোধী দল সক্রিয় না থাকার পরও এ ধরনের হামলাগুলো সারা বছরই সরকারকে উদ্বিগ্ন রাখে। ক্ষমতাসীন দল হিসেবে এর দায় পড়ে আওয়ামী লীগের ওপর। ফলে গণমাধ্যম, পারিবারিক ও সামাজিক অনুষ্ঠানে এটা নিয়ে দলটির নেতারা নানা প্রশ্নের মুখোমুখি হন।

সার্বিক বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, সরকার আর আওয়ামী লীগ আলাদা। এ বছর আওয়ামী লীগের অনেক অগ্রগতি রয়েছে। দল গোছানো প্রায় শেষ। তাই আগামী বছর এর ধারাবাহিকতা চলবে। সরকারের উন্নয়ন এগিয়ে নিতে আওয়ামী লীগ সহায়তা করবে।