• সোমবার , ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

চিনি’র বাজারে ভানুমতির খেল-চলছে নানা কারসাজি


প্রকাশিত: ৭:৩৯ পিএম, ৮ মে ১৭ , সোমবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ১৯৯ বার

করিম ইব্রাহিম :  চিনি’র বাজার নিয়ে চলsuger-www.jatirkhantha.com.bdছে ভানুমতির খেল-চলছে নানা কারসাজি। বিশ্ববাজারে চিনির দাম কমলেও দেশের চিত্র উল্টো। রমজান সামনে রেখে চালের পর এবার অস্থির হয়ে পড়েছে চিনির বাজার। সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিপ্রতি দাম বেড়েছে ৫-৭ টাকা। অথচ বিশ্ববাজারে চিনির দাম ক্রমেই কমছে।

অন্যদিকে, দেশে পর্যাপ্ত চিনি মজুদ আছে। এরপরও পবিত্র রমজানের আগে হঠাৎ চিনির দাম বেড়ে যাওয়ায় মুনাফালোভী সংশ্লিষ্ট মিলমালিক, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীদের ‘কারসাজি’-কে দায়ী করছেন বাজার বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, অসাধু একটি সিন্ডিকেট পবিত্র রমজান সামনে রেখে চিনির দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। যথাযথ মনিটরিংয়ের (পর্যবেক্ষণ) ব্যবস্থা না থাকায় চিনির দাম হু হু করে বেড়েছে, যা কারও কাম্য নয়। সরকারের সংশ্লিষ্ট শাখার দুর্বলতার কারণে এমনটি হয়েছে বলে তারা অভিযোগ করেন।

রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে চিনি বিক্রি হচ্ছে ৬৭ থেকে ৭০ টাকায়। এক সপ্তাহ আগে প্রতি কেজি চিনি ৬২ থেকে ৬৪ টাকায় বিক্রি হয়। অর্থাৎ কেজিতে দাম বেড়েছে পাঁচ থেকে ছয় টাকা। খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, এক সপ্তাহ আগে বস্তাপ্রতি চিনি কিনতে দুই হাজার ৮৫০ থেকে দুই হাজার ৯শ টাকা ব্যয় করতে হয়। গত দু’দিন ধরে বস্তাপ্রতি তা ৪শ থেকে ৫শ টাকা বেড়ে তিন হাজার ৩৫০ থেকে তিন হাজার ৪শ টাকায় দাঁড়িয়েছে।

রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) পণ্যের মূল্যতালিকা অনুযায়ী, চিনির সর্বশেষ দর (রবিবার) দেখান হয়েছে ৬৭ থেকে ৭০ টাকা। গত সপ্তাহ আগে এর মূল্য ছিল ৬২ থেকে ৬৫ টাকা। অর্থাৎ সরকারি হিসাব অনুসারে চিনির দাম বেড়েছে।

রোববার জাতীয় সংসদে শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু জানান, দেশে বর্তমানে চিনির চাহিদা আনুমানিক ১৫ লাখ মেট্রিক টন। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের (বিএসএফআইসি) ১৫টি চিনিকলের আখপ্রাপ্তি ভেদে ৫৯ হাজার ৯৮৪ দশমিক ৫৫ মেট্রিক টন চিনি উৎপাদিত হয়েছে।

২০১৬-১৭ অর্থবছরের ২৫ মার্চ পর্যন্ত বেসরকারি সুগার রিফাইনারি মিল কর্তৃক চট্টগ্রাম সমুদ্রপথে ১৭ লাখ ২৫ হাজার ৯৬০ মেট্রিক টন র-সুগার (অপরিশোধিত চিনি) আমদানি হয়েছে। অর্থাৎ শিল্পমন্ত্রীর দেয়া তথ্য অনুযায়ী দেশে বর্তমানে চিনির কোনো সঙ্কট থাকার সম্ভাবনা নেই।

চিনির দাম বৃদ্ধি প্রসঙ্গে কারওয়ান বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী রহমত আলী জানান, এক সপ্তাহ আগেও খোলা চিনির বস্তার দাম কম ছিল। ৩-৪ দিন ধরে বস্তাপ্রতি ৪শ থেকে ৫শ টাকা বেশি দিয়ে কিনতে হচ্ছে। তবে প্যাকেট চিনির মূল্য আগের মতোই আছে বলে তিনি জানান।মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে ঠাকুরগাঁও ট্রেডিংয়ের ব্যবস্থাপক রাজিনুর ইসলাম বলেন, গত ১০ দিনে চিনির ৫০ কেজির বস্তার দাম বেড়েছে অন্তত ৩০০ টাকা। সেই হিসাবে প্রতি কেজি চিনিতে দাম বেড়েছে পাঁচ টাকারও বেশি।

জাতিসংঘের অঙ্গ-প্রতিষ্ঠান খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) সর্বশেষ প্রকাশিত তথ্য অনুসারে, বিশ্ববাজারে সদ্য শেষ হওয়া এপ্রিলে খাদ্যসামগ্রীর দাম কমেছে। চিনি, ভোজ্যতেলসহ প্রধান প্রধান খাদ্যসামগ্রীর উৎপাদন ও সরবরাহে যথেষ্ট সম্ভাবনা থাকায় বাজারে এর প্রভাব পড়েছে। এপ্রিলে খাদ্যপণ্যের গড় দাম নেমেছে ১৬৮ পয়েন্টে। গত মার্চ থেকে যা ১.৮ শতাংশ কম।

প্রতিবেদনে দেখা যায়, গড় খাদ্য সূচকে সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলেছে চিনি। পণ্যটির দর ৯.১ শতাংশ কমেছে। এ ছাড়া এক মাসের ব্যবধানে ভোজ্যতেলের দাম কমেছে ৩.৬ শতাংশ। অথচ বাংলাদেশের চিনির বাজার চলছে উল্টো রথে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, চাহিদার তুলনায় এবার চিনি বেশি মজুদ রয়েছে। এরপরও কেন চিনির দাম বাড়ান হলো- জানতে চাইলে মিল মালিকদের ওপর দোষ চাপালেন পাইকারি ব্যবসায়ীরা।

মৌলভীবাজার পাইকারি বাজার সমিতির সাধারণ সম্পাদক গোলাম মওলা বলেন, এ বছর মেঘনা গ্রুপের মেশিনারিজ সংক্রান্ত সমস্যার কারণে চিনির সরবরাহ কমে গেছে। গত এক সপ্তাহ ধরে সিটি গ্রুপও চাহিদার তুলনায় অর্ধেক মাল আমাদের ডেলিভারি দিচ্ছে। ফলে ট্রাকে করে মাল আনতে গিয়ে কমপক্ষে ১০ দিনেরও বেশি সময় ধরে অপেক্ষা করতে হচ্ছে।

সময় বেশি লাগার কারণে ট্রাকচালকদেরও বেশি টাকা ভাড়া দিতে হচ্ছে। এ ছাড়া গ্যাসের দাম বাড়ার কারণে চিনিসহ সব ধরনের পণ্য সরবরাহে বেশি খরচ গুণতে হচ্ছে। একই সঙ্গে ভ্যাটও আগের মতো সরকারকে পরিশোধ করতে হচ্ছে। তাহলে দাম বাড়ান ছাড়া আমাদের আর কোনো উপায় আছে কি- প্রশ্ন করেন তিনি।

অনেক ক্ষেত্রে খুচরা বিক্রেতারাও রমজানের সুযোগ নিয়ে দাম বাড়িয়ে দেন। এরপরও আমরা অহেতুক ভোক্তাদের কাছ থেকে বেশি দাম আদায় না করতে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের জানিয়ে দিয়েছি। যদি কেউ অযৌক্তিকভাবে দাম বাড়ান সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে সরকারের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি- যোগ করেন গোলাম মওলা।

চিনির ডিলার কৃষ্ণ চন্দ্র মজুমদার মিলমালিকদের ‘অযৌক্তিক’ অজুহাতকে দায়ী করে বলেন, এ বছর চিনির দাম কম হবে- এ কারণে অনেকে চিনি কেনা থেকে বিরত থেকেছেন। কিন্তু হঠাৎ দুটি বৃহৎ চিনি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান মেঘনা ও সিটি গ্রুপ চিনিকল এক সপ্তাহ ধরে বন্ধসহ নানা অজুহাত দেখিয়ে চিনির সরবরাহ অর্ধেকে নামিয়ে দিয়েছে। এ কারণে চিনির দাম বেড়েছে।

সিটি গ্রুপের মহাব্যবস্থাপক (বিপণন) বিশ্বজিৎ সাহা এ ধরনের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, অকারণেই চিনির দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। আমরা সময় মতো সঠিক পরিমাণ চিনি তাদের সরবরাহ করেছি।

ট্যারিফ কমিশনের সদস্য আব্দুল কাইয়ুম বলেন, বাজারে চিনি যথেষ্ট পরিমাণে মজুদ রয়েছে। চিনির কোনো সঙ্কট হওয়ার কথা নয়। ডলারের দাম বৃদ্ধির কারণে নিত্যপণ্যের দাম বাড়লেও চিনির দাম বাড়ার কোনো কারণ নেই। তিনি আরও বলেন, প্রতি সাতদিন পরপর বাজার মনিটরিং করা হচ্ছে। শেষ সপ্তাহের বাজারদর মনিটরিং করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে পাঠিয়ে দেয়া হবে। এরপর অভিযান চালিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।