• সোমবার , ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

চা বিক্রেতা থেকে প্রধানমন্ত্রী মোদি!


প্রকাশিত: ২:৫৬ পিএম, ১৪ মে ১৪ , বুধবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ১৬০ বার

শফিক আজিজি: ঢাকা, ১৪ মে ২০১৪:

 

আর মাত্র কয়েক ঘন্টা। দিল্লির মসনদের অধিকারীর নাম ঘোষণা করা হবে। কোন রকম অঘটন না ঘটলে এটাই এখনও পর্যন্ত বলা যায় চা বিক্রেতা নরেন্দ্র মোদী হতে যাচ্ছেন ভারতের সম্ভাব্য নতুন প্রধানমন্ত্রী। তিনি পাঁচ বছরের জন্য প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন। আপাতত সকল জরিপগুলো তাই বলছে। এবার হাওয়া বইছে নরেন্দ্র মোদীর দিকে। সেই হিসাবে তিনি এগিয়ে রয়েছেন। তবে তিনি তার মেয়াদ পূর্ন করতে পারবেন কিনা এনিয়ে নানা আশঙ্কা রয়েছে তার দেশের জনগনের মধ্যেও। তা যাই হোক না নরেন্দ্র মোদী এখন ভাল অবস্থানে রয়েছেন। মোদীর পাশে রয়েছে বিশ্বের বড় শক্তিগুলো। বিশেষ করে যারা ৫ জানুয়ারীর নির্বাচনে বাংলাদেশের বিরোধিতা করেছিলেন। যারা চেয়েছিলেন বাংলাদেশে এক দলীয় নয়, সকল দলের অংশগ্রহণে একটি গ্রহণযোগ্য ও স্বচ্ছ নির্বাচন হবে। জাতিসংঘ থেকে শুরু করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জার্মান, চীন, অষ্ট্রেলিয়া, কানাডা থেকে শুরু করে আরো বেশ কয়েকটি বড় শক্তি ঐক্যবদ্ধ ছিল। সেই সঙ্গে ছিল জাতিসংঘ। সবাই চেষ্টা করেছে সব দলের অংশগ্রহণে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের। তারা দু একটি দেশ ছাড়া এখন সব দেশে মনে করে এখনও বাংলাদেশে বিএনপির সঙ্গে সরকারের আলোচনা করে সংলাপ করে সমঝোতার মাধ্যমে একটা গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হওয়া প্রয়োজন। আর এই জন্য সব চেষ্টাও অব্যাহত রয়েছে।

সূত্র জানায়, বাংলাদেশের নির্বাচনে কংগ্রেস সরকার ওই সময়ে সরকারকে যথা সময়ে নির্বাচন করার জন্য সব ধরনের সহযোগিতা করে। নির্বাচন না করলে সমস্যা হতে পারে এমন মনে করে  কোন ধরনের সংকট যাতে তৈরি না হয় সেই চেষ্টাও করে। ওই সময়ে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিংও বাংলাদেশ সফর করেন। তিনি নির্বাচন করার জন্য তাগিদ দেন।

সকল আন্তর্জাতিক শক্তির বিরোধিতা করে তারা ওই সময়ে বাংলাদেশের নির্বাচন করার তাগিদ দেয়ার জন্য প্রভাবশালী শক্তি গুলো বিষয়টি ভাল ভাবে নেয়নি। আর তা না নেয়ার কারণে ওই সময়ে ভারতের সরকারের সঙ্গে ওই সব শক্তির একটা দূরত্ব তৈরি হয়। আর ওই দূরত্ব এখনও বিরাজমান। তবে তা তেমনভাবে প্রকাশ্যে না এলেও  ওই সব শক্তি চেষ্টা করেছে যাতে বাংলাদেশে আগাম একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হয়। আর সেটাতে সহায়তা করে ভারতের সরকার। ভারতে ১৬ মে নির্ধারিত হয়ে যাবে কে হচ্ছেন পরবর্তী প্রধামন্ত্রী। নরেন্দ্র মোদী সেটা হতে যাচ্ছেন। ফলে আন্তর্জাতিক শক্তিগুলো বাংলাদেশের নির্বাচনের জন্য আবার সরকারের উপর চাপ দিবে। অন্য দিকে বিএনপি মোদী ক্ষমতায় বসার পর আন্দোলনের নামার চেষ্টা করবে। সেই হিসাবে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এতে করে সরকারের উপর আগাম নিবাচনের চাপ আরো বাড়বে।

এদিকে জানা গেছে, ভারতের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী  নরেন্দ্র মোদি হলে তাকে  স্বাগত জানাতে পারে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। যদিও  ২০০২ সালের গুজরাটের দাঙ্গায় মুসলিমদের ওপর হত্যাযজ্ঞ চালানোর অভিযোগ উঠেছিল মোদীর বিরুদ্ধে। ওই সময়ে এই অভিযোগ উঠায় তাকে নিষিদ্ধ করে যুক্তরাষ্ট্র। তবে সেই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার আশ্বাস দেয়া হয়েছে বলে একটি বিশ্বস্ত সূত্র জানিয়েছে। আর এর প্রেক্ষিতে তিনি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র সফর করতে পারেন। যোগ দিতে পারেন সম্মেলনেও। কারণ মোদির ক্ষেত্রে তার বিরুদ্ধে আনা কোনো অপরাধ প্রমাণিত না হওয়ায় উৎরে যাবেন। সূত্রগুলো বলছে, নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে সেপ্টেম্বরের শুরুতেই যুক্তরাষ্ট্র সফরে যেতে পারেন মোদি।

এদিকে সোমবার ভারতের লোকসভা নির্বাচন শেষ হয়েছে। এরপর চারটি প্রধান নির্বাচন পরবর্তী জরিপে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে যাচ্ছে বলে জানা গেছে। জরিপ ঠিক হলে বিজেপি নেতা মোদি ভারতের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হবেন।  ২০০১ সালের পর থেকে  গুজরাটের দাঙ্গার জন্য, ওই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মোদিকে এতদিন পশ্চিমা দেশগুলো এড়িয়ে চলেছে। এমনকি ২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র মোদিকে ভিসা দিতে অস্বীকৃতি জানায়। ধর্মীয় স্বাধীনতার মারাত্মক লঙ্ঘন আইনের আওতায় তাকে ভিসা দেয়া হয়নি। পরে ভারতের জাতীয় পর্যায়ে মোদির উত্থান, ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের গুরুত্ব, এশিয়ায় চীনের বিরুদ্ধ শক্তি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে দেশটির গ্রহণযোগ্যতা, এসব কিছু যুক্তরাষ্ট্রকে মোদির বিষয়টি নিয়ে নতুনভাবে চিন্তা করতে সুযোগ করে দেয়। ইতোমধ্যে মোদির সঙ্গে দেখা করেছেন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূতরা।

এদিকে যদিও মোদীর দাবি ২০০২ সালে কোনো অপরাধ করেননি। ভারতের সর্বোচ্চ আদালতের একটি রায়েও  বলা হয়েছে, তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। এদিকে মোদি প্রধানমন্ত্রী হলে তাকে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা দেয়া হবে কিনা এনিয়ে অনেকে হিসাব নিকাশ করলেও একটি সূত্র জানিয়েছে তাকে আমন্ত্রন জানানো হয়েছিল, তিনি পরে যুক্তরাষ্ট্র সফর করবেন বলে জানিয়েছেন। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই ব্যাপারে এখনও কিছু বলছে না। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ভারত যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত সম্পর্ক বিবেচনায় মোদিকে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা দেয়া হবে।

এদিকে এই হিসাবে আরো দেখা যাচ্ছে, ভারতের নির্বাচন নিয়ে সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, ভারতের পাঁচ সপ্তাহব্যাপী নির্বাচন গণতান্ত্রিক পদ্ধতির অনন্য সাধারণ ক্ষমতার কার্যকর উদাহরণ। এই নির্বাচনে প্রশংসাও করেছে। নির্বাচনী সহিংসতায় আসামে ৪১ জন মুসলিম নিহত হওয়ার পরও ভারতের এই নির্বাচনকে শান্তিপূর্ণ বলেছে। সেখান কার মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র বলেছেন, ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ককে আমরা অর্থনৈতিক ও কৌশলগত কারণে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক হিসেবেই বিবেচনা করা হয়। এই সম্পর্ককে এগিয়ে নিতে ও উচ্চাকাঙ্ক্ষী বিষয়গুলো বাস্তবায়ন করতে আমরা ভারতীয় জনগণের পছন্দের নেতাদের সঙ্গে কাজ করার জন্য সামনের দিকে তাকিয়ে আছি।

সূত্র জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস সদস্যরা ২০০৫ সালে আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা আইন এর আওতায় নরেন্দ্র মোদির ভিসা নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়েছিল। পরবর্তীতে মোদি বিরোধিতা কিছুটা হ্রাস পায়। এদিকে গত মার্চ মাসে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে মার্কিন অভিবাসন নীতি বিশেষজ্ঞ রুথ ওয়াসেমের এক  প্রতিবেদনে বলা হয়, মোদি প্রধানমন্ত্রী হলে তিনি কূটনৈতিক ছাড় পাবেন। এর আওতায় ভিসা পাওয়ারও যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন। সেখানে ২০১০ সালে ভারতের সুপ্রিম কোর্টের এক রায়ের উল্লেখ করেন। মার্কিন অভিবাসন আইনের আওতায় মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধকারী কিংবা মানবাধিকারের মারাত্মক লঙ্ঘনকারী অথবা এ ধরনের অপরাধে জড়িত থাকা বা চেষ্টা চালানো কোনো ব্যক্তিকে যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকতে না দেয়ার এখতিয়ার ওবামার আছে। তবে তিনি ছাড় পেতে পারেন।

১৬ মে নয়া দিল্লি থেকে একযোগে ২৮টি প্রদেশের ৫৪৩টি আসনের ভোটের ফল প্রকাশ হবে। তাতে ঘটবে এতোদিনের জল্পনা-কল্পনার অবসান।  এখনই শুরু হয়ে গেছে ক্ষমতার পালাবদলে রাজনৈতিক সমীকরণে ফল মেলানোর পর্ব। দেশটির রাজনীতির কিং মেকাররা কর্মকৌশল নির্ধারণে ব্যস্ত। ৭ এপ্রিল শুরু হওয়া লোকসভা নির্বাচনে মাসজুড়ে ছিল কংগ্রেস ও বিজেপির শীর্ষ নেতাদের দৌড়ঝাঁপ। শুরুর দিকে মোদি ঢেউ থাকলেও পরবর্তীতে পাল্টাতে থাকে ভোটের চিত্র।  সোমবার লোকসভা নির্বাচনের নবম ও শেষ পর্বে পশ্চিমবঙ্গ, উত্তর প্রদেশ ও বিহারের ৪১টি আসনে ভোটগ্রহণ হয়। ভোট পর্ব শেষ করেই দলের শীর্ষ নেতারা দিল্লিতে ফিরে এসেছেন। দলের শীর্ষ ফোরামের বৈঠকে হবে। সময়সূচি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। কংগ্রেস ভোটের ফল ঘোষণার পরপরই দলের চেয়ারপারসন ও ভাইস চেয়ারম্যান রাহুল গান্ধী বৈঠকের পর্ব শুরু করতে পারেন।

উল্লেখ, গত দুটি লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেস জয়ী হয়ে পরপর দুই মেয়াদে ক্ষমতায় ছিল কংগ্রেসের নেতৃত্বে ইউপিএ। ২০০৯ সালে ১৫তম লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেস এককভাবে পেয়েছিল ২০১টি আসন।ওই সময়ে বিজেপি পায় ১১২টি আসন। পরে কয়েকটি আঞ্চলিক দলকে সঙ্গে নিয়ে সরকার গঠন করে সোনিয়া গান্ধীর কংগ্রেস। এবার বিজেপি এগিয়ে রয়েছে ।