চালের বাজার হঠাৎ করে আগুন কেন ?
সাইফুল বারী মাসুম : চালের বাজার হঠাৎ করে আগুন অবস্থা। গত এক দেড় মাসে প্রতি কেজিতে চালের দাম বেড়েছে ১০ থেকে ১২ টাকা। চালের দাম যেভাবে বাড়ছে তাতে সবাই উদ্বিগ্ন। কেন বাড়ছে চালের দাম? অভিযোগ করা হয়েছে চাল সিন্ডিকেট করে দাম বাড়ানো হয়েছে।
ওদিকে বাজারে যখন চালের দাম উর্ধ্বমুখি তখন সরকারের গুদামে চালের মজুদ কমছে বলে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে এমন খবরাখবর দেখা যাচ্ছে।চালের দাম বাড়ায় ত্রেতা-বিক্রেতা ছাড়াও বিস্ময় প্রকাশ করছেন বাজার বিশেষজ্ঞরাও।
ঢাকার মালিবাগ এলাকার একজন বিক্রেতা জানালেন, তিনি যেসব চাল বিক্রি করছেন তার মধ্যে সবচেয়ে কম দামের চাল ৪৬ থেকে ৪৮ টাকা কেজি। এর চেয়ে কম দামের চাল তার কাছে নেই। অথচ দেড় মাস আগেও এ চালের দাম ছিল ৩২ থেকে ৩৪ টাকা কেজি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, একদিকে দাম বেড়েছে অন্যদিকে বাজারে চালের জোগান কমে গেছে। চালের বিক্রেতা ইমান আলী বলছেন বাজারে চাল কম । আগে এক চালান থাকতে আরেক চালান বাকি দিতো। এখন নগদ টাকা দিলেও মাল দিতেছে না।চালের বাজারে কেন এই আগুন?
কয়েকটি কারণ তুলে ধরছেন চাল কলের মালিকরা – হাওর অঞ্চলে ফসলহানি, বিভিন্ন জায়গায় ধান চিটা হয়ে উৎপাদন কম হওয়া এবং ধানের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়া। তবে দেশের অন্যতম কৃষি অর্থনীতিবিদ ড. আসাদুজ্জামান এসব যুক্তি পুরোপুরি গ্রহণ করছেন না। এটা সত্যি হাওর এলাকা সহ কিছু জায়গায় দুর্যোগ হয়েছে, ফসলের ক্ষতি হয়েছে, কিন্তু এমন কিছু হয়নি যাতে হুহু করে দাম বাড়বে।
তবে সিন্ডিকেটের কথা শোনা যায়। সেটি প্রমাণিতও হয়নি, অপ্রমাণিতও হয়নি .. চালের এত অভাব হয়নি আর এমন কিছু দুর্যোগ হয়নি। হাওর এলাকার ধান উৎপাদন তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়। বাজারে যখন চালের দাম উর্ধ্বমুখি তখন সরকারের গুদামে চালের মজুদ কমছে বলে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে এমন খবরাখবর দেখা যাচ্ছে।
বোরো মৌসুমে সরকার আট লাখ টন চাল সংগ্রহ করার লক্ষ্যমাত্রা স্থির করলেও তার ধারে কাছেও যেতে পারেনি এখনো। কারণ চাল কলের মালিকরা সরকারের কাছে চাল বিক্রি করতে আগ্রহী নয়। মিল মালিকরা স্বীকার করেছেন, সরকার চাইলেও দামের কারণে তারা সরকারকে চাল বিক্রি করতে পারছেন না।
পাবনা রাইস মিল এসোসিয়েশনের সভাপতি ইদ্রিস আলী বিশ্বাস বলছেন, সরকার কেজি প্রতি ৩৪ টাকা দিতে চাইছে যা বাজার দরের চেয়ে অনেক কম। ধানের রেট যেখানে ২৪ টাকা সেখানে চালের রেট মিনিমাম ৩৮ টাকা হতে হবে। তাহলে মোটামুটি আমরা সমান-সমান যেতে পারি।
সরকারের চালের মজুদ না বাড়ালে পরিস্থিতি সঙ্গিন হতে পারে বলে সাবধান করলেন ড. আসাদুজ্জামান। তিনি বলেন , তার জানা মতে সরকারের হাতে তিন লাখ টনেরও কম পরিমাণ চালের মজুদ রয়েছে।
সরকারের হাতে চাল নেই, এ খবরে মানুষের মধ্যে উৎকণ্ঠা বাড়বে, সংশয় বাড়বে, ফলে দাম আরো বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
জানা গেছে, পরিস্থিতির গুরুত্ব বিবেচনা করে চাল আমদানির চিন্তা করছে সরকার। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা ভিয়েতনাম সফর করছেন। তবে বিদেশ থেকে চাল আমদানির এই সিদ্ধান্ত কতটা কাজ দেবে তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন ড আসাদুজ্জামান।
তার সন্দেহের প্রধান কারণ সরকারি দপ্তরের দীর্ঘসূত্রিতা। ফাইল চালাচালি করতে এক দেড় মাস যাবে, তারপর চাল আসবে বন্দরে, খালাস হবে, তারপর এলএসডি,সিএসডিতে যাবে, তারপর সরকার তা বাজারে ছাড়বে.. দুই-তিন মাসের ধাক্কা।