• শনিবার , ১৬ নভেম্বর ২০২৪

চামড়ার বাজারে তেলেসমাতি-সিন্ডিকেট মৌসুমী ব্যবসায়ীরা পথে বসতে চলছে


প্রকাশিত: ৮:০৯ পিএম, ১৪ সেপ্টেম্বর ১৬ , বুধবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৩৬ বার

আসমা খন্দকার  :   চামড়ার বাজারে তেলেসমাতি চলছে-মৌসুমী ব্যবসায়ীদের পথে বসতে চলছে নানা নোংরা রাজনীতি। 22কতিপয় চামড়া ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট এসব অপকর্মে জড়িত। এদের সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে মৌসুমী ব্যবসায়ীরা একেকটা গরুর চামড়া কিনছিল পনেরো শ থেকে ষোলো শ টাকা দরে, কিন্তু এখন আড়তদাররা দাম বলছে এগারো শ টাকা। এ অবস্থায় মাথায় হাত মৌসুমী ব্যবসায়ীদের।

সরেজমিনে দেখা গেছে, চামড়ার বাজারে 23অস্থিরতা বিরাজ করছে। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। তাঁদের দাবি, ট্যানারি মালিক ও কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কারণে গত কয়েক বছরের তুলনায় সর্বনিম্ন মূল্যে কাঁচা চামড়া বিক্রি হয়েছে। সাধারণ মানুষের কাছ থেকে তাঁরা যে দামে চামড়া কিনেছেন, আড়তদারদের কাছে এর চেয়ে কম দামে বিক্রি করতে হয়েছে।

আজ বুধবার পুরান ঢাকার পোস্তা এলাকায় গিয়ে অন্তত পাঁচজন ও সায়েন্স ল্যাব এলাকায় চারজন মৌসুমি ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।প্রতিবছর কোরবানির সময় সাধারণ মানুষের কাছ থেকে চামড়া কিনে আড়তদারদের কাছে বিক্রি করেন রামপুরা এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ রফিক। আজ সায়েন্স ল্যাবের অস্থায়ী কাঁচা চামড়ার বাজারে তাঁর সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, ‘একেকটা গরুর চামড়া কিনছি পনেরো শ থেকে ষোলো শ টাকায়। এখন আড়তদারেরা কইতাছে এগারো শ টাকা। কী করব, বুঝতেছি না।’

সায়েন্স ল্যাবে কথা হলো আরেকজন মৌসুমি ব্যবসায়ী মিরপুরের বাসিন্দা সিরাজুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এক বড় ভাইয়ের পরামর্শে ১০০টির মতো চামড়া কিনেছি। যে দামে কিনছি, সেই দাম পাইনি। প্রতিটি চামড়ায় অন্তত ১০০ টাকা করে লস হইছে।’রাজধানীর পোস্তা কাঁচা চামড়ার সবচেয়ে বড় বাজার। আজ বুধবার ওই এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, শায়েস্তা খাঁ রোড থেকেই শুরু হয়েছে চামড়ার বাজার। মৌসুমি ব্যবসায়ীরা রিকশা বা ভ্যানে করে চামড়া নিয়ে এলেই দৌড়ে যাচ্ছেন আড়তদারেরা।

দাম শুনে মুষড়ে পড়ছেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। তাঁরা একটু ভালো দাম পেতে ঘুরে বেড়াচ্ছেন এদিক-সেদিক। কেনা দামের চেয়ে এবার আড়তে ৩০০-৪০০ টাকা দাম কম বলা হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে বড় ধরনের লোকসানের আশঙ্কায় পড়েছেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা।
রফিক নামের একজন ব্যবসায়ী বলেন, ‘যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে আইছি। এখন যে দাম কইতাছে, তাতে তো মূল টাকাই উঠব না।’ পোস্তা এলাকায় আরেক মৌসুমি ব্যবসায়ী লালু এসেছেন মোহাম্মদপুর থেকে। বললেন, ‘দাম ভালো পাব বলে সায়েন্স ল্যাবের ওইখানে বিক্রি করি নাই। এখন এখানে এসে দেখি সায়েন্স ল্যাবের মোড়ে বিক্রি করা ভালো ছিল।

পোস্তা এলাকার আড়তদারদের দাবি, সরকার নির্ধারিত দামেই তাঁরা চামড়া কিনছেন। তবে এখন লবণের দাম বেশি, শ্রমের মূল্য বেশি। সবকিছু মিলিয়ে তাঁরা যে দামে চামড়া কিনছেন, তা ঠিকই আছে। তাদের সংগঠন বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি দেলোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, মৌসুমি ব্যবসায়ীরা যেন ক্ষতির মুখে না পড়েন, এ জন্য কোরবানির ঈদের এক সপ্তাহ আগে ট্যানারি মালিকদের দুই সমিতি ও চামড়া ব্যবসায়ী সমিতি চামড়ার দাম নির্ধারণ করে দেয়। এখন ক্ষতি হলে তাঁদের (মৌসুমি ব্যবসায়ী) দায় নিতে হবে। গতকাল যেভাবে তাঁরা চামড়া সরবরাহ করেছেন, এতে মনে হয়েছে তাঁদের লাভ বেশি হয়নি, আবার ক্ষতিও হয়নি।

দেলোয়ার হোসেন বলেন, এখন আড়তগুলোতে চামড়ায় লবণ মাখানোর কাজ চলছে। কাল থেকে সিটি করপোরেশনের সহায়তায় ওই এলাকা পরিচ্ছন্নতার কাজ শুরু হবে।৯ সেপ্টেম্বর ট্যানারি মালিকদের দুই সমিতি ও চামড়া ব্যবসায়ী সমিতি সংবাদ সম্মেলন করে চামড়ার দাম নির্ধারণ করে। ২০১৩ সালে ঢাকায় প্রতি বর্গফুট গরুর লবণযুক্ত চামড়ার দাম ধরা হয়েছিল ৮৫-৯০ টাকা। এ বছর প্রতি বর্গফুট ৫০ টাকা।