চাপ গুঁতোগুঁতি-তামিমের কান্না
স্পোর্টস রিপোর্টার : চাপ গুঁতোগুঁতি’র অবসান হলো তামিম এর। ফিটনেস ও ফর্ম নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে কঠিন পরিস্থিতিতেই পড়েছিলেন তামিম ইকবাল। ব্যাটে ঠিকমতো রান না থাকায় ছিলেন নিজের ছায়া হয়ে। তিন মাস পরই ওয়ানডে বিশ্বকাপ। এমন একটি টুর্নামেন্টের আগে তামিম তাই ক্যারিয়ারের কঠিনতম সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলেন। কিন্তু কেন? সেই প্রসঙ্গে কিছুই পরিষ্কার করেননি তামিম। বাঁহাতি এই ওপেনার জানিয়েছেন, ভিন্ন ভিন্ন অনেক কারণেই তিনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
নিজের শহর চট্টগ্রামে বসে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেওয়ার আগে তামিম হয়ে ওঠেন আবেগপ্রবণ। কান্নাভেজা কণ্ঠে তার ঘোষণা ছিল, সাধারণত এরকম পরিস্থিতিতে মানুষ নিজের কথা লিখে নিয়ে আসে। কিন্তু আমার সেরকম কোনও প্রস্তুতি নেই। আমার পুরো ক্যারিয়ারেই কখনও আগে থেকে কিছু লিখে নিয়ে কোনও কথা বলিনি।
তামিমের স্ট্রাইক রেট নিয়ে সমালোচনা দীর্ঘদিনের। সেই সঙ্গে নতুন করে যোগ হয়েছিল অফ-ফর্ম এবং ফিটনেস ইস্যু। পাশাপাশি তামিম-সাকিবের দ্বন্দ্বের বিষয়টি প্রকাশ্যে এনেছিলেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। এছাড়া আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম ওয়ানডের আগের দিন ফিটনেস ইস্যু নিয়ে তামিমের বক্তব্যকে ভালোভাবে নেননি কোচ চণ্ডিকা হাথুরসিংহে ও বোর্ড প্রধান। পুরো ফিট না হয়ে খেলার কথা মিডিয়াকে জানানোর কারণে নাজমুল হাসান পাপন ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন। সবকিছু মিলিয়ে তামিম প্রবল চাপে ছিলেন বলা চলে। দল ব্যর্থ হলে অধিনায়কের কাঁধে দায় চেপে বসা স্বাভাবিক। তার অবসরের ঘোষণার পেছনে এসব বিচ্ছিন্ন ঘটনা ভূমিকা রেখেছে কিনা সেই প্রশ্ন ঘুরেফিরে আসছে।
পরিবারের সঙ্গে আলোচনা করেই অবসর নিয়েছেন তামিম। তিনি এটুকু নিশ্চিত করেছেন, কঠিনতম সিদ্ধান্তের পেছনে ভিন্ন ভিন্ন অনেক কারণ ছিল। তার কথায়, গতকাল (বুধবার) আফগানিস্তানের বিপক্ষে আমার শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছি। আমি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নিচ্ছি। এই সিদ্ধান্ত এখন থেকেই কার্যকর হতে যাচ্ছে। এর পেছনে আকস্মিক কোনও ব্যাপার নেই। আমি নিজে থেকে এ নিয়ে চিন্তা করছিলাম। ভিন্ন ভিন্ন কারণ আছে, যেগুলো এখানে বলার প্রয়োজন মনে করছি না।
তামিম ভিন্ন ভিন্ন কারণগুলো স্পষ্ট না করলেও ক্রিকেটাঙ্গনে এ নিয়ে জলঘোলা চলছে। তার টি-টোয়েন্টি অ্যাপ্রোচ, অধিনায়কত্ব, পারফরম্যান্স, স্ট্রাইক রেট, সাকিবের সঙ্গে বৈরিতা এবং ফিটনেস ইস্যু নিয়ে নিয়মিত মন্তব্য করেছেন বোর্ড প্রধান। অনেকের প্রশ্ন, বিসিবি সভাপতির ওপর অভিমান করেই কি অবসরের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তামিম? এর উত্তর তিনি প্রকাশ্যে জানাবেন কিনা সময়ই বলে দেবে।
বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের মধ্যে তামিমই সবচেয়ে বেশি পরিসংখ্যান ফলো করেন। ক্রিকেটের কোথায় কী হচ্ছে, কার কত রান, সবকিছুই যেন থাকে তার নখদর্পনে। সেক্ষেত্রে নিজের সাম্প্রতিক পরিসংখ্যানের দিকে তাকিয়ে কিছুটা হতাশ ছিলেন তিনি। গণমাধ্যম থেকে শুরু করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, সবখানেই তার পারফরম্যান্স নিয়ে সমালোচনা হচ্ছিল। অবসরের সিদ্ধান্তের পেছনে এসব চাপের ভূমিকাও দেখছেন ক্রিকেটাঙ্গনের কেউ কেউ।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হিসেবে ভাবা হচ্ছে, সাকিব-তামিমের সম্পর্কের অবনতির ঘটনা। মাঠের ভেতরে এই দ্বৈরথ দেখা না গেলেও ড্রেসিংরুমে এর প্রভাব ঠিকই বিদ্যমান। এসব নিয়ে কানাঘুষা যেন থামার নয়। তবে অবসর ইস্যু নিয়ে বেশি ঘাঁটাঘাটি না করার আহ্বান জানিয়েছেন তামিম। বিদায়বেলায় শেষবারের মতো সবার কাছে তার অনুরোধ, একটাই অনুরোধ করবো, আমার বিষয়টি এখানেই শেষ করে দিন। অন্তত আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের জন্য। এ নিয়ে আর বেশি গুঁতোগুঁতি করবেন না।
কেন কিংবা কী, কী হতে পারত না হতে পারত। এর সমাপ্তি টেনে দিন। সবসময়ই বলেছি, যেকোনও ব্যক্তির চেয়ে দল সবসময়ই বড়। দলের দিকে মনোযোগ দিন। এই সিরিজে আরও দুটি ম্যাচ আছে, যে সিরিজ আমাদের জেতা উচিত বলেই বিশ্বাস আমার। এরপর বড় দুটি ট্রফি আছে (এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপ)। সতীর্থদের জন্য সংবাদমাধ্যমের কাছে তামিমের অনুরোধ, কেউ ভালো খেললে প্রশংসা করুন, খারাপ খেললে সমালোচনা করুন। বাট শুধুই ক্রিকেটে থাকুন। এর সীমানা অতিক্রম করবেন না, ক্রিকেটের বাইরে বিষয় টেনে আনবেন না।
ক্রিকেটাঙ্গনের আশা, এমন অনেক ধারণার ব্যাপারে তামিম একদিন সব খোলাসা করবেন! ভীষণ কষ্ট মনে চেপে তিনি আজ বলেছেন, আমার আসলে বেশি কিছু বলার নেই। আমি চেষ্টা করেছি, সত্যিই নিজের সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি… বলেই কান্নায় মুখ লুকিয়েছেন টুপিতে। একটু পর আবার বলতে শুরু করেন, ‘হয়তো আমি যথেষ্ট ভালো ছিলাম না, কিংবা ভালো ছিলাম… জানি না, তবে যখনই মাঠে নেমেছি, নিজের শতভাগ দেওয়ার চেষ্টা করেছি। আরও অনেক কিছু আছে… অনেক কিছু বলতে চাই।
তবে আপনারা যেমন দেখছেন, কথা বলতে পারছি না। আশা করি, আপনারা এই পরিস্থিতিকে সম্মান করবেন। কথা বলার জন্য পরিস্থিতিটা সহজ নয়। বিশেষ করে, এত বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার পর যখন ছেড়ে দিচ্ছি, কাজটা সহজ নয়। আশা করি, আপনারা বুঝবেন। আমি দুঃখিত যে, এত স্বল্প সময়ের নোটিশে আপনাদের ডাকা হয়েছে। সব সংবাদমাধ্যমকে ধন্যবাদ জানাই।