চাঁদার খনি-ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের লাখ লাখ টাকা চাঁদাবাজি-কয়েদি কেনাবেচা !
এস রহমান : ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের চাঁদার খনি এখন ভয়াবহ রুপ নিচ্ছে।প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা চাঁদাবাজি হচ্ছে প্রকাশ্য ।চলছে কয়েদি কেনাবেচা’ও! কারা প্রশাসনের সব কর্মকর্তাদের চোখের সামনে প্রকাশ্য চলছে অবৈধ চাঁদাবাজি।চাঁদার ভাগ চলে যাচ্ছে ওপর মহলের কর্মকর্তাদের পকেটেও।ফলে সবাই সবকিছু জেনেও নিরব দর্শক হয়ে থাকছেন।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে কৃতদাসের মতো কয়েদিদের কেনাবেচা হচ্ছে। সপ্তাহে যেখানে মূল্য হাকা হয় ১ থেকে ৪ হাজার টাকা পর্যন্ত। আর ইলিশ ফাইলের নির্যাতন তো আছেই।
সদ্য জামিনে মুক্ত হয়ে এমন নিমর্ম ঘটনার বর্ণনা দেন এক ভুক্তভোগী। সাবেক ডিআইজি প্রিজন্স মেজর অবসরপ্রাপ্ত শামসুল হায়দার সিদ্দিকী জানান, দেখা করতে যে টাকা নেওয়া হচ্ছে তা দুর্নীতি।
অপরাধ করে বা পরিস্থিতির শিকার হয়ে অনেককেই যেতে হয় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের লাল দালানে। এরপর শুরু হয় লোহার শিকের ওপারে এক ভিন্ন জীবন। আলোর পথ দেখিয়ে নিরাপদ রাখার প্রত্যয় যেখানে নিত্য স্লোগান। সেখানে লাল দালানের প্রাচীরের অন্তরালের বাস্তবতা কি আদৌ তাই?কি দিন কি রাত হাজতবাসে অভিজ্ঞতা সুখের নয়। পদে পদে বঞ্চনা আর নির্যাতনের কাহিনী লুকিয়ে আছে এ লাল দালান ঘিরে।
চোখের জ্বলে দুই মাস জেলে থাকার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন এক হতভাগ্য ব্যক্তি। তিনি বলেন, ‘জেলের ভেতরে আমদানি নামে একটি জায়গা আছে, যমুনা-৪ বিশাল বড় একটা হল রুম। এখানে সবাইকে লাইন ধরে বসায়। তার কারণ হল ওখান থেকে কয়েদিদের বিক্রি করা হয়। সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা ইনচার্জ। একটা বা দুইটা লোককে পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে কিনে। কোনো লোক যদি বেশি ধনী হয় তাহলে বেশি দামে ক্রয় করে। বলা হয় প্রতি সপ্তাহে ৩ হাজার ৬০০ করে টাকা দিতে হয়। যেভাবে কৃতদাস বেচাকেনা হতো জেলখানাতে ঠিক সেভাবে মানুষের বেচাকেনা হয়’।
ইলিশ ফাইল, শব্দটি জেলখানার আদ্ভুত নির্যাতনের নাম।
ইলিশ ফাইল সম্পর্কে হতভাগ্য ব্যক্তি বলেন, ‘একজনের পা আমার বুকে, আমার পা আরেকজনের বুকে এভাবে শোয়ানো হয়। যেখানে সর্বচ্চ ৪০ জন লোকের থাকার জায়গা সেখানে আড়াইশ লোকের থাকার ব্যবস্থা করা হয়। যারা টাকা না দেয় তাদের দুইপাশে দুইজন শক্তিশালী লোক শোয়ানো হয়। দুইপাশ থেকে এমনভাবে চাপ দেয়া হয় যেন বুকের ছাতনা ভেঙ্গে যায়। গোসল করতে গেলে গোসল করতে দেওয়া হয় না। এত কষ্টের জায়গা সেটা ভোগ করার মতো না। আমি ২৪ ঘন্টা ওই ফাইলে ছিলাম যেটা ভোলার নয়। এই বিষয়টা আমার মনে হয় সরকারের দেখা উচিত’।
এছাড়াও রয়েছে টোকেন বাণিজ্যের রমরমা ব্যবসা। কয়েদিদের সঙ্গে দেখা করতে কারা কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে নিতে হয় এ টোকেন। কারা বিধি অনুযায়ী, কয়েদিদের সাথে স্বজনদের দেখা-সাক্ষাতের কোনো বিনিময় মূল্য নেই।
কয়েদিরে স্বজনরা অভিযোগ করে বলেন, এখানে গেলাম তারা বলতেছে ২০০ টাকা দিয়ে টোকেন কেনা লাগবে তারপরে আধাঘন্টা পরে দেখা করা যাবে। ২০০ টাকা না দিলে দেখা করতে দেয় না’।
কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দীন বলেন, ‘বিরাট একটা কারাগার এত কম জনবল দিয়ে তদারকি করা কঠিন। তদারকির জন্য জনবল বাড়ানো প্রয়োজন।
সরকারি কর্মচারীদের শাস্তি দেওয়ার বিষয়গুলো, হয় হাতেনাতে ধরতে হবে অথবা সাক্ষী প্রমাণ দিয়ে শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। প্রমাণ করার যখন সময় আসে তখন স্বাক্ষী খুঁজে পাওয়া যায় না। সিন্ডিকেটের কারণে এরকম হয়রানির শিকার হচ্ছেন আসামিরা। তবে নতুন কারাগারে এ সমস্যা দূর হবে কি-না, তা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে’।সাবেক ডিআইজি (প্রিজন্স) মেজর অবসরপ্রাপ্ত শামসুল হায়দার সিদ্দিকী বলেন, ‘লোকবল সংকটের কথা বলে এড়ানো যাবে না দায়িত্ব।
কারা কর্তৃপক্ষের লোকদের মাঝে মধ্যে রাউন্ডে যাওয়ার কথা। কয়েদিদের কোনো সমস্যা আছে কি-না সেটা জিজ্ঞেস করার কথা কারো কোন সমস্যা আছে কিনা। জেলখানার জেলার এবং সুপার যদি সৎ হয়ে কাজ করে ওই জেলখানার ৮০ ভাগ দুর্নীতি কমতে বাধ্য।এই কারা কর্মকর্তা আরো জানালেন, সাক্ষাতপ্রার্থীদের সমস্যা নিরসনে নতুন একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। যা শিগগিরই চালু হবে, টাঙ্গাইল কারাগারে।