চট্টগ্রামে লোমহর্ষক পরকীয়ার বলি তৈয়ব
চট্টগ্রাম থেকে আশরাফ উদ্দিন রনি : চট্টগ্রামে লোমহর্ষক পরকীয়ায় বলি হয়েছে ব্যবসায়ী তৈয়ব আলী। পুলিশের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে হত্যার নেপথ্যে এদের গোপন ক্রিয়া-কলাপ। একপর্যায়ে নিহতের ছেলে পাকরাও হলে সে ফাঁস করে দেয় মা বোন ও খালার পরকীয়ার নানা কাহিনী। পুলিশ জানায়, স্ক্র্যাপ ব্যবসায়ী তৈয়ব আলী খুনের অজানা তথ্য বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে। স্ত্রী, কন্যা, ছেলে ও শ্যালিকার হাতে কিভাবে খুন হলো ব্যবসায়ী তৈয়ব তা ১৬৪ ধারায় আদালতে খুলে বলে সোহেল।
পুলিশ জানায়, তৈয়বের স্ত্রী কোহিনুর বেগম ছিল পরকীয়ায় মত্ত। তার বাসায় সব সময় অচেনা পুরুষের যাতায়াত ছিল। মায়ের দেখাদেখি এসএসসি পরীক্ষার্থী মেয়ে বৃষ্টিও জড়িয়ে পড়ে প্রেমে। তাই মা-মেয়ে তাদের প্রেম-পরকীয়া নির্বিঘ্ন করতে তৈয়ব আলীকে বাসায় থাকতে দিত না। তাকে মেসে থাকতে বাধ্য করে।
এদিকে তৈয়ব আলীকে খুন করে লাশ খালে ফেলে দেয়ার সময় পালিয়ে যাওয়া রাব্বিকে (তৈয়বের মেয়ের প্রেমিক) ঘটনার চার দিন পরও গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। তাকে গ্রেফতারে অভিযান চলছে।
এর আগে পুলিশ ব্যবসায়ী তৈয়বকে হত্যার অভিযোগে তার স্ত্রী, কন্যা, ছেলে ও শ্যালিকাকে গ্রেফতার করে।তাদের গ্রেফতারের পরই হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন হতে শুরু করে।শুক্রবার রাতে নগরীর পশ্চিম মাদারবাড়ি এলাকায় নিজ বাসায় স্ক্র্যাপ লোহা ব্যবসায়ী তৈয়ব আলীকে (৫০) স্ত্রী, ছেলে, মেয়ে ও শ্যালিকা মিলে পিটিয়ে ও ছুরিকাঘাত করে হত্যা করে। শনিবার রাতে ওই এলাকার খালে বস্তাবন্দি লাশ ফেলতে গেলে স্থানীয়রা সোহেলকে (তৈয়বের ছেলে) আটক করে।
তবে তৈয়ব আলীর মেয়ে বৃষ্টির কথিত প্রেমিক রাব্বি পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। সেও ছিল ঘাতকদের দলে। পরে সোহেলের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী তার মা কোহিনুর বেগম, বোন বৃষ্টি আক্তার ও খালা জাহানারা বেগমকে গ্রেফতার করে পুলিশ। রোববার হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে সোহেল।
জানা যায়, তৈয়ব আলীরা ৭ ভাই ৫ বোন। তিনি সবার বড়। বড় হওয়ায় ভাইবোনদের লালন-পালন করেছেন তিনি। ভাইবোনদের সুখে-দুঃখে সবার আগে ছুটে যেতেন তৈয়ব আলী। মাদারবাড়ি এলাকায় স্ক্র্যাপের ব্যবসা রয়েছে তার। তৈয়ব আলী বিয়ে করেছেন ২৩ বছর আগে। তার স্ত্রী কোহিনুর বেগমের গ্রামের বাড়ি বরিশালে। বিয়ের পর থেকেই স্ত্রী কোহিনুরের বিরুদ্ধে অভিযোগের অন্ত ছিল না।
তৈয়বের প্রতিবেশী মো. রুবেল জাতিরকন্ঠ কে জানায়, তৈয়ব আলীর দাম্পত্যজীবন সুখের ছিল না। তৈয়ব আলী একাধিকবার তার বাসায় স্ত্রীকে অন্য পুরুষের সঙ্গে আপত্তিকর অবস্থায় পেয়েছেন। এ নিয়ে এলাকার সর্দারদের কাছে বিচারও দিয়েছিলেন। কিন্তু ছেলেমেয়ে বড় হয়ে যাওয়ায় তাদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে তিনি আর এ নিয়ে সামনের দিকে এগোননি। কিন্তু যে নিকটজনদের সম্মানের কথা ভেবে তৈয়ব চুপ করে গিয়েছিলেন, বাধ্য হয়ে মেসে বসবাস করছিলেন, তাদের হাতেই তাকে খুন হতে হয়েছে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সদরঘাট থানার এসআই অলিউল্লাহ জাতিরকন্ঠকে জানান, হত্যাকাণ্ডে জড়িত রাব্বিকে খোঁজা হচ্ছে। তাকে গ্রেফতার করতে নগরীর বিভিন্ন জায়গায় অভিযানও চালানো হচ্ছে। তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন ট্র্যাকিং করা হচ্ছে। খুব শিগগির তাকে গ্রেফতার করা সম্ভব হবে।