চট্টগ্রামে মন্ত্রী-সাংসদের বিতণ্ডা মস্তানী সমর্থকদের দুই পক্ষে হাতাহাতি
বিশেষ প্রতিনিধি চ্ট্গ্রাম : চট্টগ্রাম নগরে গণপরিবহন ব্যবস্থা নিয়ে আয়োজিত এক গোলটেবিল আলোচনা সভায় বাগ্বিতণ্ডায় জড়িয়েছেন গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী মোশাররফ হোসেন এবং চট্টগ্রাম-১০ আসনের সাংসদ ও সাবেক মন্ত্রী আফছারুল আমীন। চট্টগ্রাম নগরের উড়ালসড়কের পক্ষ-বিপক্ষ নিয়ে এই বিতণ্ডায় জড়ান তাঁরা।
একপর্যায়ে আফছারুল আমীন মন্ত্রীর দিকে তেড়ে যান। এই সময় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন ও অন্যরা তাঁদের নিবৃত্ত করেন। এর জের ধরে সভাকক্ষেই হাতাহাতিতে লিপ্ত হন দুই নেতার সমর্থকেরা। ফলে মাঝপথেই পণ্ড হয় যায় আলোচনা সভা।
শনিবার রাত পৌনে আটটার দিকে চট্টগ্রাম নগরের ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের ছয়তলার সেমিনারকক্ষে এই ঘটনা ঘটে। ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশ (আইইবি) এর চট্টগ্রাম কেন্দ্র ‘টেকসই জনবান্ধব গণপরিবহন ব্যবস্থা ও করণীয়’ শীর্ষক এই গোলটেবিল আলোচনা সভার আয়োজন করে। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন মন্ত্রী মোশাররফ হোসেন।
সভায় চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) কর্তৃক নির্মিত ও নির্মাণাধীন উড়ালসড়কগুলো নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়। আলোচনা সভায় প্রবন্ধ উপস্থাপক প্রকৌশলী সুভাষ বড়ুয়া ও আলী আশরাফ, স্থপতি জেরিনা হোসেন ও তসলিম উদ্দিন চৌধুরী উড়ালসড়ক নির্মাণের যৌক্তিকতা নিয়ে সমালোচনা করেন।
এরপর ঢাকা যাওয়ার তাড়া থাকায় বক্তব্য দেন গৃহায়ণমন্ত্রী মোশাররফ হোসেন। তিনি বলেন, ‘যখন বহদ্দারহাট, কদমতলী ও মুরাদপুর উড়ালসড়ক হচ্ছে তখন আমি মন্ত্রী থাকলে হয়তো অনুৎসাহিত করতাম। আর করলেও আপনাদের সঙ্গে আলোচনা করে করতাম। ফি দিলে চুয়েট সংস্থার অনুকূলে সমীক্ষা প্রতিবেদন দেয়।’
সভায় মন্ত্রী আরও বলেন, বহদ্দারহাট ও কদমতলী উড়ালসড়কে তেমন গাড়ি উঠে না। গাড়ি না উঠলে এসব উড়ালসড়ক রেখে লাভ নেই। গাড়ি না উঠলে একপর্যায়ে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো এই উড়ালসড়কগুলো ভেঙে ফেলতে হবে।
মন্ত্রীর পর বক্তব্য শুরু করেন আফছারুল আমীন। তিনি বলেন, ‘উড়ালসড়কগুলো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমলেই হয়েছে। এই সময় আমরা কেউ মন্ত্রী ছিলাম, কেউ এমপি ছিলাম। এর দায়ভার আমাদেরই নিতে হবে।’ এ সময় পাশে বসা মন্ত্রী এর আপত্তি জানিয়ে নিজের কৈফিয়ত দেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু বক্তব্য অব্যাহত রাখেন সাংসদ।
একপর্যায়ে বলেন, ‘আপনার আগ্রহে এ অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছে। প্রকৌশলী সুভাষ বড়ুয়াকে দিয়ে আপনি এ পেপার উপস্থাপন করিয়েছেন।’ এর জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘আপনাকে (সাংসদ) তো ভাড়া করে নিয়ে আসা হয়েছে।’ এই কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে নিজের চেয়ার থেকে উঠে মন্ত্রীর দিকে তেড়ে যান সাংসদ। মন্ত্রীর উদ্দেশে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় সাংসদ বলেন, ‘আমি চট্টগ্রামের ছেলে। আমাকে চিনিস।’ এই সময় সিটি মেয়র নাছির উদ্দীন ও অন্যরা তাঁদের নিবৃত্ত করেন। মন্ত্রী ও সাংসদের বাগ্বিতণ্ডার সময় তাঁদের সমর্থকেরা হাতাহাতিতে লিপ্ত হন।
তবে এরপর পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে আবার বক্তব্য দেন মন্ত্রী মোশাররফ হোসেন। তিনি পুরো ঘটনাকে অনাকাঙ্ক্ষিত উল্লেখ করে দুঃখ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘হঠাৎ করে হয়ে গেছে। মনে করবেন কিছুই হয়নি।’ এরপর মন্ত্রী ও সাংসদ করমর্দন করেন।
মন্ত্রীর পর সিটি করপোরেশনের মেয়র নাছির উদ্দীন তাঁর বক্তব্যে পুরো ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘এই সভাটি আরেকদিন করলে ভালো হবে। তখন পরিকল্পিতভাবে করা উচিত।’
মেয়রের পর চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম বক্তব্য দেন। এরপর বক্তব্য সিডিএ চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম বক্তব্যে দিতে শুরু করলে চেয়ার থেকে উঠে সভাকক্ষ থেকে বেরিয়ে যান মন্ত্রী।
সভাকক্ষ থেকে বেরিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামার সময় আফছারুল আমীনের ১০ থেকে ১৫ জন সমর্থক স্লোগান দিয়ে মন্ত্রীর পথরোধ করেন। এই সময় মন্ত্রী তিন-চার মিনিট অপেক্ষা করে পুনরায় সভাকক্ষে প্রবেশ করেন। এরপর সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন ও সাংসদ আফছারুল আমীন মন্ত্রী মোশাররফ হোসেনকে সঙ্গে নিয়ে সভাকক্ষ থেকে বের হয়ে আসেন। নিচে মন্ত্রীকে গাড়িতে তুলে দেন তাঁরা। এর একপর্যায়ে সভা সমাপ্ত ঘোষণা করেন আয়োজকেরা। সভায় অতিথিদের বক্তব্য শেষে অংশগ্রহণকারীদের নিয়ে মুক্ত আলোচনা হওয়ার কথা ছিল।
আইইবি এর চট্টগ্রাম কেন্দ্রের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হারুণ সভায় বলেন, ‘কারও ইন্ধনে বা আগ্রহে এই সভার আয়োজন করা হয়নি। আর কাউকে ভাড়া করেও আনা হয়নি।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৩ সালের ১২ অক্টোবর বহদ্দারহাট উড়ালসড়ক ও চলতি বছরের ৩০ জানুয়ারি কদমতলী উড়ালসড়কের উদ্বোধন করেন।