• সোমবার , ২৫ নভেম্বর ২০২৪

৪০ লাখ ঘুষখোর বাছিরের কেল্লাফতে-!


প্রকাশিত: ৮:৫৪ পিএম, ৬ জুলাই ১৯ , শনিবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ১১০ বার

শফিক রহমান : ঘুষ খেয়ে শিনাজুরি করতে গিয়ে ধরা খেয়েছেন দুদক পরিচালক এনামুল বাছির।তদন্তে ঘুষখোর বাছিরের কেল্লাফতে-! দুই এক দিনের মধ্যে মামলা দায়ের করে দুদক’ই তাকে গ্রেফতার করবেন। এনিয়ে সার্বিক প্রক্রিয়া এগিয়ে চলেছে। দুদক কর্মকর্তারা বলছেন, বাছির অত্যন্ত ধুরন্ধর বলে’ই এমন করেছে। সে দুদকের সন্মান রক্ষা না করে বরং ধূলায় লুটিয়ে দিয়েয়ে মর্যাদা।

ওদিকে ফরেনসিক পরীক্ষায় ঘুষ লেনদেন নিয়ে কথোপকথনের সত্যতা পাওয়ায় বাছির আত্মগোপন করতে পারেন বলেও অনেকে ধারণা করছেন। ইতিমধ্যে আদালতে ফরেনসিক প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। ঘুষ কেলেঙ্কারির অনুসন্ধান শেষে চলতি সপ্তাহেই বাছিরের বিরুদ্ধে মামলা হতে পারে।জানা গেছে, কথোপকথন, পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি ও প্রমাণাদি দুই কর্মকর্তার ঘুষ লেনদেনের বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। এসবের ভিত্তিতেই কারারুদ্ধ ডিআইজি মিজান ও দুদক পরিচালক এনামুল বাছিরকে আসামি করে মামলা হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দুদক পরিচালক এনামুল বাছির ঘুষ গ্রহণ করেছেন, এটা অডিও রেকর্ডে প্রমাণ আছে। অন্যদিকে ডিআইজি মিজান নিজেই ঘুষ দেয়ার কথা প্রকাশ্যে বলেছেন। দুদক মনে করছে, এর মাধ্যমে ডিআইজি মিজান নিজের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিজেই প্রতিষ্ঠিত করেছেন।দু’জনই ঘুষ লেনদেনে জড়িয়েছেন, যা দণ্ডবিধির ১৬১, ১৬৫(১), ১০৯ ধারা ও ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) (ক্ষমতার অপব্যবহার) ধারায় অজামিন ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। মিজান দুদকের মামলায় বর্তমানে কারাগারে আছেন। ঘুষ লেনদেন মামলায় এবার সাময়িক বরখাস্ত এনামুল বাছিরকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হতে পারে।

দু’জনকেই রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে। এদিকে মিজানসহ চারজনের অবৈধ সম্পদ তদন্তের জন্য দুদক পরিচালক মঞ্জুর মোর্শেদের নেতৃত্বে তিন সদস্যের টিম গঠন করা হয়েছে। এর সদস্যরা কাজ শুরু করে দিয়েছেন।দু’জনের বিরুদ্ধে ঘুষ কেলেঙ্কারির ঘটনা অনুসন্ধান শেষ করে এনেছে দুদক পরিচালক শেখ মো. ফানাফিল্লার নেতৃত্বে তিন সদস্যের টিম। ওদিকে মিজান ও বাছিরের ঘুষ লেনদেন সংক্রান্ত অডিও ক্লিপ বা কথোপকথনের ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেলের (এনটিএমসি) কাছে আবেদন করে দুদক।

এনটিএমসি বিশেষজ্ঞ টিম দিয়ে বেশ কয়েকদিন সময় নিয়ে দু’জনের কথোপকথন ছাড়াও এ সংক্রান্ত পারিপার্শ্বিক অন্যান্য বিষয়াদি পরীক্ষা করে। এর মধ্যে ছিল- তাদের মধ্যে কতবার কথা হয়েছে, কোথায় কোন টাওয়ারের অধীন কথা হয়েছে, দুদকের মামলা থেকে রেহাই পেতে ডিআইজি মিজান কী কী করেছেন, অনুসন্ধান কর্মকর্তার সঙ্গে একান্ত বৈঠকে কী কী বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন, তারা কতবার এসএমএস বিনিময় করেছেন প্রভৃতি।

ফরেনসিক পরীক্ষায় ‘মামলার সুপারিশ করতে বাধ্য হওয়া বা মামলার সুপারিশসহ প্রতিবেদন দাখিল ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না’- দুদক পরিচালক বাছিরের এমন কথোপকথনের অডিও নিবিড় পরীক্ষা করা হয়। এতে দু’জনের মধ্যে পুরো কথোপকথনের প্রমাণ মেলে।অভিযোগ ওঠার পর এনামুল বাছির আত্মপক্ষ সমর্থন করে বলেছিলেন, তিনি ঘুষ নেননি। ডিআইজি মিজান তার কণ্ঠ জোড়া লাগিয়ে বা নকল করে অডিও ক্লিপ তৈরি করেছেন। কিন্তু ফরেনসিক পরীক্ষায় তার বক্তব্য টেকেনি।তিনি যেভাবে কথা বলেন, যখন থামেন, একটির পর একটি কথা যেভাবে বলেছেন তাতে প্রমাণ হয়েছে এখানে কোনো জোড়া লাগানো ক্লিপ নেই।

পুরোটাই আসল-অবিকল। যেভাবে কথা বলেছেন, পরিকল্পনা করে সেভাবেই ডিআইজি মিজান তার মুঠোফোনে সেই কথোপকথন ধারণ করেন।ডিআইজি মিজান ৪০ লাখ টাকা ঘুষ দেয়ার কথা একটি বেসরকারি টেলিভিশনকে সাক্ষাৎকার দিয়ে বলেছেন। দুদকের অনুসন্ধান টিম ২৫ লাখ টাকা ঘুষ লেনদেনের অডিও প্রমাণ পেয়েছে। বাকি ১৫ লাখ টাকা কখন কীভাবে দিয়েছেন, সে বিষয়ে অডিও ক্লিপে কিছু নেই। তবে দুদকের মামলায় ৪০ লাখ টাকার ঘুষ লেনদেনের অভিযোগই থাকছে বলে জানা গেছে।

কারণ ডিআইজি মিজান প্রকাশ্যে স্বীকার করেছেন, তিনি দুদক পরিচালককে ৪০ লাখ টাকা ঘুষ দিয়েছেন। এখন এটি প্রমাণের দায়িত্বও তার। কারণ তিনি ঘুষ দিয়ে দুদকের হাত থেকে বাঁচতে চেয়েছেন। তবে শেষরক্ষা হচ্ছে না নিশ্চিত হওয়ার পর অভিযোগটি তিনি প্রকাশ্যে নিয়ে আসেন।ফলে তিনিই বলতে পারবেন ১৫ লাখ টাকা কোন উৎস থেকে নিয়ে কখন বাছিরকে দিয়েছেন। এ কারণে মামলার পর তাকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে-।

ফরেনসিক পরীক্ষায় ১৫ জানুয়ারি রমনা পার্কে ঘুষের ২৫ লাখ টাকা লেনদেনবিষয়ক কথোপকথনকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। ওই অডিও ক্লিপে পরিচালক বাছিরের উদ্দেশে ডিআইজি মিজানকে বলতে শোনা যায়, ‘আপনার জন্য কিছু বই এনেছি। এগুলোয় আইনের বইটই আছে।’জবাবে বাছির বলেন, নিয়ে আসেন টাকা… কোন ফর্মে আনছেন? বাজারের ব্যাগে… না!’ ডিআইজি মিজান বলেন, ‘বাজারের ব্যাগে। বড় ভলিউম না… এই টোয়েন্টি ফাইভ তো। তেমন বড় ভলিউম না… সব এক হাজার টাকার নোট।’

বাছির বলেন, ‘আচ্ছা…। আমি আপনার সঙ্গে ফ্রেন্ডশিপ চাই… এইটা হইল কথা। বাকিগুলো হইল…!’ এ পর্যায়ে ডিআইজি মিজান বলেন, ‘না না শুনেন আর ১৫ লাখ টাকা আমাকে নেক্সট ৮-১০ দিন সময় দিলে আমি ম্যানেজ করে ফেলব।’জবাবে বাছির বলেন, ‘এত সময় দেয়া যাবে না… আগামী সপ্তায়…। এভাবেই তাদের মধ্যে ঘুষ লেনদেনের কথা এগোতে থাকে।