ঘাত-প্রতিঘাতে পাকিস্তানের রাজনীতিতে ভুট্টো পরিবার
নিউজলাইন সাময়িকী অবলম্বনে আশাফা সেলিম.ঢাকা: পাকিস্তানের রাজনীতিতে ভুট্টো পরিবারের তিন প্রজন্ম দেখার সুযোগ পেয়েছে দেশটির মানুষ। দেশটির উত্থান-পতনের রাজনীতিতে ভুট্টো পরিবারের দল বলে পরিচিত পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) বেশ কয়েকবার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় ছিল। কিন্তু তৃতীয় প্রজন্মের ভুট্টোর নেতৃত্বাধীন পিপিপি এখন অনেকটাই মলিন।
পাকিস্তানের ঘাত-প্রতিঘাতের রাজনীতিতে বর্তমানে পিপিপির অবস্থান মূল্যায়ন করতে গিয়ে খ্যাতিমান কলাম লেখক আয়াজ আমির বলেন, ‘এই পিপিপি আর সেই পিপিপি নেই। দলটিকে কেউ পরাজিত করেনি, তারা নিজেরাই নিজেদের পরাজিত করেছে।’
ষাট ও সত্তরের দশকে পাকিস্তানের রাজনীতিতে আলোচিত ও সমালোচিত মুখ জুলফিকার আলী ভুট্টো। তাঁর হাত ধরে ১৯৬৭ সালে গঠিত হয় পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি)। ১৯৭১-৭৩ সাল পর্যন্ত দেশটির প্রেসিডেন্ট ছিলেন তিনি। ১৯৭৩-১৯৭৭ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী।
১৯৭৭ সালের নির্বাচনে পিপিপি সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়। ওই নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ তোলে বিরোধী দল। মওকা পেয়ে যান তৎকালীন সেনাপ্রধান মোহাম্মদ জিয়া-উল-হক। সেনা-অভ্যুত্থানে সরকার উৎখাত হয়। জুলফিকার আলীকে বন্দী করা হয়। রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের মামলায় ১৯৭৯ সালে তাঁকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকর করা হয়।
বাবার মৃত্যুর পর দলের হাল ধরেন বড় মেয়ে বেনজির ভুট্টো। নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে মুসলিম বিশ্বের ইতিহাসে প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হন তিনি। ১৯৮৮-১৯৯০ এবং ১৯৯৩-১৯৯৬ এই দুই দফায় পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন তিনি। তাঁকে বলা হতো ‘ডটার অব দ্য ইস্ট’। ২০০৭ সালে আততায়ীর হাতে নিহত হন বেনজির।
বেনজির নিহত হওয়ার পর কার্যত দলের কর্তৃত্ব নেন তাঁর স্বামী বিতর্কিত ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদ আসিফ আলী জারদারি। নিজে নেন দলের কো-চেয়ারম্যানের পদ। চেয়ারম্যান হিসেবে ঘোষণা করা হয় ছেলে বিলাওয়াল ভুট্টোর নাম। ব্যাপক দুর্নীতির জন্য পাকিস্তানে জারদারির ‘মিস্টার টেন পারসেন্ট’ বলে কুখ্যাতি রয়েছে।
২০০৮ সালের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জোট সরকার গঠন করে পিপিপি। জারদারি নির্বাচিত হন দেশের প্রেসিডেন্ট। ২০০৮-২০১৩ সাল পর্যন্ত এ পদে ছিলেন তিনি।
২০১৩ সালের নির্বাচনে তরুণ বিলাওয়ালকে সামনে রেখে বৈতরণী পার হতে চেয়েছিল পিপিপি। কিন্তু দলের ভরাডুবি ঠেকানো যায়নি।
দলকে পুনরুজ্জীবিত করতে ভুট্টো পরিবারের তৃতীয় প্রজন্ম বিলাওয়ালকে কাজে লাগানোর নানা চেষ্টাই করছে পিপিপি। কিন্তু সেই চেষ্টা খুব একটা হালে পানি পাচ্ছে বলে মনে করছেন না রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা।
বিলাওয়ালের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ তাঁর বাবা জারদারির ছায়া থেকে বেরিয়ে আসা। ২৬ বছর বয়সী এই তরুণ তা কতটা করতে সক্ষম হবেন, সেটি দেখার বিষয়।
দলটির নেতা-কর্মীরা বিশ্বাস করেন, বিলাওয়াল এখনো বয়সে তরুণ। তিনি রাতারাতিই দলকে পরিবর্তন করে দিতে পারবেন না। রাজনৈতিক পরিবারে তাঁর জন্ম। দল ও দেশকে নেতৃত্ব দেওয়ার যোগ্যতা তাঁর আছে। কিন্তু সে জন্য তাঁকে সময় দিতে হবে।
কলাম লেখক আয়াজ আমিরের মতে, বয়স কম ও অভিজ্ঞতার অভাব সত্ত্বেও দলের পুনরুজ্জীবনে বিলাওয়ালকে আশার প্রতীক হিসেবে দেখা হয়। কারণ দলের সমর্থকেরা তাঁকে তাঁর বাবা জারদারির তুলনায় ভালো বিকল্প মনে করেন।