ঘাতক কার্গো জাহাজ এমভি নার্গিসের ধাক্কায় এমভি মোস্তফার ৩৩ যাত্রীর সলিল সমাধি
বিশেষ প্রতিবেদক.ঢাকা : পাটুরিয়া থেকে দৌলতদিয়া যাওয়ার পথে পদ্মা নদীতে আজ রোববার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে ঘাতক কার্গো জাহাজ এমভি নার্গিস এর ধাক্কায় এমভি মোস্তফা নামে যাত্রীবাহী একটি লঞ্চ ডুবে গেছে। এ ঘটনায় সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত নদীতে তল্লাশি চালিয়ে ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকর্মীরা ছয় শিশু, আট নারীসহ ৩৩ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করেছে বলে ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন কর্মকর্তা কে এম তারিক জানান।
ডুবে যাওয়া লঞ্চ থেকে উদ্ধার পাওয়া যাত্রী হাফিজুর রহমান শেখের ভাষ্য, বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পাটুরিয়া ঘাট থেকে লঞ্চটি দৌলতদিয়ার উদ্দেশে ছাড়ে। রওনা হওয়ার ১৫ মিনিট পরে আড়াআড়িভাবে আসা এমভি নার্গিস নামের একটি কার্গো জাহাজ লঞ্চটির মাঝখান বরাবর আঘাত করে। এতে লঞ্চটি উল্টে যায়।
এ ছাড়া গুরুতর অবস্থায় উদ্ধার করা এক শিশুকে হাসপাতালে নেওয়ার পর সে মারা যায়। তবে লঞ্চে কতজন যাত্রী ছিল, তা এখনো জানা যায়নি।লঞ্চ থেকে বেঁচে যাওয়া যাত্রীদের কয়েকজন জানান, কার্গো জাহাজের ধাক্কায় লঞ্চটি ডুবে যায়। পরে এটি উল্টে ভেসে ওঠে।
উদ্ধার কাজের তদারক করতে নৌ পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান ঘটনাস্থলে পৌঁছেছেন। জেলা প্রশাসক রাশিদা ফেরদৌস, পুলিশ সুপার বিধান ত্রিপুরাসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও সেখানে রয়েছেন। পাটুরিয়া ও দৌলতদিয়া ঘাটে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে খোলা হয়েছে দুটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ।
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) উদ্ধারকারী জাহাজ আইটি ৩৮৯ ডুবে যাওয়া লঞ্চটিকে দড়ি দিয়ে বেঁধে তীরে আনার চেষ্টা করছে। ঢাকা থেকে যাওয়া ফায়ার সার্ভিসের ১৫-১৬ জন ও স্থানীয় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা উদ্ধারকাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
উদ্ধারকারী জাহাজ আইটি ৩৮৯ থেকে মৃতের সংখ্যা নিশ্চিত করে মানিকগঞ্জ ও গোয়ালন্দ প্রতিনিধি জানান, ঘটনার পরপরই নদীতে থাকা অন্যান্য লঞ্চ, নৌকা ও ট্রলার গিয়ে বেঁচে যাওয়া যাত্রীদের উদ্ধার করে। তবে কতজন এখনো নিখোঁজ, তা জানা যায়নি।
দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ডুবে যাওয়া লঞ্চ থেকে গুরুতর অবস্থায় এক শিশুকে উদ্ধার করা হয়। শিবালয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পর শিশুটি মারা যায়। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক বিকাশ মণ্ডল শিশুটির মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন।
গোয়ালন্দ পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কমিশনার কিয়াম শিকদার জানান, নিহত শিশুটির নাম স্মৃতি। তার বাবার নাম ফারুক শেখ। তাদের বাড়ি এই ওয়ার্ডেই। ফারুক তাঁর ছেলেমেয়ে, স্ত্রী ও শাশুড়িকে নিয়ে ঢাকা থেকে বাড়ি ফিরছিলেন। এ দুর্ঘটনায় তিনি বেঁচে গেলেও তাঁর স্ত্রী ও শাশুড়ি এখনো নিখোঁজ। ছেলেকে গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
যাত্রী হাফিজুর রহমান শেখের ভাষ্য, বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পাটুরিয়া ঘাট থেকে লঞ্চটি দৌলতদিয়ার উদ্দেশে ছাড়ে। রওনা হওয়ার ১৫ মিনিট পরে আড়াআড়িভাবে আসা একটি কার্গো জাহাজ লঞ্চটির মাঝখান বরাবর আঘাত করে। এতে লঞ্চটি উল্টে যায়। তিনি লঞ্চের ডেকে ছিলেন। ধাক্কায় তিনি নদীতে পড়ে যান। তিনি আরও জানান, যাঁরা লঞ্চের ডেকে ছিলেন, তাঁরা বের হতে পেরেছেন। তবে ভেতরে থাকা যাত্রীরা কেউ বের হতে পারেননি। হাফিজুরের বাড়ি বাগেরহাটে।