ঘন কুয়াশায় মৃত্যুদূত-বঙ্গবন্ধু সেতুতে দুর্ঘটনায় নিহত ভূমিমন্ত্রীর ছেলেসহ ৮
স্টাফ রিপোর্টার: ঘন কুয়াশায় মৃত্যুদূত-বঙ্গবন্ধু সেতুতে দুর্ঘটনায় নিহত ভূমিমন্ত্রীর ছেলেসহ ৮ জন। বঙ্গবন্ধু সেতুর টাঙ্গাইল অংশে আজ শনিবার সকালে পরপর কয়েকটি দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তির সংখ্যা বেড়ে সাতজনে পৌঁছেছে। নিহতদের মধ্যে ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফের ছেলেও রয়েছেন। দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন কমপক্ষে ৩০ জন। প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ বলছে, কুয়াশার কারণে এসব দুর্ঘটনা ঘটে। সেতুর একটি লেন দিয়ে এখন গাড়ি চলছে।
দুর্ঘটনায় হতাহতদের মধ্যে একজনের পরিচয় জানা গেছে। তিনি হলেন, ভূমিমন্ত্রীর ছেলে রানা শরীফ। বাকিদের পরিচয় জানা যায়নি।বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্ব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আখেরুজ্জামান বলেন, সেতুর উত্তর লেনে ৪০ নম্বর পিলারের ওপর গরুবাহী ট্রাকের পেছনে পাবনা থেকে ঢাকাগামী সরকার পরিবহনের যাত্রীবাহী একটি বাস সজোরে ধাক্কা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই পাঁচজন নিহত ও ১২ জন আহত হন। এরপরই ১০ থেকে ১৫টি গাড়ি ওই জায়গায় এসে একটি আরেকটির সঙ্গে ধাক্কা খায়।
এই গাড়িগুলোর মধ্যে একটি অ্যাম্বুলেন্সে ছিলেন ভূমিমন্ত্রীর ছেলে রানা শরীফ (৩৯)। তিনি চিকিৎসার জন্য পাবনা থেকে ঢাকায় যাচ্ছিলেন। অ্যাম্বুলেন্সে পেছন থেকে আসা গাড়ির ধাক্কায় রানা শরীফ অসুস্থ হয়ে পড়েন। টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। নিহতের লাশ স্বজনেরা পাবনায় নিয়ে গেছেন। ওই দুর্ঘটনায় বিভিন্ন যানবাহনের চার থেকে পাঁচজন যাত্রী আহত হন।
এদিকে সিরাজগঞ্জ থেকে দুর্ঘটনাস্থলে উদ্ধারকাজে যাওয়ার সময় ফায়ার সার্ভিসের গাড়ির সঙ্গে পুলিশের গাড়ির সংঘর্ষ হয়। এতে তিন পুলিশ সদস্য ও ফায়ার সার্ভিসের চার সদস্য আহত হন। ঘটনাস্থলে সংবাদ সংগ্রহ করতে মোটরসাইকেলে করে যাওয়ার সময় ট্রাকের ধাক্কায় মাছরাঙা ও সময় টেলিভিশনের দুই সাংবাদিক আহত হন। তাঁরা হলেন মাছরাঙা টিভির সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি রিফাত রহমান ও সময় টিভির প্রতিনিধি রিংকু কণ্ডু।
আহত ব্যক্তিদের সিরাজগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল ও টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। নিহত ব্যক্তিদের লাশ সেতুর পূর্ব থানায় রয়েছে। তাঁদের নাম-পরিচয় জানা যায়নি।
আখেরুজ্জামান বলেন, একই সময় সেতুর দক্ষিণ লেনে ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গগামী দুটি ট্রাকের সংঘর্ষে দুজন আহত হয়েছেন। তাঁদের পরিচয় জানা যায়নি। এরপর সকাল পৌনে ১০টার দিকে দক্ষিণ লেনে সেতুর ৩০ নম্বর পিলারের ওপর ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গগামী হানিফ পরিবহনের বাসকে পেছন থেকে আসা দুটি ট্রাক সজোরে ধাক্কা দেয়। এতে বাসের সহকারী (অজ্ঞাত) ছিটকে পড়ে চাকায় চাপা পড়ে নিহত হন। আহত হন দুজন। হতাহত ব্যক্তিদের পরিচয় জানা যায়নি।
আখেরুজ্জামান আরও বলেন, দুর্ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনী, র্যাব, পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও সেতু কর্তৃপক্ষÿযৌথভাবে উদ্ধারকাজ চালাচ্ছে। সকাল সাড়ে ছয়টায় উত্তর লেনে দুর্ঘটনার পর সাড়ে আটটা পর্যন্ত দুই ঘণ্টা সেতুতে যান চলাচল বন্ধ ছিল। সাড়ে আটটার পর এক লেন যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়। পৌনে ১০টার দিকে আবার দুর্ঘটনার পর এক ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। পৌনে ১১টার দিকে সেতুর এক লেন দিয়ে যান চলাচল শুরু হয়েছে।
বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রকিবুল ইসলাম বলেন, দুর্ঘটনায় নিহত বাসের সহকারীর লাশ থানায় রাখা হয়েছে। এখন উত্তরবঙ্গগামী একটি লেন দিয়ে যানবাহন চলাচল করছে।এদিকে দুর্ঘটনায় ভূমিমন্ত্রীর ছেলে রানা শরীফের মৃত্যুতে মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীসহ অনেকে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।
এঁদের মধ্যে রয়েছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান, ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, ভূমি মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি রেজাউল করিম হীরা প্রমুখ। তাঁরা প্রত্যেকে তাঁর রুহের মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করেন।