• রোববার , ২৪ নভেম্বর ২০২৪

‘গ্রেনেড হামলায় জিয়া পরিবার জড়িত’


প্রকাশিত: ১:১২ এএম, ২২ আগস্ট ১৮ , বুধবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৫৭ বার

 

 

 

বিশেষ প্রতিনিধি : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনায় জিয়া পরিবার যে জড়িত ছিল, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। মঙ্গলবার সকালে ২১ আগস্ট গ্রেনডে হামলায় নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের পর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক স্মরণ অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি।

সেদিনের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রকাশ্যে এরকম হামলার ঘটনা ঘটার কোনো দৃষ্টান্ত আমার মনে হয় নেই।… সেদিন হামলাকারীরা যেভাবে এখানে এসে হামলা করল, স্বাভাবিকভাবেই সবাই বুঝতে পারল, কারা এর পেছনে রয়েছে।শেখ হাসিনা বলেন, তারা বলেছিল, ১৫ আগস্ট যেভাবে আমার বাবার মৃত্যু হয়েছে, আমি নাকি সেই একই পথে যাব। খালেদা জিয়া এক বক্তৃতায় আমার নাম নিয়ে বলেছিলেন, ‘হাসিনা সে প্রধানমন্ত্রী তো দূরের কথা, বিরোধী দলের নেতাও হতে পারবে না। আওয়ামী লীগ ১০০ বছরেও ক্ষমতায় যেতে পারবে না।’ তার পরেই কিন্তু ওই হামলা। খুব স্বাভাবিকভাবে যে কোনো মানুষের কাছে এটা নতুন

উপলব্ধি হবে, আমাকে তো মারবেই মারবে, আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করে দেবে, যাতে আওয়ামী লীগ আর শত বছরেও ক্ষমতায় যেতে না পারে। ওই রকম একটি হামলার পর আলামত সংগ্রহ করার নিয়ম থাকলেও তখনকার সরকার আর পুলিশ লিপ্ত হয়েছিল আলামত নষ্ট করার কাজে। হামলায় আহতদের সাহায্য করতে আওয়ামী লীগের অন্য নেতাকর্মীরা যখন ছুটে গেলেন, তখন পুলিশ তাদের ওপর টিয়ার শেল ছোড়ে।

এখানে ডিজিএফআইয়ের এক অফিসার কর্মরত ছিল, সে পুলিশ হেড কোয়ার্টারে ফোন করে জানতে চায়- এটা কি হচ্ছে? এটা কেন হচ্ছে? তাকে ধমক দিয়ে বলা হয়েছিল, তোমার ওখানে কী কাজ? তুমি ওখান থেকে সরো। যে সমস্ত পুলিশ কর্মকর্তা সাহায্য করতে চেষ্টা করেছিল, বিএনপি সরকারের পক্ষ থেকে তিরস্কার করা হয়েছিল। তাদেরকে সরে যেতে বলা হয়েছিল।

আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ হলে সাধারণত যেখানে ট্রাক রাখা হতো, সেদিন ট্রাকটি সেখান থেকে একটু সামনে ছিল। সেদিনের ঘটনা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার এটা মনে হয়, আল্লাহর কোনো একটা ইশারা ছিল। নইলে আমরা যেখানে ট্রাক দাঁড়া করাই সেখানে যদি থাকত, তাহলে কিন্তু ওই গ্রেনেডটা আমাদের ট্রাকের ভেতরে এসে পড়ত।

আওয়ামী লীগ সভাপতি অভিযোগ করেন, র‌্যালি-সমাবেশের আগে বিভিন্ন ভবনের ছাদে আওয়ামী লীগের ভলান্টিয়াররা নিয়োজিত থাকলেও, সেদিন তাদের কাউকে ছাদে উঠতে দেওয়া হয়নি। তৎকালীন বিএনপি সরকার শুরুতে ওই সমাবেশের অনুমতি দেয়নি, পরে ২০ আগস্ট রাত সাড়ে ১১টায় সমাবেশ করার অনুমতি দিয়েছিল উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, জানতাম না, এর পেছনে একটা ষড়যন্ত্র আছে।

এরকম একটি হামলার আভাস ২০০৪ সালের ১৫ আগস্ট পেয়েছিলেন বলেও জানান তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমার কাছে ছোট্ট একটা চিরকুট আসে। ধানমন্ডির ৫ নম্বরে তারেক জিয়ার যে খালা শ্বাশুড়ির বাড়ি, তারেক জিয়া তখন সেখানে থাকে।

এর আগে ৯ মাস ছিল। পরে পহেলা আগস্ট আবার চলে আসে। ১৫ আগস্ট গভীর রাতে গাড়ি এসে বড় বড় পেটি নামায়, বোরকা পরা লোক এসে জিপে করে পেটি নিয়ে চলে যায়। কাজী জাফরউল্লাহ সাহেব তখন ছিলেন। তাকে বললাম, ওই বাড়িতে কী হচ্ছে খবর নেন। তিনি বললেন, পরদিন র‌্যালি আছে, পরে খবর নেবেন। তারপরই তো ওই হামলা।

২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলারর প্রকৃত খুনিদের আড়াল করে বিএনপি সরকার ‘জজ মিয়া নাটক’ সাজিয়েছিল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গুজব ছড়ানো বা মিথ্যা কথা বলায় বিএনপির চেয়ে পারদর্শী আর কেউ নাই। তারা সব দিকে ছড়াল, আমি নাকি ভ্যানিটি ব্যাগে করে গ্রেনেড নিয়ে এসে মেরেছি।

গ্রেনেড হামলার ঘটনায় দোষীদের বিচার না করে বিএনপি সরকার তাদের পদোন্নতি দিয়ে ‘পুরস্কৃত’ করেছিল মন্তব্য করে তিনি বলেন, তাদের দুঃখ ছিল, আমি কেন মরলাম না। খবর নেওয়ার চেষ্টা করছিল। জানি না তাদের কী ইচ্ছা। বাংলাদেশের মাটিতে ফেরার পর থেকেই যতবার যেখানে গিয়েছি, ততবারই এই ধরনের পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়েছে। আল্লাহ আমাকে প্রতিবার বাঁচিয়েছে।

দেশবাসীর উদ্দেশ্যে শেখ হাসিনা বলেন, যারা জাতির পিতাকে হত্যা করতে পারে, আগুন দিয়ে মানুষ মারতে পারে, নারী ও শিশু হত্যা করতে পারে; যারা প্রকাশ্য দিবালোকে বিরোধী দলের র‌্যালিতে গ্রেনেড হামলা করতে পারে, তারা কখনো কোনো দেশের কল্যাণ ও মঙ্গল করতে পারে না।

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বিএনপি-জামায়াত জোটের কেউ যাতে আওয়ামী লীগে প্রবেশ করতে না পারে, সে বিষয়ে দলের নেতাকর্মীদের সতর্ক করে দিয়ে তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোটের যারা ঘাপটি মেরে থাকে, তারা অনেকে আমাদের দলের সাথে মিশে যায়। এদের যেন কেউ দলে না টানে।দেশবাসীকে ঈদুল আজহার শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা চেষ্টা করছি সব রকমের সুযোগ করে দিতে, যেন ঈদের খুশি প্রত্যেকের ঘরে ঘরে আসে।

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বিকেলে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের পূর্বনির্ধারিত সন্ত্রাস বিরোধী সমাবেশ ও শোভাযাত্রার কর্মসূচি ছিল। ওইদিন শেখ হাসিনার বক্তব্যের পরপরই সমাবেশস্থলে গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। সেদিন প্রাণে বেঁচে গেলেও শ্রবণশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয় তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনার। হামলায় কেন্দ্রীয় নেত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জন প্রাণ হারান। আহতদের অনেকে চিরতরে পঙ্গু হন, ঘটে অঙ্গহানি।