গ্রামের মানুষ সর্বশান্ত অনলাইন জুয়ায়
বিশেষ প্রতিনিধি/ দশমিনা প্রতিনিধি : ঢাকার অনলাইন জুয়া’র ক্রিমিনালরা এবার সূদূর গ্রামের মানুষদের জুয়ার ফাঁদে ফেলে ফতুর বানাচ্ছে। ওয়ানএক্স বেট ও লাইন বেটসহ বিশেষ কিছু অ্যাপ ডাউনলোড করে মোবাইল ফোনেই খেলা যাচ্ছে জুয়া। এই জুয়ার মাধ্যমে বিশ্বের যে কোনো দেশের সংশ্লিষ্ট একাধিক গ্রাহকের সঙ্গে অনলাইনে জুয়া খেলার সুযোগ রয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কিশোর-যুবক ও ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ অনলাইন জুয়ার প্রতি আসক্ত হয়ে পড়েছেন। বিদেশ থেকে পরিচালনা করা অ্যাপেগুলোর লোভনীয় লাভের প্ররোচনায় অনেক পরিবার নিঃস্ব ফতুর হয়ে যাচ্ছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দুই ছাত্রলীগ নেতার নিয়ন্ত্রণে পটুয়াখালীর দশমিনায় জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে অনলাইন জুয়া। অনলাইন ভিত্তিক অ্যাপের এ জুয়া দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম-গঞ্জে। এসব জুয়ার টাকা বিভিন্ন মাধ্যমে বিদেশে চলে যাচ্ছে। এ নিয়ে ভুক্তভোগীদের পরিবার ও অভিভাবকদের মাঝে নতুন আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। সূত্র জানায়, ৬ মাসের মধ্যে উপজেলার জুয়াড়িদের কাছে অনলাইনে জুয়া খেলা বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ওয়ানএক্স বেট ও লাইন বেটসহ বিশেষ কিছু অ্যাপ ডাউনলোড করে মোবাইল ফোনেই খেলা যাচ্ছে জুয়া। এই জুয়ার মাধ্যমে বিশ্বের যে কোনো দেশের সংশ্লিষ্ট একাধিক গ্রাহকের সঙ্গে অনলাইনে জুয়া খেলার সুযোগ রয়েছে।
খেলা শেষে দেনা-পাওনার লেনদেন নিষ্পত্তি করা হচ্ছে মোবাইল ব্যাংকিং নগদ, বিকাশ, রকেট ও ইউ ক্যাশের মাধ্যমে। এছাড়াও দশমিনা উপজেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি মাজিদ ওয়ান এক্স বেটের ও সরকারি আব্দুর রসিদ তালুকদার ডিগ্রি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জায়েদ লাইন বেটের এজেন্টের ব্যবসা করছেন। তারা জুয়ারিদের একাউন্ট খোলা ও টাকা লেনদেন করেন বিশেষ কমিশনের মাধ্যমে। পরে এসব অর্থ একটি পর্যায়ে ব্যাংকিং চ্যানেলে ঢুকে বৈদেশিক মুদ্রায় রূপান্তর হয়ে বিদেশে চলে যাচ্ছে।
ওয়ান এক্স বেট ও লাইন বেটের পৃথক দুটি একাউন্ট খুলে দেখা যায়, স্থানীয় মুদ্রায় নগদে ক্যাশ বা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ওই দুই ছাত্রলীগ নেতার কাছে টাকা পাঠালে তারা তা অনলাইন অ্যাপে যুক্ত করে দেন। সে টাকা দেশীয় মুদ্রায় অ্যাপে ভিউ হয়। ওই টাকা দিয়ে জুয়ারি আইপিএল, বিগ ব্যাশ, বিপিএল, এসপিএল, ফুলবল, হকিসহ বিভিন্ন খেলায় জুয়ার বাজি ধরতে পারেন। বিভিন্ন ভাবে একটি ম্যাচে জুয়ায় অংশ গ্রহণ করা যায়। প্রতি বলে ও ওভারেও জুয়ায় অংশ নেয়া যায়। লাভ হলে সে টাকা ওই দুই এজেন্টের মাধ্যমেই উত্তোলন করা যায়। তবে এ ক্ষেত্রে লসের সংখ্যাই বেশি।
মো. আজাহার (ছদ্ম নাম) নামে এক জুয়ারি জানান, তিনি আগে ওই দুই অ্যাপের মাধ্যমে জুয়া খেলে বহু টাকা লোকসান দিয়েছেন। তার মতে আস-পাশের বহু জেলার বহু পরিবার নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছেন। তিনি দ্রুত অ্যাপগুলো বন্ধ করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান।
অভিযোগের বিষয় সরকারি আব্দুর রসিদ তালুকদার ডিগ্রি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জায়েদ বলেন, আমি আগে এক ভাইয়ের মাধ্যমে এই অনলাইন জয়ায় জড়িয়েছিলাম। এখন আর আমি এগুলোর সঙ্গে জড়িত না। অপর ছাত্রলীগ নেতা মাজিদের দাবি, তিনি এজেন্ট না। দশমিনা থানার ওসি মো. মেহেদী হাসান বলেন, তাদের নজরদারি মধ্যে রাখা হচ্ছে। এ বিষয় তথ্য কালেকশন করা হচ্ছে। দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।