টিপু সুলতান.অনন্ত রহমান.ঢাকা:
রাষ্ট্রীয় সেবা খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোতে ঘুষ, অনিয়ম দুর্নীতি প্রতিরোধে শিগগিরই ঝটিকা অভিযানে নামছে দুর্নীতি দমন কমিশন দুদক। সম্প্রতি কমিশনের সভায় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
দুদকের কমিশনার মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, অনিয়ম-দুর্নীতি প্রতিরোধের অংশ হিসেবে ঝটিকা অভিযানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর আইনগত দিকটি খতিয়ে দেখার জন্য মহাপরিচালক জিয়া উদ্দিনকে দায়িত্ব দিয়েছে কমিশন।এসব অভিযানে দুদকের মহাপরিচালক (ডিজি) কিংবা তাঁর ওপরের পর্যায়ের কর্মকর্তারাই নেতৃত্ব দেবেন।
দুদক সূত্র জানায়, রাষ্ট্রীয় সেবা খাতগুলোর অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে কমিশনে প্রচুর অভিযোগ রয়েছে। সাধারণ মানুষের মধ্যেও এসব প্রতিষ্ঠান নিয়ে নেতিবাচক ধারণা রয়েছে। সেবা নিতে গিয়ে সাধারণ মানুষকে নানা ধরনের হয়রানি ও দুর্নীতির শিকার হতে হয় বলেও অভিযোগ রয়েছে।
প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতি অনুসন্ধান নিয়ে দুদকের একটি দলের অন্তর্বর্তী প্রতিবেদনে বলা হয়, গ্যাস পানি উন্নয়ন বোর্ড, ডেসকো, ওয়াসাসহ সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ পর্যায়ের ব্যক্তিরা দুর্নীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। তাঁদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে অবাধে দুর্নীতি করেন অধস্তন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। আইনগত দুর্বলতা, নিজস্ব বিধি-বিধানে ত্রুটি, সরকারি ক্রয় নীতিমালার অনুসরণ না হওয়াসহ নানা সীমাবদ্ধতাই সেবামূলক প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতির প্রধান কারণ। এসব প্রতিষ্ঠানে ব্যাপক ভিত্তিক অনুসন্ধান চালানো হলে দুর্নীতির তথ্য-উপাত্ত পাওয়া সম্ভব বলে জানিয়েছে দলটি।
এ ছাড়াও সড়ক ও জনপথ, বিআরটিএ, জাতীয় গৃহায়ণ কতৃর্পক্ষ, হাউজ বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশন, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন, রাজধানী উন্নয়ন কতৃর্পক্ষ-রাজউকসহ রাষ্ট্রীয় অন্যান্য সেবা সংস্থা সম্পর্কে দুদকের কয়েকটি দলের সংগৃহীত তথ্য-উপাত্তে একই ধরনের চিত্র পাওয়া গেছে।
দুর্নীতিবিরোধী সংগঠন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) প্রতিবছর প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যায়, উল্লিখিত প্রতিষ্ঠানগুলো ছাড়াও সরকারি হাসপাতাল, সাব রেজিস্ট্রার কার্যালয়, ভূমি রেকর্ড ও জরিপ কার্যালয়, আয়কর অফিস, তহসিল অফিস, পৌরসভা, রাজউক, জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ, দেশের সব কটি থানা, কারাগার, বিআরটিএ, বিআরটিসি, রেল স্টেশন, বিআইডব্লিউটিসি, বিআইডব্লিউটিএ, শিক্ষা বোর্ড, সরকারি পরীক্ষাগারসহ সেবামূলক রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে সাধারণ মানুষ নানাভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন।আর ওই সব প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা কর্মচারীরা নানা কৌশলে ঘুষ, দুর্নীতি, সরকারি অর্থ ও সম্পদ লোপাটে জড়িয়ে পড়েছেন। নিয়োগ, বদলি, পদায়ন এবং অফিশিয়াল ছুটি ও বিদেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রেও দুর্নীতি এবং স্বজনপ্রীতির প্রচুর অভিযোগ রয়েছে।
দুদকের সংশ্লিষ্টরা জানান, মাঝে মাঝে অভিযোগের ভিত্তিতে এসব সরকারি সেবা সংস্থাগুলোর কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হলেও দুর্নীতির ব্যাপ্তি কমিয়ে আনা সেভাবে সম্ভব হচ্ছে না। দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা অনেক বেশি কার্যকর হতে পারে বলে দুদকের ধারণা।
দুদকের কমিশনার মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, দুদকের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে অভিযান চালানো হলে দুর্নীতিবাজদের ওপর এক ধরনের মানসিক চাপ তৈরি হবে। দুর্নীতি প্রতিরোধে ইতিবাচক ফল আসতে পারে।