গোপনে গ্যাসক্ষেত্র বিক্রির ধান্ধায় শেভরন- প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা ৬০০ কর্মী’র
এস রহমান : গোপনে গ্যাসক্ষেত্র বিক্রির ধান্ধায় মেতেছে শেভরন-। কিন্তু ঘটনাটি গোপন থাকেনি। শেভরনের কর্মীরা তা জেনে গেছে। এ ঘটনায় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন শেভরনের ৬০০ কর্মী। তারা বলেছেন, পেট্রোবাংলার নিয়মনীতি মেনেই যুক্তরাষ্ট্রের বহুজাতিক তেল-গ্যাস কোম্পানি শেভরনকে চীনের হিমালয় এনার্জির কাছে মালিকানা হস্তান্তর করতে হবে।
মূত্র জানায়, আগে যেভাবে ইউনিকল ও অক্সিডেন্টাল তাদের সম্পদ বিক্রি করে দেশ ছেড়েছে, এবার সে রকম সুযোগ যেনো শেভরন না পায়। আজ শনিবার ২৭ মে সকাল ১১ টায় জাতীয় প্রেসক্লাবে এক মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশে এসব দাবি জানান শেভরন বাংলাদেশ এমপ্লয়ীজ ইউনিয়নের সভাপতি মোহাম্মদ নাসিম আজিম ও সাধারণ সম্পাদক শাহরিয়ার আবেদীন।
এ সময় সংগঠনটির সাংগঠনিক সম্পদক রিশতিয়া সিরাজ, কার্যনির্বাহী সদস্য তারেক রবিন, মেহেদি হাসানসহ ঢাকা অফিস ও শেভরনের ৩ টি ফিল্ডের দেড় শতাধিক কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।
বিক্ষোভ সমাবেশে বাংলাদেশ এমপ্লয়ীজ ইউনিয়নের সভাপতি মোহাম্মদ নাসিম আজিম বলেন, মালিকানা পরিবর্তন সম্পর্কিত কর্মীদের ঝুকিঁ, চাকুরীর অনিশ্চয়তা, অর্জিত গ্রাচুইটি এবং বঞ্চিত ডব্লিউপিপিএফ (বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ মোতাবেক শ্রমিক মুনাফা অংশগ্রহন তহবিল এর ৫ শতাংশ অংশ) এর বিষয়ে শান্তিপূর্ন সমাধানের জন্য কোম্পানীর অংশগ্রহণ এবং অনতিবিলম্বে আশু সমাধানের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করছি। তিনি আরো বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেভরনে কর্মরত ৬০০ বাংলাদেশি নিয়মিত কর্মী ও তাদের পরিবার-পরিজনরা উৎকন্ঠা ও অনিশ্চয়তার মধ্যে দিনযাপন করছে।আপনি এর একটি সুষ্ঠু সমাধান করুন।
সমাবেশে কোম্পানীর মালিকানা হস্তান্তর বিষয়ে কর্মচারীদের কোন বক্তব্য নেই উল্লেখ করে শেভরন বাংলাদেশ এমপ্লয়ীজ ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক বলেন, কোম্পানীর মালিকানা হস্তান্তর বন্ধ বা বাধা সৃষ্টি করার জন্য নয় বরং আমরা সরকারের অনুমতি পাবার বিষয়টি নিশ্চিতকরণ ও কর্মচারীদের সম্ভাব্য কোন প্রকার নিয়ম বর্হিভূত কাজে নিয়োজিত করার বিষয়টি নিয়ে উতকন্ঠা প্রকাশ করেছিলাম। কিন্তু এসব করার কারণে আমাদেরকে অবরুদ্ধ করে চাকুরীচ্যুতির হুমকি, কর্মস্থল ত্যাগসহ নানাবিধ মানসিক চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, কোম্পানীর এ আচরন সত্ত্বেও দেশের কথা চিন্তা করে, আইন শৃংখলার প্রতি আস্থা রেখে এবং সরকারের প্রতি ইউনিয়ন ও কর্মচারীদের অঙ্গিকার অনুযায়ী, উপরোক্ত পরিস্থিাতেও আমরা নিরবিচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ অব্যাহত রেখেছি। আমরা এই সমস্যার একটি সুষ্ঠু সমাধান চাই। সমাবেশে বক্তারা বলেন, আমাদের কোন কর্মীকে যদি চাকুরীচ্যুতি করা হয় তবে আমরা কঠোর পদক্ষেপ হাতে নেবো।
উল্লেখ্য, শেভরন চীনের হিমালয় এনার্জির কাছে তাদের বাংলাদেশের সম্পদ বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ঝেনহুয়া অয়েল ও বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান সিএনআইসি করপোরেশনের কনসোর্টিয়ামই হলো হিমালয় এনার্জি। শেভরন বাংলাদেশের ব্লক ১২তে বিবিয়ানা, ব্লক ১৩তে জালালাবাদ ও ব্লক ১৪তে মৌলভীবাজার গ্যাসক্ষেত্র থেকে প্রতিদিন যে গ্যাস উত্তোলন করে তা দেশে দৈনিক উত্তোলিত গ্যাসের ৫৫ শতাংশ।
এখন বাংলাদেশে গ্যাস উত্তোলিত হচ্ছে প্রায় দুই হাজার ৭০০ মিলিয়ন ঘনফুট। শেভরনের সঙ্গে সম্পাদিত অংশীদারি চুক্তি (পিএসসি-প্রডাকশন শেয়ারিং কন্ট্রাক্ট) অনুযায়ী, গ্যাস ক্ষেত্র বিক্রি করতে চাইলে পেট্রোবাংলার অনুমোদন দরকার। এ ছাড়া গ্যাস ক্ষেত্র কিনতে আসা কম্পানির আর্থিক এবং কারিগরি যোগ্যতা যাচাই করা হয়।
তবে সম্প্রতি পেট্রোবাংলাকে না জানিয়ে চীনা কম্পানির প্রতিনিধিদলকে শেভরন তার হাতে থাকা গ্যাসক্ষেত্রগুলো ঘুরিয়ে এনেছে। সরকার শেভরনের হাতে থাকা গ্যাসক্ষেত্রগুলোতে কী পরিমাণ গ্যাস মজুদ আছে তা যাচাই করার দায়িত্ব উড অ্যান্ড ম্যাকেঞ্জি নামে একটি কোম্পানিকে দিয়েছে।
এ নিরীক্ষাটি সম্পন্ন হলে সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ হবে শেভরনের হাতে থাকা গ্যাসক্ষেত্রগুলো কেনা লাভজনক হবে কি না। তবে সরকারের সঙ্গে কোনো আলোচনা না করেই শেভরন গ্যাসক্ষেত্রগুলো বিক্রি করে দিতে চায় হিমালয় এনার্জির কাছে। এর বিক্রয় মূল্য কত সে ব্যাপারে কোনো তথ্য যুক্তরাষ্ট্রের এ কম্পানিটি দেয়নি। তবে রয়টার্সসহ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে এর অর্থ মূল্য দুই বিলিয়ন ডলার উল্লেখ করা হয়েছে।