গৃহশ্রমের আইন চায় সৌদি ফেরত নারীরা
স্টাফ রিপোর্টার : বিদেশে গৃহশ্রমের আইন চাই-বলে দাবি তুলেছেন সৌদি ফেরত গৃহশ্রমিক নারীরা। তারা বলেছেন, ‘অভিবাসী শ্রমিকদের অধিকার, মর্যাদা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে’ও ব্যবস্থা নেয়া দরকার সরকারের।সৌদি ফেরত কয়েক গৃহশ্রমিক নারী জানান তাদের করুণ নির্যাতনের কাহিনী। ‘দালালদের খপ্পরে পরে সৌদিতে যাই, সেখানে গিয়ে দিন রাত কাজ করতে হতো।
ছয় সাতজনের সব কাজ করতে হয়, একটু কিছু হলে মারধর করত। শুইবার পর্যন্ত দেয় না, একটা অসহ্য যন্ত্রণার মধ্যে ছিলাম আড়াই মাস। পরে আমার এই অবস্থা দেইখা আমার জামাই ঋণ করে আমাকে সৌদি থেকে নিয়ে আসে। সেই ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে আমার স্বামী ব্রেন স্ট্রোক করে মারা যায়’।কথাগুলো কাঁদতে কাঁদতে বলছিলেন ডেমরা থেকে আসা বিদেশ ফেরত অভিবাসী ইয়াসমিন আক্তার।সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে আন্তর্জাতিক অভিবাসন দিবস উপলক্ষে এক আলোচনায় বিদেশে নির্যাতনের শিকার অভিবাসী ইয়াসমিন আক্তার এসব কথা বলেন।
‘অভিবাসী শ্রমিকদের অধিকার, মর্যাদা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে আইএলও কনভেনশন- ১৮৯ অনুসমর্থন করে গৃহশ্রমের আইন চাই’ শীর্ষক এ আলোচনার আয়োজন করে জাতীয় গার্হস্থ্য নারী শ্রমিক ইউনিয়ন।২০০০ সালের ৪ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ বিশ্বব্যাপী ১৮ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেয়। এরপর থেকে প্রতি বছর এ দিনে জাতিসংঘের সদস্যভুক্ত সব দেশে দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। এবারের আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবসের প্রতিপাদ্য ‘নিরাপদ অভিবাসন যেখানে টেকসই উন্নয়ন সেখানে’।
আলোচনায় বিদেশ ফেরত গৃহকর্মীরা তাদের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে অমানবিক নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরেন। ইয়াসমিন নামে একজন বলেন, ‘আর যেন কোন নারীর এইরকম না হয়। সৌদি ওরা আমাদের ওপর অমানবিক নির্যাতন করে, রাস্তায় ফেলে মেরেছে আমায়। নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে বাড়িতে ফোন করে বলতাম নিয়ে যেতে।’
সেলিনা নামে আরেকজন বলেন, ‘দালালরা আমাকে বলেছে ২০ হাজার টাকা বেতন। কিন্তু গিয়ে ১৫ হাজার টাকা বেতনে বাড়ির কাজ করতে হয়েছে। সেই বাড়িতে ১৬/১৭টা বাথরুম পরিষ্কারসহ সব কাজ করাইত আমারে দিয়া। ওরা আমারে না খাওয়ায়ে রাখছে। খুব কষ্ট করে ছিলাম তিন মাস। আসার সময় একটা টাকাও আনতে পারি নাই। দেশে আসার পরে ওই দালালের বিরুদ্ধে মেম্বারের কাছে বিচার দিয়ে কোন কাজ হয় নাই। দালালের কাছে টাকা খেয়ে ওদের পক্ষেই কথা বলছে।’
আলোচনায় ওয়্যারবি ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ সাইফু হক বলেন, অভিবাসী শ্রমিকদের একটা নিজস্ব প্লাটফর্ম থাকা দরকার, এটা শ্রমিকদের অধিকারের বিষয়। বিদেশে অভিবাসী শ্রমিকদের অধিকারের প্রশ্নে রাজনৈতিক স্বদিচ্ছা দরকার। তা না হলে অভিবাসী শ্রমিক সমস্যা থেকে উত্তরণ সম্ভব নয়।’
আইনজীবী নজরুল ইসলাম বলেন, ‘গৃহশ্রমিকদের ওপর বিদেশে অমানবিক নির্যাতন চলছে, আইন না করলে এই নির্যাতন চলতেই থাকবে।’বিলসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সুলতান উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘যে দেশে দাস প্রথা বৈধ ছিল সেখানে গৃহশ্রমিকরা কীভাবে নিরাপদে থাকবে? বাংলাদেশ থেকে প্রতিনিয়ত মানুষ বিদেশে গিয়ে প্রতারিত হচ্ছে, কিন্তু কারও শাস্তি হচ্ছে না।’
সুলতান উদ্দিন জানান, ডেমরার প্রতিটি চা দোকানে দালাল বসে থাকে। এই ধরনের প্রতারণার শাস্তিও খুবই কম, মাত্র দুই মাস এবং জামিন যোগ্য। এ জন্য এই চক্রটি আরও বেশি সক্রিয়।আমেনা বেগমের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন, শ্রমিক নেতা ওয়াজেদুল ইসলাম খান, আবুল হোসাইন, আইনজীবী জোবায়দা পারভীন, জাতীয় গার্হস্থ্য নারী শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মুর্শিদা আখতাহার নাহার প্রমুখ।