গুরমিতের লাম্পট্যে’র নায়িকা হানিপ্রীত
নয়াদিল্লি থেকে মীরা নায়ার : গুরমিত ভন্ড বাবার লাম্পট্যে’র নায়িকা হানিপ্রীতকে খুঁজছে গোয়েন্দারা। নানা কেলেংকারির নায়িকা এই হানিপ্রীত ভন্ড বাবাকে সম্পূর্ণ উলঙ্গ হয়ে সঙ্গ দিত। এ অভিযোগ স্বয়ং হানিপ্রীতের স্বামীর। প্রায় হাজার কোটি টাকার সম্পত্তির মালিক গুরমিত এর এই বিশাল ডেরা নিয়ে এখন চলছে নানা কাহিনী।
ধর্ষণের মামলায় কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ভারতের বিতর্কিত ধর্মগুরু রাম রহিমের পালিত কন্যা হানিপ্রীত ইনসানকে খুঁজছে পুলিশ। শুক্রবার তার বিরুদ্ধে বিমানবন্দরসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। প্রায় ১৫ বছর আগে দুই শিষ্যাকে ধর্ষণের মামলার ঘটনায় গত সোমবার ২০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয় রাম রহিমকে। তার সঙ্গে নতুন করে আলোচনায় আসে হানিপ্রীতের নামও। গুরুমিতের সঙ্গে তার অবৈধ শারীরিক সম্পর্ক ছিল বলেও অভিযোগ ওঠে।
‘পাপা’স অ্যাঞ্জেল’ নামেই পরিচিত রাম রহিমের কন্যা হানি। নামেই ‘মেয়ে’। বস্তুত, ডেরা সাচা সওদার সদস্যরা জানেন, তিনি আসলে রাম রহিমের সর্বক্ষণের সঙ্গিনী। রাতেও ‘বাবা’র গোপন কক্ষে তার অবাধ যাতায়াত। এমনকি, জেলে বসেও গুরমিত রাম রহিমের দাবি, তার কাছে আসতে দেওয়া হোক হানিপ্রীতকে।সূত্র জানায়, জেলে নাকি রাম রহিম সিং ভারী অসুস্থ। আর হানিই নাকি জানেন কীভাবে কোন ওষুধ দিলে ঠিক থাকবেন ডেরা সাচা সওদা প্রধান।
বছর কয়েক আগে এই হানিপ্রীতকে দত্তক নেন রাম রহিম। হানিপ্রীতের স্বামী ক’দিন আগেই অভিযোগ করেন, স্ত্রীকে তার কাছে থাকতে দিত না রাম রহিম। হানিপ্রীতের সঙ্গে রাম রহিমের অবাধ যৌনাচার নিয়েও মুখ খোলেন তিনি। তিনি বলেন, ডেরা প্রধানের সঙ্গে সম্পূর্ণ নগ্ন অবস্থায় হানিপ্রীতকে দেখে ফেলছেন সিরসায়। পুরো বিষয়টিকে সকলের চোখের আড়ালে রাখতেই হানিপ্রীতকে দত্তক নেওয়ার নাটক করেছিলেন ডেরা সাচা প্রধান।
তবে এখন ঠিক কোথায় রয়েছেন হানিপ্রীত তা নিয়ে বিস্তারিত কিছু জানা যাচ্ছেনা।পুলিম ও গোয়েন্দাদের ধারণা রাম রহিম যেখানে বন্দি রয়েছেন, সেই রোহতক জেলের কাছেই ডেরার এক সদস্যের বাড়িতে রয়েছেন হানি। পঞ্চকুলার আদালত থেকে গুরমিতকে যখন জেলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, সেই সময় তার সঙ্গে কেন হানিপ্রীত ছিলেন, সেটা জানতে এরই মধ্যে তদন্তে নেমেছে হরিয়ানা পুলিশ।
২০০২ সালে রাম রহিমের সাবেক অনুসারী এক নারী তার বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন। ওই নারীর অভিযোগ, হরিয়ানার শহর সিরসায় ডেরা সাচা সৌদা গোষ্ঠীর প্রধান কার্যালয়ে রাম রহিম তার ওপর যৌন নির্যাতন করেন। এ মামলার পর রাম রহিমের অজস্র অনুসারী ক্ষোভে উন্মত্ত হয়ে উঠেছিলেন। ১০ বছর ধরে প্রায় দুইশ’ শুনানির পর মামলার রায় দেওয়া হয়। এর মধ্যে বেশ কয়েকবার উচ্চ আদালত এ মামলার বিচারকাজে স্থগিতাদেশ দেন।
হরিয়ানার সিরসায় ৮০০ একর জমির উপর তৈরি বিশাল ডেরা সচ্চা সৌদা। তার মধ্যেই শপিং মল, রেস্তোরাঁ, রিসর্ট, হাসপাতাল, মাল্টিপ্লেক্স, স্কুল-কলেজ, কারখানা- কী নেই সেখানে? দেশ-বিদেশে ছড়ানো প্রায় পাঁচ কোটি ভক্ত।
শোনা যায়, রাম রহিমের মোট সম্পত্তির পরিমাণ নাকি প্রায় হাজার কোটি টাকা। এমনই সাম্রাজ্য ফেঁতে এত দিন সেখান থেকে নিজের রাজ্যপাট নিয়ন্ত্রণ করতেন বাবা রাম রহিম। কিন্তু দু’টি ধর্ষণ মামলায় বাবার ২০ বছরের জেল হওয়ায় আপাতত ‘অভিভাবক’হীন সেই ডেরা।
কে হবেন এই বিপুল সম্পত্তির উত্তরাধিকারী? যদিও গুরমিতের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত হওয়ার খবর রয়েছে। এর প্রশ্নের মাঝেই উঠে আসছে দু’টি নাম। প্রথম নামটি যেন কিছুটা পূর্বপরিকল্পিতই ছিল। বাবার পালিতকন্যা হানিপ্রীত ইনসান। গুরমিত রাম রহিম সিংহের তিন মেয়ের অন্যতম তিনি। বাবার ছায়াসঙ্গীও বটে।
দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর রাম রহিমকে গ্রেপ্তার করে রোহতকে নিয়ে যাওয়া পর্যন্ত সব সময়েই বাবার সঙ্গী হিসেবে বছর ত্রিশের হানিকে তার পাশেই দেখা গিয়েছিল। এমনকী, সাজা ঘোষণা হওয়ার পর সেই পালিতকন্যার সঙ্গেই জেলে থাকতে চেয়েছিলেন রাম রহিম। মেয়ে হানিও বাবার সঙ্গেই রাত কাটাতে চেয়ে আবেদন করেন বিচারকদের কাছে। যদিও সেই অনুমতি মেলেনি জেল কর্তৃপক্ষের তরফে।
ডেরা প্রধানের পদের আরও এক অন্যতম দাবিদার বিপাশনা ইনসান। তিনি ডেরার চেয়ারপার্সন। বছর পঁয়ত্রিশের এই শিষ্যা কলেজের পড়াশোনা শেষ করেই ডেরায় যোগ দিয়েছিলেন। পরে ডেরার নিজস্ব পরীক্ষায় দ্বিতীয় স্থান দখল করে চেয়ারপার্সন হন তিনি। হানিপ্রীতের সঙ্গে এখন তিনিও রয়েছেন প্রধান হওয়ার দৌড়ে।
এই দুই কন্যা ছাড়া নিজেরও তিন ছেলেমেয়ে রয়েছে বাবা রাম রহিমের। মাত্র ১৭ বছর বয়সে হরজিৎ কৌরকে বিয়ে করেছিলেন তিনি। চরণপ্রীত এবং আমনপ্রীত নামে দুই মেয়ে ও যশমীত নামে এক ছেলে রয়েছে বাবার। তিন ছেলেমেয়েই বিবাহিত। ছেলে যশমীত পেশায় ব্যবসায়ী। ২০০৭ সালে বাবার সমস্ত সম্পত্তির মালিকানা পেয়েছেন ছেলে। যদিও এখনও খাতায়কলমে ডেরার প্রধানের পদে রয়েছে বাবা রাম রহিমই। কিন্তু সকলেই জানেন, জেলে বসে এই বিশাল কর্মকাণ্ড সামলানো তার পক্ষে সম্ভব হবে না। এখন কোন নারীর হতে ডেরার তরবারি উঠবে তা জানতে হয়তো অপেক্ষা করতে হবে আরও কিছু দিন।