গুম-থেকে কিভাবে ফিরলো আ’লীগার জীম-সাদেক!
সাদুল্লাপুর থেকে এস এম খলিল বাবু : রহস্যজনকভাবে গুম হয়ে গিয়ে ফের সেখান থেকে ফিরেছেন সাদুল্যাপুরে নিখোঁজ দুই আ. লীগ নেতা। রাতের আঁধারে ১০-১২ জনের একটি দল মাইক্রোবাসে তুলে নেয় আমাদের। এরপর অজ্ঞাত জায়গায় একটি ছোট ঘরে আটকে রাখে। তিন বেলা খাবার দেয়। অসুস্থ বোধ করলে ডাক্তার দেখিয়ে ওষুধও দেওয়া হয়।
কিন্তু কেন, কী কারণে আমাদের আটকে রাখা হচ্ছিলো তা জানতাম না। এমনকি মাইক্রোবাসে করে তুলে নিয়ে যাওয়া ১০-১২ জনের কাউকেই আমরা চিনতে পারিনি। কথাগুলো বলছিলেন গাইবান্ধার সাদুল্যাপুর উপজেলা যুবলীগ নেতা মনোয়ারুল হাসান জীম মণ্ডল ও ছাত্রলীগ নেতা সাদেকুল ইসলাম সাদেক। ১০ দিন নিখোঁজ থাকার পর বাড়ি ফিরে তারা এসব কথা জানান।
বৃহস্পতিবার (১৯ জানুয়ারি) ভোর রাতে নিলফামারী জেলার সৈয়দপুর শহরের মহাসড়কের পাশে ৩-৪টি মোটরসাইকেলে করে তাদের রেখে যাওয়া হয় বলে জানান জীম মণ্ডল ও সাদেক। এরপর তারা দুজনে নিজ মোটরসাইলে করে বাড়ি ফেরেন। মনোয়ারুল হাসান জীম মণ্ডল সাদুল্যাপুর উপজেলার ৩নং দামোদরপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও সাদুল্যাপুর উপজেলা যুবলীগের সহ-সভাপতি। আর সাদেকুল ইসলাম সাদেক দামোদরপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি।
বৃস্পতিবার মনোয়ারুল হাসান জীম মণ্ডলের সঙ্গে তার নিজ বাড়ি সাদুল্যাপুর উপজেলার দামোদরপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ জামুডাঙ্গা গ্রামে কথা হয়। তিনি বলেন, ‘গত ৯ তারিখে (সোমবার) রাত সাড়ে ১০টার দিকে সাদুল্যাপুর-নলডাঙ্গা পাকা সড়কের লালবাজারের অদূরে ১০-১২ জন পথরোধ করে আমাদের মাইক্রোবাসে তুলে নেয়। এ সময় তারা (অপহরণকারীরা) কথা বলার সুযোগও দেয়নি। দেড় ঘণ্টা পর আমাদের একটি ছোট ঘরে রাখা হয়। এরপর মঙ্গলবার সকালে আমাদের দুজনকে আলাদা ঘরে রাখা হয়।’
তিনি আরও জানান, সেখানে তাকে আটক করে রাখা হলেও কোনও প্রকার জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়নি। প্রতিদিন খাবার দেওয়া হতো। এরমধ্যে একদিন অসুস্থ বোধ করলে ডাক্তার দেখিয়ে ওষুধের ব্যবস্থাও করা হয়। তবে কোনোভাবেই অপহরণকারীদের চিনতে পারেননি তিনি।জীম মণ্ডল বলেন, ‘জীবদ্দশায় রাজনীতি ও জনকল্যাণে কাজ করে গেছি। হয়ত জীবনে কোনও ভালো কাজ করেছি। এজন্য ফিরে আসতে পেরেছি।’
উদ্ধার হওয়া অপর ছাত্রলীগ নেতা সাদেকুল ইসলাম সাদেক বলেন, ‘গত ১০ দিন ধরে একটি ছোট ঘরে আটক ছিলাম। সেখানে তিনবেলা খাবারও দেওয়া হতো। আমাদের কেন, কী কারণে আটক করে রাখা হয়েছে এ বিষয়ে জানতে চাইলেও তারা কেউ কিছু জানায়নি।’
এদিকে, দুই নেতার সন্ধান মিললেও নিখোঁজ নলডাঙ্গা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মাইদুল ইসলাম প্রিন্স ও নলডাঙ্গা ইউনিয়ন যুবদলের সহ-সাধারণ সম্পাদক শফিউল ইসলাম শাপলার খোঁজ মেলেনি এখনও। ১০ জানুয়ারি সকাল সাড়ে ১১টার দিকে নলডাঙ্গা থেকে তাদের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়।
সাদুল্যাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফরহাদ ইমরুল কায়েস জানান, চার নেতা নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় সাদুল্যাপুর থানায় সাধারণ ডায়েরি হয়। এরপর বিভিন্নভাবে তাদের উদ্ধারে তৎপর ছিল পুলিশ। অবশেষে তাদের মধ্যে দুজন অক্ষত অবস্থায় বাড়ি ফিরেছেন। নিখোঁজ অপর দুই নেতাকে উদ্ধারে তৎপরতা চলছে।
প্রসঙ্গত, গত সোমবার (৯ জানুয়ারি) রাত সাড়ে ১০টার দিকে জিম ও সাদেক মোটরসাইকেলে করে সাদুল্যাপুর থেকে লালবাজার হয়ে নলডাঙ্গা ইউপি চেয়ারম্যান তরিকুল ইসলাম নয়নের কাছে যাওয়ার পথে নিখোঁজ হন। পরদিন নিখোঁজ হননলডাঙ্গা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মাইদুল ইসলাম প্রিন্স ও নলডাঙ্গা ইউনিয়ন যুবদলের সহ-সাধারণ সম্পাদক শফিউল ইসলাম শাপলা।