• শুক্রবার , ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪

গাদ্দাফির জন্যে আর্তনাদ


প্রকাশিত: ৮:২৬ পিএম, ৮ ডিসেম্বর ১৫ , মঙ্গলবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ১০০ বার

Gaddafi, the Jewish leader of Libya meets, President Hussein Obama,-www.jatirkhantha.com.bdঅনলাইন ডেস্ক রিপোর্টার:   ধিরে ধিরে গাদ্দাফিকে চিনছে লিবিয়া ও তার আশপাশের মানুষ। তারা এখন গাদ্দাফির জন্যে আর্তনাদ করছে।বলছে অনেক ভাল লোক ছিল গাদ্দাফি।  মুয়াম্মার গাদ্দাফির পতনের পর লিবিয়ায় শুরু হয় অস্থিরতা। হানাহানি, ঘাত-প্রতিঘাত ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র। চরম অরাজক পরিস্থিতিতে আফ্রিকার দেশ ঘানার অনেক প্রবাসী শ্রমিক লিবিয়া ছাড়তে বাধ্য হয়। একই সঙ্গে তাদের স্বপ্নেরও সমাপ্তি ঘটে। ওই শ্রমিকদের কাছে গাদ্দাফি ছিলেন আফ্রিকার ত্রাতা। লিবিয়ার প্রয়াত নেতার জন্য তাদের মন এখনো কাঁদে। বিবিসি অনলাইনের প্রতিবেদনে এমনটাই জানানো হয়।

২০১১ সালের অক্টোবরে পশ্চিমাদের সহায়তায় লিবিয়ার চার দশকের শাসক গাদ্দাফিকে ক্ষমতাচ্যুত ও হত্যা করে দেশটির বিদ্রোহীরা। গাদ্দাফির পতনের সময় লিবিয়ায় উৎসবের দৃশ্য দেখা যায়। লিবিয়ার অধিবাসীরা ভেবেছিল, নির্দয় স্বৈরশাসক গাদ্দাফি উৎখাত ও নিহত হওয়ায় তাঁদের জীবনে নতুন অধ্যায়ের সূচনা হবে। কিন্তু তাদের সেই আশা দুরাশায় পরিণত হয়। সেখানে শুরু হয় সহিংসতা ও রাজনৈতিক সংকট।

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে লিবিয়া থেকে ঘানায় ফেরত যায় অনেক অভিবাসী শ্রমিক। কিন্তু তাদের মনে এখনো গাদ্দাফির স্মৃতি অমলিন। গাদ্দাফির জন্য তাদের মনে এখনো বেদনা জাগে।
গাদ্দাফির পতনের আগে তিন বছর লিবিয়ায় ছিলেন ঘানার অধিবাসী করিম মোহাম্মদ (৪৫)। লিবিয়ায় কাজ করে ভালো অর্থকড়ি করেন তিনি। তা দিয়ে বড়সড় বাড়িও তৈরি করেন। তাঁর চোখে গাদ্দাফি ছিলেন আফ্রিকার ত্রাতা।

লিবিয়ার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে করিম বলেন, ‘লিবিয়ায় সবাই সুখী ছিল। আমেরিকার মতো দেশে মানুষ সেতুর নিচে ঘুমায়। কিন্তু লিবিয়ায় তেমনটা কখনো দেখিনি। সেখানে কোনো বৈষম্য ছিল না, ছিল না কোনো সমস্যা। ভালো কাজ ছিল, ছিল অর্থ। গাদ্দাফির কাছে আমি কৃতজ্ঞ। তিনি ছিলেন আফ্রিকার ত্রাতা।’

৩৫ বছর বয়সী নির্মাণশ্রমিক মুস্তাফা আবেদল মোমিন সাত বছর লিবিয়ায় কাজ করেছেন। গাদ্দাফি সম্পর্কে তাঁর মূল্যায়ন, গাদ্দাফি চমৎকার মানুষ ছিলেন। তিনি কারও সঙ্গে প্রতারণা করেননি। তিনি ছিলেন নিখুঁত। সবচেয়ে ভালো।গাদ্দাফিকে হত্যার কোনো যুক্তি খুঁজে পান না স্থানীয় ইমাম ইলিয়াস ইয়াহ্ইয়া। তিনি বলেন, ‘সমস্যার সমাধানে কাউকে হত্যা করা হলো। কিন্তু এখন পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। তাহলে গাদ্দাফিকে কেন হত্যা করা হলো?’

স্বৈরশাসক গাদ্দাফির বিরুদ্ধে দমন-পীড়নসহ ভূরি ভূরি অভিযোগ ছিল। এ কথাও সত্যি যে তাঁর আমলে লিবিয়ায় স্থিতিশীলতা ছিল। ছিল কর্মসংস্থান। আফ্রিকা তো বটেই, এশিয়ার বিভিন্ন দেশের অভিবাসী শ্রমিকদের কাছে লিবিয়া ছিল লোভনীয় কর্মক্ষেত্র। দেশটিতে গিয়ে তারা বিপুল অর্থ আয় করেছে। জীবনমানের উন্নয়ন করেছে। অনেকে দারিদ্র্যের দুষ্টচক্র থেকে বেরিয়ে এসেছে।

লিবিয়া-ফেরত ঘানার অভিবাসী শ্রমিকদের অভিজ্ঞতাও একই। তারা জানায়, গাদ্দাফি না থাকলে তাদের জীবনে পরিবর্তন আসত না। গাদ্দাফির পতন তাদের জন্য দুর্ভাগ্য বয়ে এনেছে। কারণ, এরপরই লিবিয়ায় অস্থিরতা শুরু হয়। প্রাণের ভয়ে অভিবাসী শ্রমিকেরা লিবিয়া ছাড়ে।

৩৬ বছর বয়সী আমাদু জানান, অনেক কষ্ট করে ২০১০ সালে লিবিয়ায় যান তিনি। অবৈধপথে সেখানে গিয়ে কাজও পান। ২০১১ সালে দেশটিতে গাদ্দাফিবিরোধী সংঘাত ছড়িয়ে পড়ে। পরে অর্থকড়ি ফেলেই কোনো মতে ঘানায় ফেরেন তিনি। এভাবেই তাঁর স্বপ্নের মৃত্যু হয়।মুস্তাফা বলেন, ঘানায় তরুণদের জন্য কিছুই নেই। গাদ্দাফির পতনের পর তাঁরা পুরোপুরি সংকটে জর্জরিত। যুবদের বেকারত্ব আকাশসম। তাঁদের কোনো কাজ নেই। অনেকে অর্থের জন্য অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। অথবা ইউরোপে যাওয়া চেষ্টা করছে।

মুস্তাফার এমন কথায় অন্যদেরও সমর্থন পাওয়া গেল। স্বরটা উঁচু করে ইলিয়াস বলেন, ‘এখন তো চারদিকে সবাই ইউরোপ-ইউরোপ করছে। সামর্থ্য থাকলে কেউ কেউ অবশ্য ব্রাজিল যাচ্ছে। কিন্তু বাকি সবাই ইউরোপে যাচ্ছে।’
গাদ্দাফি তাঁর পতনের আগে আনুষ্ঠানিকভাবে ইউরোপকে সতর্ক করে বলেছিলেন, তাঁর শাসন ভেঙে পড়লে লাখো অভিবাসী ইউরোপের উপকূলে হাজির হবে। সৃষ্টি হবে অরাজকতা।

গাদ্দাফি আজ নেই। কিন্তু তাঁর ভবিষ্যদ্বাণী সত্যি হয়েছে। আশার কথা হলো, লিবিয়ার বিবদমান দুই পক্ষ এ মাসেই জানিয়েছে, দেশটিতে চলমান অচলাবস্থা নিরসনে তারা মতৈক্যে পৌঁছেছে।