গাড়িচোরকে ঋণ-ধরা জনতা ব্যাংক
২৯ ডিসেম্বর নিলাম সিমরান কম্পোজিট-
নেপথ্যে জড়িত বাণিজ্যিক ফাংশনাল অডিট-
গাড়িচোর থেকেও ঋণের টাকায় ২২টি প্রতিষ্ঠান বানিয়ে ছিলেন। এর অন্যতম প্রধান নায়ক ছিলেন ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের ঘনিষ্ট অথর্নীতিবিদ সাবেক জনতা ব্যাংকের চেয়ারম্যান আবুল বারকাত। এই চক্রে জড়িত ছিলেন সাবেক এমডি এস এম আমিনুর রহমান। ব্যাংক লুটেরাদের টাকায় এরা নিজেদের আখের গুছিয়ে নিলেও ঋণ দিয়ে জনতা ব্যাংক ফেঁসে যায়।
শফিক রহমান : গাড়িচোরকে দেয়া জনতা ব্যাংকের ঋণ তেলেসমাতির এবার খেসারত দিতে হচ্ছে। ঋণের টাকা উঠাতে জনতা ব্যাংক এবার নিলামের ডাক দিয়েছে শিল্পপ্রতিষ্টান সিমরান কম্পোজিট। এটি সেই প্রতিষ্টান যে প্রতিষ্ঠানের মালিক গাড়িচোর থেকেও ঋণের টাকায় ২২টি প্রতিষ্ঠান বানিয়ে ছিলেন। এর অন্যতম প্রধান নায়ক ছিলেন ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের ঘনিষ্ট অথর্নীতিবিদ সাবেক জনতা ব্যাংকের চেয়ারম্যান আবুল বারকাত। এই চক্রে জড়িত ছিলেন সাবেক এমডি এস এম আমিনুর রহমান। ব্যাংক লুটেরাদের টাকায় এরা নিজেদের আখের গুছিয়ে নিলেও ঋণ দিয়ে জনতা ব্যাংক ফেঁসে যায়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০০৮ সালের ২৮ জানুয়ারি থেকে ছয় বছর ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন এস এম আমিনুর রহমান। এ্যাননটেক্স গ্রুপের বড় অংশ ঋণ তাঁর সময়ে দেওয়া। অথচ আমিনুর রহমান বলেন, ইউনুছ বাদল গাড়ি চুরির দায়ে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন, এটা কখনো শোনেননি। এ সম্পর্কে ইতিপূর্বে সাবেক চেয়ারম্যান আবুল বারকাত দৈনিক সত্যকথা প্রতিদিন কে বলেছিলেন সব পরিস্থিতি বুঝে ঋণ দিয়েছে তৎকালীন জনতা ব্যাংক এমডি।ওই ঋণের সুপারিশ তিনি করেননি।
যাহোক বাংলাদেশের অন্যতম শীর্ষ ঋণখেলাপি অ্যাননটেক্স। পোশাক প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান অ্যাননটেক্স গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান সিমরান কম্পোজিট লিমিটেডের বন্ধকি সম্পদ নিলামে তুলে এক হাজার ১৬০ কোটি টাকা মন্দ ঋণ আদায়ের উদ্যোগ নিয়েছে জনতা ব্যাংক। এই প্রথম কোনো ব্যাংক অ্যাননটেক্স গ্রুপের বন্ধকি সম্পত্তি নিলামে তুলতে যাচ্ছে। সুদসহ খেলাপি ঋণ আদায়ে অর্থঋণ আদালত আইনে আগামী ২৯ ডিসেম্বর নিলামের দিন নির্ধারণ করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকটির জনতা ভবন করপোরেট শাখা।
গাড়িচোর থেকে শিল্পপতি-
জানা গেছে, ১০ বছর আগেও অভিযোগ ছিল গাড়িচোর চক্রের নেতা তিনি। ২০০৭ সালে পুলিশের হাতে ধরাও পড়েছিলেন। এরপর যেন আলাদিনের চেরাগ পেলেন তিনি। হয়ে গেলেন শিল্পপতি।আবির্ভূত হলেন জনতা ব্যাংকের অন্যতম বড় ঋণগ্রাহক হিসেবে। ব্যাংকটি সব নিয়মনীতি ভঙ্গ করেই তাঁকে উদার হস্তে টাকা দিয়ে গেছে বলে এখন তিনি বড় শিল্পপতি, ২২টি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মালিক।
জনতা ব্যাংকের আলোচিত গ্রাহক এ্যাননটেক্স গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ইউনুছ বাদল হচ্ছেন সেই তিনি। জনতা ব্যাংক তাঁকে ছয় বছরে দিয়েছে ৫ হাজার ৫০৪ কোটি টাকার ঋণ ও ঋণসুবিধা। ২০০৭ সালে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের বিশেষ দলের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন তিনি। ইউনুছ বাদলের গ্রেপ্তারের খবর প্রকাশ করেছিল তখনকার গণমাধ্যমগুলো।
ইউনুছ বাদলের বিষয়ে কথা হলে গ্রেপ্তার অভিযানে অংশ নেওয়া ডিবির তৎকালীন চার কর্মকর্তার বলেন, প্রায় ১১ বছর আগে তাঁদের হাতে গাড়ি চুরির অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া লোকটি কী উপায়ে জনতা ব্যাংক থেকে ৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ পেলেন, সেটি ভেবে তাঁরাও বিস্মিত। ঘটনা সম্পর্কে মো. ইউনুছ বাদল বলেন, তিনি বরাবরই ব্যবসা নিয়েই ছিলেন। কখনোই গাড়ি চুরির অভিযোগে গ্রেপ্তার হননি।
ওদিকে ডিবির তখনকার কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গাড়ি চুরি-ছিনতাই বন্ধ এবং চোরাই গাড়ি ও মোটরসাইকেল উদ্ধারের জন্য ২০০৭ সালের ১৯ মার্চ গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের বিশেষ দুটি আভিযানিক দল গঠন করা হয়। দল দুটির নেতৃত্বে ছিলেন ডিবির অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) মাসুদুর রহমান। তিনি ঢাকা মহানগর পুলিশের জনসংযোগ ও গণমাধ্যম বিভাগের উপকমিশনারের (ডিসি) দায়িত্ব পালন করেছিলেন। মাসুদুর রহমান বলেন, ২০০৭ সালের ১৭ মে উত্তরা থেকে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তাঁদের মধ্যে একজন ইউনুছ বাদলকে তিনি কয়েকটি কারণে স্মরণ করতে পারেন। চোরাই গাড়ি বিক্রির অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছিল। পরে পুলিশ সেই মামলা তদন্ত করে অভিযোগপত্র দেয়।
গ্রেপ্তারের পর ২০০৭ সালের ১৮ মে ঢাকা মহানগর পুলিশের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তির শিরোনাম ছিল ‘ডিবির হাতে গাড়ি চুরি সংঘবদ্ধ চক্রের পাঁচ সদস্য গ্রেপ্তার’। ওই সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, ‘ডিবির এডিসি মাসুদুর রহমানের নেতৃত্বে গাড়ি চুরি-সংক্রান্ত একটি বিশেষ দল ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে সংঘবদ্ধ গাড়িচোর দলের সদস্য মো. ইউনুছ (বাদল), বিপ্লব, শফিউদ্দীন, শফিকুল ইসলাম ও এ বি এম শামসুল হাসানদের গ্রেপ্তার করে।’
বর্তমানে অবসরে থাকা ডিবির সাবেক এক উপপরিদর্শক বলেন, ২০০৭ সালের ১৭ মে তিনিসহ এসআই আবদুল হাকিম, এসআই আকরাম, জাকির ও রাজ্জাক ইউনুছ বাদলকে ধরতে উত্তরায় অভিযান চালান। বাদল তখন একটা দোতলা বাড়ির পুরোটা নিয়ে থাকতেন। তিনি পোশাক কারখানার মালিক হিসেবে নিজের পরিচয় দিয়েছিলেন। তাঁকে গ্রেপ্তারের পর তদবিরও এসেছিল।
ইউনুছ বাদলের বিষয়ে জানতে ডিবির তৎকালীন গাড়ি চুরি প্রতিরোধকারী দলের একজন কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। ইউনুছ বাদলকে নিয়ে তাঁর তখনকার অভিজ্ঞতা জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, আমরা তো একে উত্তরা থেকে ধরেছিলাম। আমি নিজে ওর বাড়িতে অভিযানে গিয়েছিলাম। তখনই তার কী শানশওকতের জীবন!
ডিবির তৎকালীন একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা (এখন পুলিশ সুপার) বলেন, ইউনুছ বাদলকে ধরে আনার পর বিএনপির প্রয়াত প্রভাবশালী এক নেতার ছেলে ডিবির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ইউনুছের জন্য জোর সুপারিশ করেছিলেন। তখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমল বলে তাঁর সুপারিশ তেমন পাত্তা পায়নি। এমনকি ইউনুছ বাদল কর্মকর্তাদের কাছে তাঁকে গ্রেপ্তারের তথ্য গণমাধ্যমে না দেওয়ার জন্য সরাসরি মোটা অঙ্কের ঘুষ সেধেছিলেন।
ইউনুছ বাদল ও তাঁর চক্রের গ্রেপ্তার হওয়ার খবরটি ২০০৭ সালের ১৯ মে ইত্তেফাক, মানবজমিনসহ কয়েকটি পত্রিকায় ছাপা হয়েছিল বলে জানান কর্মকর্তারা। ইত্তেফাক ও মানবজমিন-এ খবরটি খুঁজে পাওয়া গেছে। ১৯ মের মানবজমিন-এর খবর অনুযায়ী, প্রায় ২০ জনের একটা চক্রের নেতৃত্ব দিতেন ইউনুছ। মানবজমিন-এ ডিবি সূত্রের বরাত দিয়ে বলা হয়, ‘গ্রেপ্তারদের মধ্যে ইউনুছ ওরফে বাদল গাড়িচোর সংঘবদ্ধ চক্রের প্রধান হোতা। তার নেতৃত্বে নগরীতে গাড়িচোর চক্রের ২০ জন সক্রিয় সদস্য রয়েছে। এই চক্রের সদস্যরা নগরীর বিভিন্ন স্থান থেকে গাড়ি চুরি করে তাদের নির্ধারিত গ্যারেজ বা মার্কেটে পার্কিং করে লুকিয়ে রাখে।…’
ইউনুছ বাদল সম্পর্কে মানবজমিন-এ তখন লেখা হয়েছিল, ‘…ওই চক্রের মূল হোতা বাদল চার-পাঁচ বছর ধরে গাড়ি চুরির সঙ্গে জড়িত। ওই গাড়ি চুরি করে উত্তরায় দুটি ও টঙ্গীতে একটি বাড়ি নির্মাণ করেছে। তার তিনটি গার্মেন্টস ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে বলেও জানা গেছে। এরা গাড়ি চুরি করে প্রথমে উত্তরায় লুকিয়ে রাখে। কখনো এসব গাড়ি নেত্রকোনায় নিয়ে রাখা হতো।…’ ।ইত্তেফাক-এ ছাপা হওয়া প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘…গ্রেপ্তার হওয়া শফিউদ্দীন স্বীকার করেছে ইউনুছের নেতৃত্বে বিভিন্ন মার্কেট, বিপণিবিতান, গ্যারেজ থেকে প্রাইভেট কার চুরি করে আসছিল তারা।…সন্ধ্যার পরে যাত্রী সেজে ট্যাক্সিক্যাব ছিনতাই করে সেটিকে ব্যবহার করে গভীর রাতে গ্যারেজ থেকে গাড়ি ছিনতাই করে তারা।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে মো. ইউনুছ বাদলের এ্যাননটেক্স গ্রুপের প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ২২টি। প্রায় সবই পোশাক ও বস্ত্র খাত-সম্পর্কিত। জনতা ব্যাংকের আনুকূল্য পেয়ে তিনি সম্প্রতি বিপুলভাবে আলোচনায় এসেছেন। নিয়ম অনুযায়ী, জনতা ব্যাংকের মোট মূলধনের সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ পর্যন্ত ঋণ দেওয়ার সুযোগ আছে। কিন্তু ইউনুছ বাদলের প্রতিষ্ঠান পেয়েছে ৫ হাজার ৫০৪ কোটি টাকার ঋণ ও ঋণসুবিধা, যা মোট মূলধনের প্রায় দ্বিগুণ। এটিকে বলা হচ্ছে একক ব্যক্তির ঋণে বৃহত্তম কেলেঙ্কারি। মূলত ব্যাংকই অতি উৎসাহী হয়ে একের পর এক ঋণসুবিধা দিয়েছে। জনতা ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ছাড়াও ইউনুছ বাদল পৃষ্ঠপোষকতা পেয়েছেন একাধিক মন্ত্রী, ব্যাংকের কর্মকর্তা ও ব্যাংকের সিবিএ নেতাদের।
২০০৯ সালের ৯ সেপ্টেম্বর থেকে পাঁচ বছর জনতা ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আবুল বারকাত। তাঁর সময়েই ইউনুছ বাদলকে ঋণের নামে অর্থ দেওয়া হয়। আর নিয়মনীতি না মেনে এভাবে ঋণ দেওয়ায় বিপদে ব্যাংক, গ্রাহকও ঋণ পরিশোধ করতে পারছেন না। আবুল বারকাতের পরে জনতা ব্যাংকের চেয়ারম্যান হন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য সচিব শেখ মো. ওয়াহিদ-উজ-জামান। তিনি বলেছিলেন, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে তারা আরও ঋণ চেয়েছিল, আমি দিইনি। এ কারণে আমি তাদের শত্রুতে পরিণত হয়েছি। আর ঋণের প্রায় সবই আগের চেয়ারম্যানের (আবুল বারকাত) সময় দেওয়া।অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছিলেন জনতা ব্যাংক একসময় সেরা ব্যাংক ছিল। কিন্তু আবুল বারকাতই ব্যাংকটি শেষ করে দিয়েছেন।২০০৮ সালের ২৮ জানুয়ারি থেকে ছয় বছর ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন এস এম আমিনুর রহমান। এ্যাননটেক্স গ্রুপের বড় অংশ ঋণ তাঁর সময়ে দেওয়া।
নিলামে সিমরান কম্পোজিট লিমিটেড-
বাংলাদেশের অন্যতম শীর্ষ ঋণখেলাপি অ্যাননটেক্স। পোশাক প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান অ্যাননটেক্স গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান সিমরান কম্পোজিট লিমিটেডের বন্ধকি সম্পদ নিলামে তুলে এক হাজার ১৬০ কোটি টাকা মন্দ ঋণ আদায়ের উদ্যোগ নিয়েছে জনতা ব্যাংক। তবে এই প্রথম কোনো ব্যাংক অ্যাননটেক্স গ্রুপের বন্ধকি সম্পত্তি নিলামে তুলতে যাচ্ছে। সুদসহ খেলাপি ঋণ আদায়ে অর্থঋণ আদালত আইনে আগামী ২৯ ডিসেম্বর নিলামের দিন নির্ধারণ করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকটির জনতা ভবন করপোরেট শাখা।
এ সংক্রান্ত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গাজীপুর ও আশুলিয়ার বিভিন্ন এলাকায় অবস্থিত অ্যাননটেক্স গ্রুপের সম্পত্তি জনতা ব্যাংকে বন্ধক রাখা আছে। এদিকে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকিং খাতে সবচেয়ে বেশি খেলাপি ঋণ আছে জনতা ব্যাংকের। ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৬০ হাজার ৪৮৯ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, জনতার বিতরণ করা ঋণের ৬১ শতাংশ খেলাপি এবং ব্যাংক খাতের মোট খেলাপি ঋণের ২১ দশমিক ২২ শতাংশ। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে দুই লাখ ৮৪ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা।
জনতা ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণের একটি বড় অংশ দেশের বড় ঋণগ্রহীতারা কাছে পাওনা। এর মধ্যে বেক্সিমকোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ গ্রুপের পাওনা ১৯ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা, এস আলম গ্রুপের ১০ হাজার ৫০০ কোটি টাকা এবং অ্যাননটেক্স গ্রুপের সাত হাজার ৭০৮ কোটি টাকা। জনতা ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, খেলাপি ঋণের কারণে চরম বিপাকে পড়ায় বড় ঋণগ্রহীতাদের খেলাপি ঋণ আদায়ের চেষ্টা করছে বর্তমান ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনা পর্ষদ। এই কর্মকর্তা বলেন, খেলাপিদের বন্ধকি সম্পত্তি বিক্রি করার সিদ্ধান্তটি এই ঋণ আদায়ের প্রচেষ্টার অংশ।গত মাসে এস আলম গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ট্রেডিং করপোরেশন লিমিটেডের বন্ধকি সম্পদ নিলামের মাধ্যমে এক হাজার ৮৫০ কোটি টাকা আদায়ের ঘোষণা দিয়েছিল ব্যাংকটি।
এ সম্পর্কে জানতে জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মজিবুর রহমান ও অ্যাননটেক্স গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ইউনুস বাদলের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তারা দৈনিক সত্যকথা প্রতিদিন এর ডাকে কোনো সাড়া দেননি। পরে মোবাইলে ম্যাসেজ পাঠানো হলেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।২০১০ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে অ্যাননটেক্স গ্রুপের ২২টি প্রতিষ্ঠানকে প্রায় তিন হাজার ৫২৮ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে জনতা ব্যাংক।
সুদসহ ২০২২ সালের ডিসেম্বরে ব্যাংকটির মোট পাওনার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ছয় হাজার ৫২৮ কোটি টাকা। শুধু তাই নয় ব্যাংক কোম্পানি আইনের একক ঋণগ্রহীতার এক্সপোজার সীমা লঙ্ঘন করে অ্যাননটেক্স গ্রুপকে ঋণ দিয়েছে জনতা।জনতা ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে অ্যাননটেক্স গ্রুপের কাছে ব্যাংকটির ঋণের পরিমাণ সাত হাজার ৭০৮ কোটি টাকা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদন্তে জনতা ব্যাংকের ঋণ অনুমোদনে ব্যাপক অনিয়ম উদঘাটিত হওয়ার পর ব্যাংকিং নিয়ন্ত্রক সংস্থা ২০১৮ সালে বাণিজ্যিক ব্যাংকটিকে ফাংশনাল অডিট পরিচালনা এবং কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেয়। তবে ব্যাংকটি এখনো কোনো আইনি পদক্ষেপ নেয়নি। চলতি বছরের মার্চে জনতা ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ এককালীন ঋণ পরিশোধের ওপর নির্ভর করে অ্যাননটেক্স গ্রুপের তিন হাজার ৩৫৯ কোটি টাকার সুদ মওকুফের অনুমোদন দিয়েছিল। এছাড়া আশুলিয়া ও টঙ্গীতে বন্ধকী সম্পত্তি বিক্রি করে মূল ঋণের চার হাজার ৯৬০ কোটি টাকা আদায়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ব্যাংকটি। ওদিকে নিরীক্ষায় ঋণ নিয়ে জালিয়াতি ও কেলেঙ্কারির প্রমাণ পাওয়ায় চলতি বছরের এপ্রিলে জনতা ব্যাংককে তিন হাজার ৩৫৯ কোটি টাকার সুদ মওকুফের সিদ্ধান্ত বাতিলের নির্দেশ দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।