গাজীপুরে শ্রমিক লীগ নেতা শাহাবুদ্দিনের শেল্টারে জুয়াড় রামরাজত্ব-চুরি ডাকাতি ছিনতাই মহামারি
বিশেষ প্রতিবেদক : গাজীপুরে শ্রমিক লীগ নেতা শাহাবুদ্দিন অবৈধ দাপটে এলাকাটি এখন যেন মগের মুল্লুক।তার নেতৃত্বে জুয়াড়ীরা এখন বেপরোয়া।জুয়ার টাকা যোগাড় করতে এলাকায় চুরি ডাকাতি ছিনতাই বেড়েছে মহামারীর মত । স্কুল কলেজগামী ছেলে মেয়েরা অশ্লিলতায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ছে।
প্রশাসনের ছত্রছায়ায় এসব অপকর্ম চলছে বলে জাতিরকন্ঠকে জানিয়েছেন মেয়র আনিছুর রহমান। জেলা পুলিশ সুপারের সঙ্গে এসব বিষয় নিয়ে কথা বলার চেষ্ঠা করা হলে তিনি ফোন ধরেননি।এমনকি এসএমএসের মাধ্যমে পরিচয় দিয়ে তথ্য জানতে চাওয়া হলেও তিনি কোন জবাব দেননি।
এসব বিষয় নিয়ে শ্রমিক লীগ নেতা শাহাবুদ্দিনের সঙ্গে কথা বলা হলে তিনি জাতিরকন্ঠকে বলেন, প্রশাসন আমার পকেটে, ভাই আপনি যা পারেন লেখেন, আমার কিছুই হবেনা।
সরেজমিনে জানা গেছে, গত ৩০ জানুয়ারী বিকেলে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার জৈনা বাজার এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশে দাড়িয়ে তেলিহাটী ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল বাতেন সরকারের নেতৃত্বে জুয়া, হাউজিসহ নানা অসামাজিক কার্যকলাপ বন্ধের দাবীতে বিশাল মানববন্ধন করে স্থানীয় শান্তিকামী জনতা। সমাবেশ থেকে ২৪ ঘন্টার আলটিমেটাম দেয়া হলেও অপরাধি চক্রের কোন টনক নড়েনি।
গত ১৯ ফেব্র“য়ারী শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৫ টায় শ্রীপুর পৌরসভার মাওনা চৌরাস্তার উড়াল সেতুর নিচে মেলার নামে জুয়া, মদ, হাউজি, লটারী ও অশ্লীলতার বিরুদ্ধে পৌর মেয়র আনিছুর রহমানের নেতৃত্বে সচেতন নাগরিক সমাজের ব্যানারে মানব বন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।কিন্তু অপরাধী চক্রের দাপট কমেনি বরং আরো বেড়েছে জুয়ার রাজত্ব।
অশ্লীলতা, অসভ্যতা আর নির্লজ্জতার মাত্রা ছাড়িয়ে গাজীপুরের বিভিন্ন স্থানে দাপুটে গজিয়ে উঠা মেলা, সাকার্স ও যাত্রার নামে প্রকাশ্যে জুয়ার আসরগুলোর ব্যবসা এখন তুঙ্গে। পট, চরকি, র্যাফেল ড্র, বৌ, হাউজি থেকে শুরু করে ওয়ান-টেন এর মতো একাধিক বিশাল জুয়ার বোর্ড দেদার্ছে চলছে এসব জায়গায়।
রাজেন্দ্রপুর, হোতাপাড়া, ভবানীপুর, বাঘের বাজার ও ২ নং সিএন্ডবি বাজার এলাকায় ২৩টি বোর্ড বসিয়ে চলছে এসব জুয়ার আসর। এছাড়া শ্রীপুরের কেওয়া বাজার, ধনুয়া, হা-মীম কারখানার পিছনে ও জৈনা বাজারে এসব মেলা আয়োজনের চেষ্টা চলছে। তার প্রভাব পড়ছে আশ-পাশের এলাকায়। তাই দীর্ঘ দিনের শান্তি-শৃঙ্খলা ভেঙ্গে সম্প্রতি এলাকায় বেড়ে গেছে দুর্ধর্ষ চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের মতো ঘটনা।
স্কুলগামী শিশুরা প্রভাবিত হচ্ছে এসব অশ্লীলতায়। জুয়া-অশ্লীলতায় গা ভাসানোয় পারিবারিক অশান্তি নেমে এসেছে অনেক সংসারে। প্রশাসন ও স্থানীয় সরকার দলীয় নেতা-কর্মীদের সহযোগীতায় এসব জুয়ার আসর চলার কারনে প্রতিনিয়ত ক্ষুন্ন হচ্ছে সরকারের ভাবমূর্তি। এসব অসামাজিক কার্যকলাপ বন্ধের দাবীতে স্থানীয় চেয়ারম্যান, মেয়রসহ অন্যান্য জনপ্রতিনিধিদের নেতৃত্বে মানব বন্ধন, প্রতিবাদ সমাবেশ করেও কোন কাজ হচ্ছে না।
প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তারা এসব অসামাজিক কার্যকলাপ বন্ধ করতে প্রশাসনকে ২৪ ঘন্টার আল্টিমেটাম দিলেও অশুভ শক্তির ছত্রছায়ায় এসব চলছেই। যেন ওরা একেবারেই বেপরোয়া।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ১৪ ফেব্র“য়ারী শনিবার রাত সোয়া ২ টার দিকে শ্রীপুরের গোসিংগা ইউনিয়নের কাইচ্চাবাড়ী গ্রামে আইনজীবী কাজী আলমের বাড়ীতে দূর্ধর্ষ ডাকাতির ঘটনা ঘটে। ডাকাতেরা ওই বাড়ী থেকে নগদ ১ লাখ টাকা, ১টি ল্যাপটপ, ৩ টি মোবাইল সেট ও ৬ ভরি স্বর্ণালংকারসহ প্রায় ৫ লাখ টাকার মালামাল লুটে নেয়।
ডাকাতিতে বাধা দিলে কাজী বাড়ীর আমেনা (৬৫), মাসুদ রানা (৩৫), কাজী সোহেল (২৫), স্মৃতি আক্তার (২৫) কে এলোপাথারি কুপিয়ে ও পিটিয়ে গুরুতর আহত করলে তাদেরকে শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
গত ১৫ ফেব্র“য়ারী সোমবার রাত দেড় টার দিকে শ্রীপুুরের বরমী ইউনিয়নের সোনাকর গ্রামের তাঁতিসূতা এলাকায় কাজী ইসমাইলের বাড়ীতে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। ডাকাতেরা ওই বাড়ী থেকে নগদ ২ লাখ ১৫ হাজার টাকা সহ ৩ ভরি স্বর্ণালংকার ও মূল্যবান আসবাবপত্র লুটে নেয়।
গত ১৭ ফেব্র“য়ারী বুধবার ভোর রাতে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মধ্যগাছা এলাকায় মা এ্যাপারেলস নামের একটি সোয়েটার কারখানার গোডাউনে দুর্ধর্ষ ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। ভোর ৪ টার দিকে একটি ট্রাকে ১৫/১৬ জনের একটি ডাকাত দল কারখানার গোডাউনে হানা দিয়ে গোডাউন গেইটের তালা কেটে ভেতরে ঢুকে নিরাপত্তা কর্মীদের হাত-পা বেঁধে প্রায় ১০ লাখ টাকা মূল্যের ৫ হাজার পাউন্ড সুতা ট্রাকে তুলে নিয়ে যায়।
গত ৪ ফেব্র“য়ারী বৃহস্পতিবার দুপুরে শ্রীপুরের মুলাইদ এলাকায় বাংলালিংক এজেন্টকে গুলি করে টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে।
গত ২১ জানুয়ারী বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে শ্রীপুর পৌরসভার আনসার রোড এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পশ্চিম পার্শ্বে মোল্লা এন্টারপ্রাইজ নামের মাসুদ রানার মোবাইল শো-রুমের উপরে চৌ-চালা টিনের চাল কেটে দুর্ধর্ষ চুরির ঘটনা ঘটেছে।
শো-রুমে থাকা ৪টি স্যামপনি, ৬টি স্যামসং মোবাইল সেট , ৪০ টি মোবাইল সেটের ব্যাটারী এবং গ্রামীণ ও বাংলালিংক ১৫০টি সিম সহ মোট ৫০/৬০ হাজার টাকার মালামাল চোরেরা লুটে নেয়। ওই দিন বহেরার চালা নতুর বাজারের জামান মার্কেটে মুদি দোকানের তালা কেটে ২৪ ইঞ্চি মনিটর, সিগারেট প্যাকেট ও নগদ ৩ হাজার টাকা চুরি হয়।
১৫ ফেব্র“য়ারী শ্রীপুর পৌরসভার এসকিউ সোয়েটার কারাখানা সংলগ্ন ইমান হোসেনের ভাড়াটিয়া বাড়ীর তালা ভেঙ্গে ২টি মোবাইল সেট ও নগদ ১৫ হাজার টাকা চুরি হয়। তার ১৫ দিন পূর্বে স্টার ফিলিং স্টেশন সংলগ্ন ইমান হোসেনের মার্কেটের মমিনের মুদি দোকানের তালা ভেঙ্গে নগদ টাকা ও দোকানের মালামাল লুট হয়।
তাছাড়া গত ১৬ জানুয়ারী সকাল ৯ টার দিকে মাওনা আল-হেরা মেডিকেলের সামনে থেকে সেনেটারী ব্যবসায়ী রুবেল মিয়ার লাল রঙের বাজাজ ডিসকভার ১৩৫ সিসি, রেজিঃ নং- ঢাকা মেট্রো-ল-২১-৭৮২৩, ১ ফেব্র“য়ারী প্রশিকা মোড়ের মনির হোসেনের বাড়ীর কেচি গেইটের তালা ভেঙ্গে লাল রঙের বাজাজ ডিসকভার ১৩৫ সিসি, ২৯ জানুয়ারী মাওনা মালেক মাস্টার কমেপ্লেক্সের সামনে থেকে শ্রীপুরের নিজ মাওনা এলাকার হাবিবুরের কালো ডিসকভার ১২৫ সিসি, মাওনা চৌরাস্তার হার্ডওয়্যার ব্যবসায়ী মোশারফ মিলিটারীর কালো রঙের ডিসকভার, ১৫ ফেব্র“য়ারী পৌর বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক শহিদুল্লাহ শহীদের ভাগিনা আকাশের লাল রঙের পালসার, কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার ফারুক হাসানের কালো রঙের টিভিএস জাইভ মটর সাইকেলসহ গত কিছু দিনের মধ্যে প্রায় শতাধিক মটর সাইকেল চুরির ঘটনা ঘটেছে।
এসব চুরি-ডাকাতির ঘটনা নিয়মিত ঘটে যাওয়ায় এলাকাবাসীও রয়েছে চরম আতঙ্কে। জুয়া, হাউজির প্রভাবেই এলাকায় এসব চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে এমন ধারণা স্থানীয় জনসাধারনের। তাই গত ৩০ জানুয়ারী বিকেলে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার জৈনা বাজার এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশে দাড়িয়ে তেলিহাটী ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল বাতেন সরকারের নেতৃত্বে জুয়া, হাউজিসহ নানা অসামাজিক কার্যকলাপ বন্ধের দাবীতে এবং গত ১৯ ফেব্র“য়ারী শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৫ টায় শ্রীপুর পৌরসভার মাওনা চৌরাস্তার উড়াল সেতুর নিচে মেলার নামে জুয়া, মদ, হাউজি, লটারী ও অশ্লীলতার বিরুদ্ধে পৌর মেয়র আনিছুর রহমানের নেতৃত্বে সচেতন নাগরিক সমাজের ব্যানারে মানব বন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশে বক্তারা এসব অসামাজিক কার্যকলাপ বন্ধ করতে প্রশাসনকে ২৪ ঘন্টার আল্টিমেটাম দিলেও অশুভ শক্তির ছত্রছায়ায় এসব চলছেই। প্রতিবাদ সামাবেশে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী যুব লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সহ-সম্পাদক এড. হারুন-অর-রশিদ ফরিদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা আতাহার আলী, ৭নং ওয়ার্ড কাউন্সিল হাবিবুল্লাহ, ৮নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ইজ্জত আলী ফকির, ৯নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আমজাদ হোসেন প্রমূখ।