• মঙ্গলবার , ১৯ নভেম্বর ২০২৪

গাজীপুরে জুয়ার রামরাজত্ব -মধ্যরাতে সুন্দরীদের নাচে জেগে ওঠে বন


প্রকাশিত: ৬:১৩ পিএম, ১৭ ফেব্রুয়ারি ১৬ , বুধবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ২৮৭ বার

 

one ten jua-www.jatirkhantha.com.bdএস রহমান/দিনা করিম : গাজীপুরে জুয়ার রামরাজত্ব -মধ্যরাতে সুন্দরীদের নাচে জেগে ওঠে বন। শাল-গজারী ও লতাপাতা ঘেরা ছায়া সুনিবীড় এক মনোরম পরিবেশের নাম ঐতিহ্যবাহী ভাওয়ালের বনভূমি। যার মধ্যমনি ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান। তার পার্শ্ববর্তী এলাকায় অবস্থিত এশিয়া মহাদেশের বৃহত্তম বঙ্গবন্ধু সাফারী পার্ক। যেখানে রাত পোহালেই স্থানীয় ও দেশের দূর-দূরান্ত থেকে অসংখ্য পর্যটকরা এসে ভীড় জমায়।

বার্ষিক শিক্ষা সফর ও বনভোজনের নির্ধারিত স্থান আর বহু নাটক, সিনেমা, রূপকথা ও গল্প গানের রাজকুমার ও রাজকুমারীদের নির্বাসিত জীবনের দৃশ্য ধারনের ও ভাওয়াল রাজার ঐতিহাসিক পরগণার সেই ভাওয়ালের বনভূমি জুড়ে দর্শনার্থীদের আকর্ষণীয় বিনোদন কেন্দ্রের নিরাপদ স্থানটি এখন আর আগের মতো নিরাপদ নেই।

জুয়াড়ীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে আজ ভাওয়ালের বনভূমি। বিনোদনের নামে নর্তকীর রগরগে নগ্ন নৃত্য পরিবেশনা যেন অসভ্যতা আর অশ্লিলতার সীমা ছাড়িয়ে নির্লজ্জতার শেষ প্রান্তে পৌচেছে।

যাত্রা, সার্কাস ও মেলার নামে ভাওয়ালের বিভিন্ন স্থানে প্রশাসন ও সরকার দলীয় নেতা-কর্মীদের মদদে শুধু মাসের পর মাস নয় যেন বছরব্যাপী দেদার্ছে চলছে জুয়া, হাউজি আর অশ্লীলতা। তার আশ পাশে গড়ে উঠেছে মাদকের অনেক ছোট-বড় আখড়া। এসব কে কেন্দ্র করে এলাকায় বেড়ে গেছে চুরি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা।

ভাওয়াল বনের রাজেন্দ্রপুর চৌরাস্তার ৩০ গজ পশ্চিমে ও হোতাপাড়া বনবিলাস হোটেলের ৪০ গজ পূর্ব দিকে ভাওয়ালের দূর্গম বন উজার করে যেন স্থায়ীভাবে গড়ে তোলা হয়েছে জুয়ার আখড়া। আমন্ত্রিত জুয়াড়ীদের গাড়ি পার্কিং এর জন্যও রয়েছে উজার করা বনভূমির বিশাল একটি অংশ।

সন্ধ্যা হলেই ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশে এসব আসরের মূলগেটে লাল-সবুজ বাতির ঝলকানি আর শত শত টিউব লাইটের আলোকিত রাস্তা পেরিয়ে অতিথিরা চলে যায় জুয়ার রাজ্যে। সেখানে গেলে সামনেই চোখে পড়ে যাত্রা-হাউজির মঞ্চ।

রাত ১০ টা থেকেই শুরু হয় অশ্লীলতা আর জুয়ার রাজত্ব, জুয়াড়িদের আকর্ষণে বলা হয়, কলতি, টু এন্ড থ্রি-টুয়েন্টিথ্রি, বিশ্ব সুন্দরী- এইটটি থ্রি, দাদুর ঘরে চোর-এইটটি ফোর, জ্যাম এন্ড ড্রাইভ-নাম্বার ফাইভ, অফিসিয়াল টাইম-নাম্বার নাইন, লাভ ইজ হেভেন-টুয়েন্টি সেভেন। হাউজি মঞ্চের পাশেই বোর্ড বসিয়ে চলছে লাখ লাখ টাকার জুয়া খেলা।

সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আরিফের নেতৃত্বে রাজেন্দ্রপুর স্পটে ওয়ান-টেন জুয়ার বোর্ড দুটি, তাছাড়া চরকি, বৌ ও পট জুয়ার বোর্ড ১টি করে ৩টি।
ফারুকের নেতৃত্বে হোতাপাড়া স্পটে ওয়ান-টেন জুয়ার বোর্ড দুটি, তাছাড়া চরকি, বৌ ও পট জুয়ার বোর্ড ১টি করে ৩টি।

বুলু মিয়ার নেতৃত্বে হোতাপাড়ার পার্শ্ববর্তী বাঘের বাজার থেকে ৫০ গজ পশ্চিমে বঙ্গবন্ধু সাফারী পার্ক গেট সংলগ্ন এলাকায় ওয়ান-টেন জুয়ার বোর্ড দুটি, অন্যান্যসহ মোট ১০টি জুয়ার বোর্ডে দেদারছে চলছে জুয়া খেলা। তাছাড়া এখানে লাখ লাখ টাকা পুরস্কারের নামে চলছে রূপসী বাংলা নামে অবৈধ র‌্যাফেল ড্র লটারী। যার শতাধিক মাইকের দিনব্যাপী প্রচারণায় অতিষ্ট এলাকাবাসী।

বাঘের বাজারের ২ কি.মি. উত্তরে ২ নং সি এন্ড বি বাজারের ৩০ গজ পশ্চিমে শ্রমিকলীগ নামধারী শাহাবুদ্দিন ও স্বপনের নেতৃত্বে চলছে পট, বৌ ও চরকি সহ কয়েকটি জুয়ার বোর্ড। সাথে রয়েছে অবৈধ মনিমুক্তা র‌্যাফেল ড্র লটারী। যার শতাধিক মাইকের প্রচার-প্রচারণায় অতিষ্ট স্থানীয় জনসাধারণ।

এক দিকে রাত যতই গভীর হতে থাকে অপর দিকে জুয়ার আসর আর অসভ্য অশ্লীলতা ততই জমতে থাকে। আশ-পাশের নেশার আখড়া থেকে মদ, গাজা ও ইয়াবায় আসক্ত হয়ে কেউ খেলায় মেতে উঠে আবার কেউ খেলায় পকেটের সব টাকা হেরে নিঃশেষ হয়ে নেশায় মাতাল হয়ে বাসায় ফিরে।

এসব জায়গায় শেষ রাতে নর্তকীর রগরগে নগ্ন নৃত্য পরিবেশনা যেন যুব সমাজকে নারীর প্রতি অশ­ীল আচরণে বাধ্য করতে উৎসাহ প্রদান করে থাকে।
এসব অসামাজিক কার্যলাপের কারনে ভাওয়াল বনভূমি এখন যেন গা শিউরে উঠা এক আতঙ্কের বনভূমি।

সাধারণ পথচারী, গার্মেন্টস শ্রমিক কেউ উপার্জনের টাকা নিয়ে এসব এলাকার রাস্তা-ঘাট দিয়ে নিরাপদে বাসায় ফিরবে এই ভরসা নেই। পথচারী মেয়ে-ছেলে ও নারী শ্রমিকরা ভোগছেন চরম নিরাপত্তাহীনতায়। দর্শনার্থীদেরও আগের মতো এসব স্থানে আর দেখা যায় না।

এ ব্যাপারে হোতাপাড়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ নাজমুল হক এর সঙ্গে ঢাকা থেকে যোগাযোগ করা হলে তিনি জাতিরকন্ঠকে জানান, ভাই এস ব আপনি কি বলছেন, এসব ঠিক না; জুয়া হাউজি কোথায় পাইলেন, আমার তো চোখ পড়ল না; তখন তাকে বলা হয়, ভাই আপনার ডিউটিরত অবস্থার জুয়ার পাশে দেখা যাচ্ছে তাহলে কি বলবেন-তখন তিনি বলেন ভাই লেইখ্যা দেন এসপি সাহেব জানে?

এ ব্যাপারে শ্রীপুর থানার অফিসার ইনচার্জ আসাদুজ্জামান জাতিরকন্ঠকে জানান, ভাই আমিতো দেখছি না, আপনি দেখলেন কিভাবে? তখন তাঁকে বলা হলো ভাই আমাদের কাছে তো মঙ্গলবারের ছবি আছে -তখন তিনি বেললেন, ভাই আজকে বন্ধ করে দেবো?

গাজিপুরে জুয়া ও অশ্লীলতার রাজত্ব সম্পর্কে এস পি হারুন অর রশিদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি তাঁর মোবাইল ফোন রিসিভ করেননি।পরে তাঁর সেল ফোনে এস্এমএসের মাধ্যমেও যোগাযোগ করা হলে তিনি তাতেও সাড়া দেননি।