• মঙ্গলবার , ২৬ নভেম্বর ২০২৪

গাছের সঙ্গে বেঁধে গৃহবধূকে নির্যাতন


প্রকাশিত: ৮:২৩ পিএম, ১৫ জুলাই ১৬ , শুক্রবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ১৪৫ বার

আসমা খন্দকার  :  মাত্র কুড়ি হাজার টাকা কাল হয়ে দাঁড়ালো গৃহবধূ আতিয়া বেগমের জন্য। অক্ষম gibanda assalt-www.jatirkhantha.com.bdপিতা যৌতুকের তিন ভাগ টাকা পরিশোধ করতে পারলেও বাকি ২০ হাজার টাকা দিতে পারেনি। তাই যৌতুকের দাবি মেটাতে ব্যর্থ হওয়ায় গাছের সঙ্গে বেঁধে নির্মমভাবে নির্যাতন করা হয়েছে গৃহবধূ আতিয়াকে।

নির্মম ও বর্বর ঘটনাটি ঘটেছে গাইবান্ধার মধ্য ফলিয়া গ্রামে ।নির্যাতনের নায়ক হলেন পাষণ্ড স্বামী ফারুক তার ভাই ও শ্বশুর বাড়ির লোকজন। দিনের বেলা প্রকাশ্যে গাছের সঙ্গে বেঁধে নির্যাতনের খবর পেয়ে স্থানীয় এক মেম্বার তাকে উদ্ধার করেন। কিন্তু গ্রাম্য শালিসের আশ্বাস দিয়ে ওই নারীকে থানা পুলিশ করতে দেয়া হয়নি ।

প্রত্যক্ষদর্শী ও গ্রামবাসী জানায়, গাইবান্ধা সদর উপজেলার মধ্য ফলিয়া গ্রামের বাসিন্দা আতিকুল্লাহ সরকারের মেয়ে আতিয়া বেগম। ১০ বছর আগে তার বিয়ে হয় একই গ্রামের মোজা মিস্ত্রির ছেলে ফারুক হোসেনের সাথে। বিয়ের সময় আতিয়ার বাবা তার মেয়ের সুখের কথা ভেবে যৌতুক হিসাবে জামাই ফারুককে ৮০ হাজার টাকা দেন । বাকি রাখেন ২০ হাজার । এই ২০ হাজার টাকা আর দেয়া হয়নি।

ফারুক মিস্ত্রির কাজ করেন । সংসার মোটামুটি চলে। আতিয়ার সংসারে ভাতের অভাব নেই । সুখেই কাটছিলো তাদের সংসার । ১০ বছর সংসার জীবনে তাদের ২ সন্তানের জন্ম হয় । সন্তান জন্ম গ্রহনের পর থেকেই ফারুকের সাথে আতিয়ার যৌতুকের বাকি ২০ হাজার টাকা পাওনা নিয়ে প্রায়ই কথা কাটাকাটি হতো । এক পর্যায়ে ২০১৩ সালে ফারুক স্ত্রী আতিয়া ও তার দুই সন্তানকে রেখে কাজের কথা বলে চলে যান।

এরপর আর খোঁজ খবর নিতেন না স্ত্রী সন্তানের। শ্বশুর বাড়িতে বোঝা হয়ে খেয়ে না খেয়ে ছিলেন আতিয়া। এক পর্যায়ে পেটের তাগিদে অন্যের বাড়িতে কাজ করে পেটের খাবার যোগাড় করেন । কিন্তু স্বামী ফারুক তার ভরন পোষনের জন্য কোন টাকা না দিয়ে বাড়িতেও আসতেন না । সে তার কর্মস্থল থেকে তার পিতামাতা ও ভাইবোনের নামে টাকা পাঠাতো। এই টাকা তারা স্ত্রী আতিয়া ও তার সন্তানদের জন্য কোন কাজে লাগাতো না। স্বামীর প্রতিক্ষায় দীর্ঘদিন পেটে কষ্ট দিয়ে সন্তান সহ থাকার পর বাধ্য হয়ে ২০১৫ সালে আতিয়া তার বাবার সংসারে চলে যায় । বাবার সংসারে নিজের দুই সন্তানকে নিয়ে বোঝা হয়ে থাকে ।

এতো কষ্টের কথা শুনেও স্বামী ফারুক ও তার ভাই বোন ও মা বাবার মন গলেনি । তারা শুধু বলতেন যৌতুকের বাকি ২০ হাজার টাকা না দিলে ফারুক আর বাড়িতে আসবে না। সে বিয়ে করে অন্যত্র থাকবে। গেলো রমজান মাসে আতিয়া শুনতে পায় যে তার স্বামী ফারুক বাড়িতে এসেছে। তারপর তার স্বামীর দাবি নিয়ে আতিয়া তার দুই সন্তানকে নিয়ে পিতার বাড়ি থেকে শনিবার স্বামী ফারুকের বাড়িতে যায়। তাকে দেখেই তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠে স্বামী ফারুক সহ শ্বশুর বাড়ির লোকজন ।

তারা যৌতুকের টাকা নিয়ে এসেছে কিনা জানতে চায়। কিন্তু আতিয়ার না শব্দ শুনে তারা ক্ষেপে যায়। তারপর দেবর সঞ্জু, সুমন, আব্দুর রশিদ সহ বাড়ির লোকজন তাকে ধরে রশি দিয়ে বেঁধে ফেলে। তারপর টেনে হেঁচড়ে প্রকাশ্যে বাড়ির পাশে নিয়ে গাছের সাথে বেধে বেধড়ক মারপিট করে। মারপিটে তার অবস্থার অবনতি হলে শনিবার সন্ধ্যায় নব নির্বাচিত ইউপি মেম্বার বাচ্চু মিয়া লোকজন নিয়ে তাকে উদ্ধার করে। তবে এব্যাপারে পুলিশকে বিষয়টি অবগত করতে নিষেধ করা হয়েছে বলে হুশিয়ার করে দেয়া হয়। সে কারণে বিষয়টি থানা পুলিশ পর্যায়ে বলতে দেয়া হয়নি ।