গরিবের চাল যাচ্ছে ধনির গোলায়
জাতিরকন্ঠ রিপোর্ট : গরিবের চাল চলে যাচ্ছে ধনির গোলায়। ১০ টাকার চালে’র এমনর দুর্নীতি নিয়ে তোলপাড় চলছে সারাদেশে। অভিযোগ করা হয়েছে, হতদরিদ্রদের জন্য সরকারের নেয়া খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল নিয়ে চলছে দুর্নীতির মহোত্সব। ১০ টাকা কেজির যে চাল পাওয়ার কথা অসহায় গরিবদের, তা যাচ্ছে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও তাদের আত্মীয়-স্বজন, ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মী এবং সরকারি চাকরিজীবীসহ বিত্তবানদের গোলায়। অনেক জায়গায় রীতিমতো লুটপাট হচ্ছে গরিবের চাল। কোন কোন ইউনিয়নে এখনো হতদরিদ্রদের তালিকাই করা হয়নি। এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ-সংবাদ সন্মেলন হওয়ারও খবর পাওয়া গেছে।
তালিকায় স্বচ্ছল ব্যক্তিদের নাম-
বাগেরহাট প্রতিনিধি জানান, জেলার কচুয়া উপজেলার বাধাল ইউনিয়নের হতদরিদ্রদের তালিকায় রয়েছে, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের পিতা সুলতান আলী নকীব, তার চাচা জালাল নকীব ও ভাই নকীব শহিদুল ইসলামের নাম। এছাড়া বাধাল ইউনিয়নে বিত্তবান, ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী নেতাকর্মী ও সরকারি চাকরিজীবীদের নাম রয়েছে তালিকায়। বিলকুল গ্রামের বাসিন্দা নকীব কবির হোসেন এবং তার স্ত্রী মমতাজ বেগম, তারা দু’জনেই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষক হলেও তাদের নাম রয়েছে তালিকায়।
এই ইউনিয়নে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শেখ হাবিবুর রহমান, যশোরদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক তপন কুমার সরকার, পানবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শেন ভিষ্মরঞ্জন, পল্লী বিদ্যুত্-এ চাকরিরত শেখ মোকাম্মেল হোসেন, পিংগড়িয়া গ্রামের ট্রাকের মালিক মসিউর রহমান, বিলকুল গ্রামের শতাধিক বিঘা জমির মালিক গৌতম কুমার দেবনাথ ও নারায়ন চন্দ্র দেবনাথ প্রমুখের নাম রয়েছে হতদরিদ্রদের তালিকায়।
অথচ বিলকুল গ্রামের দিনমজুর হতদরিদ্র প্রতিবন্ধী আমজাদ আলীর নাম নেই তালিকায়। এরকম শত-শত হতদরিদ্রদের বঞ্চিত করে বিত্তবান, সরকারি চাকরিজীবী ও ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা হাতিয়ে নিচ্ছেন ১০টাকা কেজি দরের চাল।
মোড়েলগঞ্জ উপজেলার বলয়বুয়াি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খ ম লুত্ফর রহমান জানান, ওই ইউনিয়নের হতদরিদ্রদের জন্য দেয়া কার্ডের বেশির ভাগ পেয়েছেন ধনী ব্যক্তিরা। এমনকি যাদের দোতলা বাড়ি রয়েছে তাদেরও দেয়া হয়েছে এই কার্ড। সদর উপজেলার বারুইপাড়া ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সরদার শহিদ জানান, এই ওয়ার্ডের ৯০ ভাগ কার্ড দেয়া হয়েছে ধনী ব্যক্তিদের।বিষয়ে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ বাবুল হোসেন জানান, স্বল্প সময়ে তালিকা করায় কিছু ত্রুটি হয়েছে। অভিযোগ পেলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
কার্ড তৈরিতে অনিয়ম-
উপজেলার ৬ নং রামচন্দ্রপুর ইউনিয়নে ১০ টাকা কেজির চাল বিতরণে হতদরিদ্রদের তালিকায় ৬ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য পিপুল চন্দ্র রায়ের দুই ছেলে খোকন চন্দ্র রায় ও বিদ্যুত্ চন্দ্র রায়ের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এ ব্যাপারে উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা বলেন, আমি নতুন যোগদান করেছি, কার্ড তৈরিতে অনিয়ম হয়ে থাকলে তা সংশোধন করা হবে।
চাল যাচ্ছে কালোবাজারে
উপজেলায় সরকারি দলের প্রভাবশালী বেশ কয়েকজন নেতা ও ডিলারদের কারসাজিতে ১০ টাকা কেজির চাল কালোবাজারে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। ৩ নং ফতেপুর ইউনিয়নের ৬ জন মেম্বার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর ডিলারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
দুই মাসেও চালু হয়নি কার্যক্রম
উপজেলায় ২ মাসেও খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির কার্যক্রম চালু হয়নি। ফলে হতদরিদ্ররা ১০ টাকা কেজি দরের চাল থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এ প্রসঙ্গে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক খয়বর আলী জানান, ইউপি চেয়ারম্যান-মেম্বাররা হতদরিদ্রদের তালিকা না দিলে কিভাবে চাল বিতরণ করব।
ওজনে কম দেওয়ায় জরিমানা-
হতদরিদ্রদের জন্য ১০ টাকা কেজির চাল বিক্রিতে ওজনে কম দেওয়ায় উপজেলায় দুই ডিলারকে ৮ হাজার টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। এর মধ্যে দক্ষিণ শাহবাজপুর ইউনিয়নের মুড়াউল বাজারের ডিলার নাছির উদ্দিনকে ৩ হাজার টাকা ও দক্ষিণভাগ উত্তর ইউনিয়নের কাঁঠালতলী বাজারের আব্দুর রহিমকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
চাল বিতরণ বন্ধ গাংনীতে-
উপজেলায় সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন চেয়ারম্যান,মেম্বারদের তৈরি তালিকায় ব্যাপক অনিয়ম থাকায় কাজীপুর, ষোলটাকা ও বামন্দী ইউপিতে ১০ টাকা কেজির চাল বিতরণ বন্ধ ঘোষণা করেছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার আরিফ-উজ-জামান। তিনি জানান, বিভিন্ন ইউনিয়নের ডিলারদের চাল বিতরণ মনিটরিং করার জন্য ট্যাগ অফিসার নিয়োগ করা হয়েছে। অনিয়ম, অসঙ্গতি পাওয়া গেলেই সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা) সংবাদদাতা জানান, উপজেলায় হতদরিদ্রদের সংশোধিত তালিকা জমা না হওয়ায় অক্টোবর মাসের ১০ টাকা কেজি দরের চাল বিতরণ বন্ধ রয়েছে। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) হাবিবুল আলম বলেন, সংশোধিত তালিকা পাওয়া গেলে চাল বিতরণের নির্দেশ দেয়া হবে।
গাইবান্ধায় অনিয়মের বিরুদ্ধে মিছিল-
হতদরিদ্রদের জন্য ১০ টাকা কেজি চাল বিতরণে অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধের দাবিতে গতকাল শহরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে জেলা বাসদ (মার্কসবাদী)। আহসান হাবীব সাঈদের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জেলা কমিটির সদস্য প্রভাষক গোলাম সাদেক লেবু, প্রভাষক কাজী আবু রাহেন শফিউল্যাহ প্রমুখ।
পবায় চাল বিতরণে বিস্তর অনিয়ম-
পবা উপজেলার বড়গাছি ইউনিয়নে ১০ টাকা কেজির চাল বিতরণে বিস্তর অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এখানে দুস্থদের বঞ্চিত করে ধনাঢ্য-চাকরিজীবীদের স্বল্পমূল্যের ওই চাল দেয়া হচ্ছে। গতকাল রবিবার রাজশাহী প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ তুলে ধরেন ইউনিয়নের বাসিন্দা আলমগীর হোসেন ও মাহামুদ হাসান সুমন। তারা এসব অনিয়ম বন্ধে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ এবং তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।